শিলিগুড়ি, 18 মে : মেনুতে পরিবর্তন । গবাদি পশুর মাংস না মেলায় চিতাবাঘের প্রিয় মাংসের তালিকায় এখন কুকুর । তাই একের পর এক লোকালয়ে চিতাবাঘের হানা । বনাঞ্চলে খাবারের অভাবে কুকুরের টানে এখন জঙ্গল সংলগ্ন লোকালয়ে হানা দিতে শুরু করেছে চিতাবাঘগুলি । কখনও রাস্তার কুকুর তো কখনও বহুতলের ভিতরে ঢুকে কুকুর শিকারের চেষ্টা করছে চিতাবাঘ । এতে উদ্বেগ বাড়িয়েছে বন দফতরের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, পরিবেশ ও প্রাণীবিদদের ।
চিতাবাঘের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসাতেই আরও বেশি চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তাদের মাথায় । সমস্যা সমাধানের উপায় হিসেবে জঙ্গলের পাশাপাশি জঙ্গল সংলগ্ন লোকালয়ে চিতাবাঘের সুমারি করার দাবি উঠেছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে । বর্তমানে এলাকায় মানুষজন কম হওয়ায় লোকালয়ে বিচরণ এখন অনেকটাই সুবিধে করে দিয়েছে চিতাবাঘের ।
বন দফতরের সূত্রে জানা গিয়েছে, চিতাবাঘ বনের পাশাপাশি নিজের বাসস্থানের অন্তত 25 কিলোমিটার দূর পর্যন্ত বিচরণ করে থাকে । করোনা পরিস্থিতিতে রাস্তায় লোক চলাচল কম থাকায় লোকালয়ে বিচরণ করাটা অনেকটাই সুবিধা করে দিয়েছে চিতাবাঘের । জঙ্গলে মুরগি, হরিণ, বাইসন, গরুর মতো প্রাণীর অভাব থাকায় চিতাবাঘগুলি জঙ্গল সংলগ্ন লোকালয়ের গবাদি পশু এবং কুকুরগুলিকে টার্গেট করছে । ভিনরাজ্য বা জেলায় একাধিকবার গোপন ক্যামেরায় বাড়ি বা রাস্তার কুকুরকে আক্রমণ করার দৃশ্য ভিডিয়োয় ধরা পড়েছে । এবার দার্জিলিং জেলার পাশাপাশি উত্তরের তরাই-ডুয়ার্স এলাকাতেও চিতাবাঘের আক্রমণ বাড়ছে । চলতি বছরে শিলিগুড়ি সংলগ্ন সুকনা, শালুগাড়া, সেবক রোড, ইস্টার্ন বাইপাস, সমরনগর, চম্পাসারির মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় চিতাবাঘের প্রবেশের ঘটনা ঘটেছে ।
কুকুরের টানে ফ্ল্যাট বাড়িতে চিতাবাঘ আরও পড়ুন :তখতের দাপটে জাহাজ উল্টে মৃত বাংলার ১ শ্রমিক , নিখোঁজ ১
এই বিষয়ে হিমালয়ান নেচার অ্যান্ড অ্যাডভেঞ্চার ফাউন্ডেশনের অনিমেষ বসু বলেন, "চিতাবাঘের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে পরিবর্তন আসছে । খাদ্যের অভাবেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে । সেজন্য বন দপ্তরের উচিৎ যত দ্রুত সম্ভব চিতাবাঘের সুমারি করা ।" সোসাইটি ফর অ্যানিমেল অ্যান্ড নেচার প্রোটেশন ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক কৌস্তভ চৌধুরী বলেন, "চিতাবাঘের মাংসের মেনুতে নতুন সংযোজন হয়েছে কুকুরের মাংস । আর তার টানেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে তারা । স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এবং বন দপ্তরের উদ্যোগে দ্রুত চিতাবাঘের সুমারি হওয়া উচিত । হাতি, বাঘ, গন্ডার, বিলুপ্তপ্রায় পাখির সুমারি হলে চিতাবাঘও একইভাবে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীর তালিকায় রয়েছে । আর সুমারি হলে চিতাবাঘের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবির্তনের বিষয়টিও পরিষ্কার হবে ।" অপ্টোপিকের সম্পাদক দীপজ্যোতি ভট্টাচার্য বলেন, "লকডাউনে খাবারের অভাবে লোকালয়ে ঢুকছে চিতাবাঘ । কুকুর শিকারই মূল লক্ষ্য তাদের । বন দফতরের উচিত চিতাবাঘের সুমারি করা । এতে ওই এলাকায় কত চিতাবাঘ রয়েছে তা পরিষ্কার হয়ে যাবে ।"