শিলিগুড়ি , 1 নভেম্বর : দার্জিলিঙের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিক বৈঠকে ফের একবার রাজ্যকে আক্রমণ করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সাহায্য না নেওয়া, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, সংবিধান না মানা-এসব অভিযোগ তুলে আজ রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হন তিনি । যদিও এই প্রসঙ্গ নতুন নয় । এর আগেও টুইটারে বারবার এই প্রসঙ্গগুলি তুলে রাজ্যকে আক্রমণ করেছেন রাজ্যপাল ।
গতকাল শিলিগুড়ি পৌঁছান রাজ্যপাল । আজ দার্জিলিঙের উদ্দেশে রওনা হবেন। সেখানে একমাস থাকবেন । তার আগে আজ শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করলেন রাজ্যপাল । সেখানে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যকে আক্রমণ করেন তিনি । বলেন , " রাজ্য সরকার কোনও আইন-শৃঙ্খলা মানছে না । সংবিধান মানছে না । শাসন চালাতে গেলে সংবিধান মানতে হবে, তা এখানে মানা হচ্ছে না । "
কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা না নেওয়ায় রাজ্যবাসী কেন্দ্রের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । তাঁর গলায় এই অভিযোগ নতুন নয় । এর আগেও একাধিকবার রাজ্যের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ এনেছেন রাজ্যপাল । আজ সাংবাদিক বৈঠকে সেই কথা বলতে গিয়ে তিনি দু'টি প্রকল্পের কথা তুলে ধরেন । তাঁর অভিযোগ , আয়ুষ্মান ভারত ও প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের কোনও সুবিধা নেয়নি রাজ্য । তিনি বলেন , " কেন্দ্রের প্রকল্পের বিরোধিতা করছে রাজ্য । রাজ্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের সাহায্য নেয়নি । সংকটের সময় সাহায্য নেওয়া উচিত ছিল । কোরোনা পরিস্থিতি দেখে বোঝা যাচ্ছে যে , রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে । প্রকল্পের সাহায্য নিলে পরিস্থিতি আলাদা হত । "
অন্যদিকে , প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধি প্রকল্পের সুবিধা না নেওয়ায় রাজ্যের কৃষকদের ভুগতে হচ্ছে বলে অভিযোগ জানান তিনি । বলেন , " কেন্দ্রীয় প্রকল্পের মাধ্যমে 12 হাজার টাকা পেয়েছে কৃষকরা । দেশের সব জায়গায় সরাসরি কৃষকের অ্যাকাউন্টে টাকা চলে গেছে । পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে । "
রাজ্যে নারী নির্যাতন এবং ধর্ষণ নিয়ে আগেই সরব হয়েছিলেন রাজ্যপাল । নারী নির্যাতন এবং অপহরণের সংখ্যার একটি তালিকা প্রকাশ্যে এনেছিলেন আগেই । টুইটে সেই তালিকা প্রকাশ করায় রাজ্য-রাজ্যপাল তরজা চড়েছিল তুঙ্গে । রাজ্যপালের সে তালিকায় তথ্য বিকৃত হয়েছে বলে দাবি করেছিল স্বরাষ্ট্র দপ্তর । আজ সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যে নারী নির্যাতনের কথা আবার উল্লেখ করেন ধনকড় । বলেন , " রাজ্যে ধর্ষণ বেড়েছে । মেদিনীপুরে 33 শতাংশের বেশি ধর্ষণের অভিযোগ এসেছে । সরকারি রিপোর্ট তাই বলছে । "
শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় এরপর সরকারি কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি । অভিযোগ করেন, সরকারি কর্মীরা রাজনৈতিক দলের অনুগত । এই বিষয়ে তিনি দার্জিলিঙের SP , DM-কে সতর্ক করেন । বলেন , " উত্তরবঙ্গে সরকারি কর্মীরা রাজনৈতিক দলের অনুগত । দার্জিলিঙের SP , DM-কে বলছি, রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করবেন না । আপনাদের বয়স কম , আগুন নিয়ে খেলবেন না । " পাশাপাশি তিনি জানান , বাংলা আমার কর্মভূমি । আপনাদের সৈনিক হয়ে কাজ করব । রাজনীতিতে কে হারল , কে জিতল , সেটা আমি পাত্তা দিই না । যা করছি , সেটা আমার কাজ । উত্তরবঙ্গে সমস্যার সমাধানে চেষ্টা করব । এর আগে গতকাল বলেছিলেন , "রাজ্যের প্রধান সেবক হিসেবে আমি উত্তরবঙ্গে যাচ্ছি । আমাকে অনেক কিছু বুঝতে হবে । ওখানে যা সমস্যা আছে তার কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে হোমওয়ার্ক করব । "
সরকারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন , " আমি সরকারের সঙ্গে ঝগড়া করছি না । সরকার আমার সঙ্গে ঝগড়া করছে । আমি কারও বিরুদ্ধে নই । কিন্তু আমি সেই প্রতিটি মানুষের বিরুদ্ধে , যারা সংবিধানের বাইরে গিয়ে কাজ করেন । "
দার্জিলিং সফর নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "দার্জিলিংকে ঠান্ডা বা গরম করতে নয়, আমি দার্জিলিঙে আমার কার্যালয়ে যাচ্ছি । এই সফরকালে বিভিন্ন ব্যক্তি, সম্প্রদায়-সহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলব । উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করব । " একাধিক মামলায় অভিযুক্ত বিমল গুরুঙের প্রত্যাবর্তন ও রাজনৈতিক সমীকরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "কেউ আইনের উর্ধ্বে নয় । আইন আইনের পথেই চলবে ।"
উত্তরবঙ্গ সফরের দু'দিন আগেই দিল্লিতে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল । শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর তাঁর উত্তরবঙ্গ সফরে যাওয়ার কথা ছিল । অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি এবং অন্যান্য ইশু নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে । আলোচনার পর দিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠকে তিনি রাজ্যের পরিস্থিতি তুলে ধরেন । আইন-শৃঙ্খলাকে উপেক্ষা, মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন তিনি । আজ শিলিগুড়িতেও একাধিক ইশুতে ফের রাজ্যকে নিশানা করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় ।