দার্জিলিং, 28 জুলাই: 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে ফের জোরালো হচ্ছে গোর্খাল্যান্ডের দাবি । আর সেই সুর রয়েছে শাসক-বিরোধী উভয় শিবিরের নেতৃত্বের গলায় ৷ এ বার পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন আছড়ে পড়তে চলেছে দিল্লিতেও । দিল্লির যন্তরমন্তরে গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে পৃথকভাবে আন্দোলন করতে চলছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও গোর্খাল্যান্ড অ্যাক্টিভিস্ট সমূহ ।
ফের সরগরম পাহাড়ের রাজনীতি: এ দিকে, বাংলা ভাগ হয়ে পৃথক রাজ্য হবেই বলে শপথ নিয়েছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি বিধায়ক নিরজ জিম্বা । আর সেই কাজও দিল্লিতে চলছে বলে জানালেন তিনি ৷ আবার বিজেপি পৃথক রাজ্য নিয়ে কোনও পদক্ষেপ না করায়, নেপালের নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়ার কথা বলেন বিমল গুরুং । আর নেতৃত্বদের এই ধরনের মন্তব্যে ফের একবার সরগরম পাহাড়ের রাজনীতি ৷
গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলন: পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে এ বার দিল্লির যন্তরমন্তরে ধরনা দেবে গোর্খাল্যান্ড অ্যাক্টিভিস্ট সমূহ । শিলিগুড়িতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই জানান সমূহের সম্পাদক বিক্রম ছেত্রী । বিজেপি পাহাড়ের মানুষকে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা এখনও পালন করেনি । এমনই অভিযোগ তুলে সরাসরি দিল্লিতে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়েছে গোর্খাল্যান্ড অ্যাক্টিভিস্ট সমূহ । পৃথক রাজ্য গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আগামী 29 ও 30 জুলাই দিল্লির যন্তরমন্তরের সামনে ধরনা কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা করে গোর্খাল্যান্ড অ্যাক্টিভিস্ট সমূহ ।
শুক্রবার শিলিগুড়িতে সমূহের সম্পাদক বিক্রম ছেত্রী বলেন, "পাহাড়ের মানুষ পরপর তিনবার বিজেপিকে সমর্থন জানিয়েছে । কিন্তু বিজেপি যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পালন করেনি । দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তার কার্যকালের মেয়াদ আর কয়েকমাস বাকি থাকলেও তিনিও পাহাড়ের মানুষকে যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পালন করেননি । তাই এ বার পাহাড়ে কোনও আন্দোলন নয়, সরাসরি দিল্লিতে আন্দোলন করা হবে । আপাতত দুদিনের ধরনা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে ।"
কেন্দ্রকে হুঁশিয়ারি দার্জিলিংয়ের বিধায়কের: অন্যদিকে, শুক্রবার সকালে শহিদ দিবস পালন করার সময় পানিঘাটায় গোর্খাল্যান্ড নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন দার্জিলিংয়ের বিধায়ক নিরজ জিম্বা । শুধু তাই নয় । ওই প্রসঙ্গে কেন্দ্র সরকারকেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি ।
আরও পড়ুন:স্বাধীনতা দিবসে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে মোদিকে বার্তা দিতে হবে, চাপ বাড়ালেন গুরুং
তিনি বলেন, "শহীদ বেদি ছুঁয়ে বলছি বাংলা ভাঙবেই, দিল্লিতে কাজ হচ্ছে । গোর্খাল্যান্ডই নাম দিতে হবে তার প্রয়োজন নেই । নাম যা কিছু দিলেই হবে । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, 'গোর্খাদের স্বপ্ন আমার স্বপ্ন ।' আমরা আশা করছি তিনি তাঁর কথা রাখবেন । আমি কেন্দ্র সরকারকে হুঁশিয়ারি দিচ্ছি, আমাকে পাহাড়বাসী রাস্তার জন্য জিতিয়ে পাঠায়নি, পৃথক রাজ্যের দাবিতে পাঠিয়েছে ।"
হুমকি দিলেন গুরুং: এ দিকে, পৃথক রাজ্য নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুংও । পাহাড়ে শহিদ দিবস পালনের দিন বিজেপির বিরুদ্ধে একই সুরে তোপ দাগেন বিমল গুরুং । তিনি বলেন, "আমরা এখনও পরিচয়হীনতায় ভুগছি । আমাদের সকলে বিদেশি বলে । তাই এর একটা বিহিত করা দরকার, নইলে আমাদের নেপালের নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হোক ।" দার্জিলিংয়ের গোর্খা দুঃখ নিবারণী হলে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিমল গুরুং ।
তিনি সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বলেন, "আমাদের দার্জিলিংয়ের পাশেই রয়েছে নেপাল সীমান্ত । সেখান দিয়ে যাতায়াত লেগেই থাকে । তাই আমাদের বিদেশি বলে আখ্যা দেওয়া হয় । নিজের কোনও পরিচয় নেই আমাদের । এ কারণেই অনুরোধ আমাদের নেপালের নাগরিকত্ব দিয়ে দেওয়া হোক, নইলে ওই সীমান্ত বন্ধ করে দিক সরকার ।"
ডেডলাইন গুরুংয়ের: পাশাপাশি এ দিন ফের কেন্দ্রকে সময়সীমা বেঁধে দিলেন বিমল । 15 অগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণে যদি গোর্খাদের নিয়ে কোনও বক্তব্য না থাকে, তাহলেই গোর্খাল্যান্ড নিয়ে দিল্লিমুখী আন্দোলন শুরু হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি । তবে তার আগে 4 অগস্ট দিল্লির যন্তরমন্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা । বিমল আরও বলেন, "2009 থেকে বিজেপি পাহাড়ের দায়িত্বে আছে । তবুও তারা গোর্খাদের জন্য কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করেনি । ইস্তেহারে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের কথা উল্লেখ থাকলেও তা নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই ।"
সুর চড়ালেন অনীত থাপাও: এ দিকে, একই সুরে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা সভাপতি অনীত থাপা । এ দিন তিনি কালিম্পং শহরে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন । সেখানে শহিদ বেদিতে মাল্যদান করে তিনি বলেন, "বিজেপি শুধু গোর্খাদের স্বপ্ন দেখায় । তারা যতদিন কেন্দ্রে থাকবে গোর্খাদের কিছু হবে না । কেন্দ্রে গোর্খাদরদী সরকার এলে তবেই আমাদের স্বপ্নপূরণ হবে । তবে কারও কোল খালি করে কখনওই গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলন করা উচিত নয় । এ কারণেই আমরা এই আন্দোলনের পথ থেকে সরে এসেছি ।"