শিলিগুড়ি, 8 এপ্রিল: উত্তর- পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার ও হিমালয়ের পাদদেশের শহর শিলিগুড়ি । সেই শহরকে করিডোর করে কার্যত পাচারের স্বর্গরাজ্য গড়ে উঠেছিল ৷ রমরমিয়ে পাচারের কাজ চালাত ৷ এমন কোনও সামগ্রী নেই যা আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি হয় তা পাচারের চেষ্টা হত না । মাদক, সোনা, হিরে থেকে বন্যপ্রাণ ও বন্যপ্রাণ সামগ্রী সব কিছুই থাকত পাচারের তালিকায় ৷ পাচারের করিডর হয়ে উঠেছিল এই শহর ৷
এবার বন্যপ্রাণ ও বন্যপ্রাণ সামগ্রী পাচার রোধে কঠোর হল রাজ্য বন দফতর । প্রাণীদের সুরক্ষার পাশাপাশি বন্য প্রাণ সামগ্রীর সুরক্ষার নজরদারিতে আরও কড়া পদক্ষেপ নিতে চলেছে বন দফতর । বন দফতর সূত্রে খবর, গত এক বছরে শিলিগুড়িকে করিডোর করে প্রায় 37 কোটি টাকার বন্যপ্রাণ ও বন্যপ্রাণ সামগ্রী পাচারের পরিকল্পনা অভিযান চালিয়ে ভেস্তে দিয়েছে বন দফতর । যার মধ্যে 13 কোটি টাকার কাঠ উদ্ধার করা হয়েছে পাচারের আগে । এবার যাতে পাচারের বিরুদ্ধে কড়া নজরদারি চালানো যায় তার জন্য প্রায় 400 ফরেস্ট গার্ডকে বাইক ও বন বিভাগের জন্য অত্যাধুনিক চারচাকা গাড়ি দিতে চলেছে বন দফতর ।
এই প্রসঙ্গেই রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, "কাঠ ও বন্যপ্রাণ সামগ্রী পাচারের বিরুদ্ধে আমরা এবার নজরদারিতে ব্যাপক জোর দিচ্ছি ৷ ফরেস্ট গার্ডদের দেওয়া হচ্ছে বাইক, জিপসি । তাদের কাজ হবে পাচারের বিরুদ্ধে অভিযান করার ৷ একজনকেও ছাড়া হবে না ।" তিনি জানান, মায়ানমার থেকে অসম হয়ে কাঠ পাচারকারীরা আলিপুরদুয়ার হয়ে পাচার করত । সেজন্য উত্তরের সীমান্ত সংলগ্ন জেলাতেও বিশেষ নজরদারির উদ্যোগ নিতে চলেছে বন বিভাগ ।
আরও পড়ুন:জামা, জুতো, বেল্ট হাঁতড়ে উদ্ধার কিলো কিলো সোনা !
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সব থেকে বেশি বন্যপ্রাণ ও বন্যপ্রাণ সামগ্রী পাচারের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সাফল্য লাভ করেছে বৈকুন্ঠপুর ফরেস্ট ডিভিশনের বেলাকোবা রেঞ্জ । রাজস্থান, হরিয়ানা, অসম, উত্তরপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, বিহার, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড অসম থেকে বিভিন্ন নম্বরের গাড়িগুলিতে সেইসব পাচারের চেষ্টা করা হয়েছিল । মোট 23টি অভিযান চালায় বেলাকোবা রেঞ্জ । অভিযানে 459 কিউবিক মিটার চোরাই কাঠ উদ্ধার করে ৷ ঘটনায় মোট 41 জনকে গ্রেফতার করে বনবিভাগ । বাজেয়াপ্ত করা হয় পাচারে ব্যবহৃত 27টি গাড়িও । এছাড়াও প্যাঙ্গোলিন, প্যাঙ্গোলিনের আঁশ, বাঘ, চিতা, ভাল্লুকের চামড়া অভিযানে উদ্ধার করেছে বন বিভাগ । রয়েছে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার, চিতা, রেড পান্ডার মতো একাধিক প্রাণীকে উদ্ধার করেছে বনবিভাগ । এছাড়াও 7টি অভিযানে হাতির দাঁত, দু'টি অভিযানে সাপের বিষ, তক্ষক, গন্ডারের সিং পাচারের আগে উদ্ধার করে বন বিভাগ ।