পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

বাড়িই সংক্রমিত ব্যক্তির নিরাপদ আশ্রয়, বলছেন চিকিৎসকরা - শিলিগুড়ি

বাড়িতে থেকে কোরোনা চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা ৷

বাড়িতে কোরোনা চিকিৎসা কিভাবে, জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা
বাড়িতে কোরোনা চিকিৎসা কিভাবে, জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্তারা

By

Published : Aug 6, 2020, 6:02 PM IST

শিলিগুড়ি, 6 অগাস্ট: কোরোনা মোকাবিলায় এবার হোম আইসোলেশনকে প্রাধান্য দিতে চাইছে দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর । হিসেব অনুযায়ী ইতিমধ্যেই দার্জিলিং জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা 2000-এর সংখ্যা পার হয়ে গেছে । এই পরিস্থিতিতে উপসর্গহীন, সামান্য উপসর্গযুক্ত রোগীদের শর্তসাপেক্ষে বাড়িতেই চিকিৎসায় জোর দেওয়া হচ্ছে । এর পাশাপাশি দার্জিলিং জেলায় আরও কয়েকটি সেফ হোম খোলার চেষ্টা করছে প্রশাসন ।

স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তাদের মতে, উপযুক্ত পরিকাঠামো থাকলে বাড়িতে থেকেই এই রোগের চিকিৎসা করা সম্ভব ৷ সেটা হাসপাতালে চিকিৎসার থেকে তুলনামূলকভাবে ভালো । কারণ এক্ষেত্রে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের পাশে গিয়ে নতুন করে সংক্রমণের আশঙ্কা এড়ানো যায় ।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক ঠিক কী কী শর্তে বাড়িতেই চিকিৎসা করা সম্ভব-

1. আক্রান্তের বয়স যদি অল্প হয় সেক্ষেত্রে তাদের বাড়িতেই চিকিৎসা করা যেতে পারে।

2. আক্রান্ত যদি উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গ যুক্ত হয় তাদের চিকিৎসা বাড়িতেই করা সম্ভব।

3. বাড়িতে আলাদা ঘর এবং আলাদা শৌচাগার থাকলে এই চিকিৎসা বাড়িতে করা যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্তারা ।

4. এর পাশাপাশি সংক্রমিত ব্যক্তির যদি কিডনির সমস্যা বা অন্যান্য কোন রোগ না থাকে সেটি নিশ্চিত হতে হবে ।

উপসর্গহীন, সামান্য উপসর্গযুক্ত রোগীদের শর্তসাপেক্ষে বাড়িতেই চিকিৎসায় জোর দেওয়া হচ্ছে
কিন্তু ঠিক কীভাবে হচ্ছে বাড়িতে এই চিকিৎসা । দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্যের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগে জেলায় ট্রুনাট মেশিনের মাধ্যমে সোয়াব টেস্ট করা হচ্ছিল । ফলে তা করতে প্রায় 24 ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছিল । ইতিমধ্যেই জেলাজুড়ে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়ে গেছে । এর ফলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দ্রুত পরীক্ষার ফলাফল মিলে যেতে পারে । আর যতো বেশি টেস্ট হবে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ততই বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ এতে হাসপাতালে বেডের সমস্যাও দেখা দিতে পারে । তাছাড়া উপসর্গ না থাকলে বা সামান্য উপসর্গ থাকলে হাসপাতালে বেড দখল করে রাখার যৌক্তিকতা নেই । তাই বাড়িতে থেকে চিকিৎসা করাই শ্রেয় বলে মনে করছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক । তাঁর কথায়, "বাড়িই সংক্রমিত ব্যক্তির নিরাপদ আশ্রয় । তাই আমরা বাড়িতে রেখেই চিকিৎসায় জোর দিচ্ছি ৷ তবে শ্বাসকষ্ট অথবা কোমর্বিডিটি থাকলে সংক্রমিত ব্যক্তিকে হাসপাতালে যেতে হবে । কিন্তু তা না হলে বাড়িতে রেখে চিকিৎসা করাই নিরাপদ । নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ এবং ভালো খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি কয়েক ঘণ্টা অন্তর উষ্ণ জল পান করা এবং বারবার হাত-পা ধুয়ে কয়েকদিনেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠছেন সংক্রমিত ব্যক্তিরা ।" প্রলয় আচার্যের দাবি, এভাবেই সুস্থ হয়েছে জেলার 250-র মতো রোগী ৷ বাড়িতে রেখে সুস্থ হওয়া 80 শতাংশই শিলিগুড়ি মহকুমার বাসিন্দা । বাকি 20 শতাংশ আক্রান্ত পাহাড়ের বাসিন্দা ।

শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক অমিত দত্তের কথায়, "উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গ থাকা COVID পজ়িটিভিদের আমরা বাড়িতেই থাকতে বলছি । দু'বেলা প্রোটিনযুক্ত খাবার এবং ভিটামিন সি সহ বেশ কিছু ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি ৷ সহজলভ্য প্যারাসিটামল ছাড়াও এজিথ্রোমাইসিন নামের একটি ওষুধ আমরা খেতে বলছি । সম্ভব হলে প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খেতে বলছি । পৌর এলাকার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য কর্মীরাই তাদের পরবর্তী সোয়াব সংগ্রহ করে নেবেন । আমরা দেখেছি বাড়িতে থাকলে রোগী মানসিকভাবেও ভাল থাকছেন । ফলে এই পরিস্থিতিতে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করানো শ্রেয় । আমরা আক্রান্তদের তা বোঝাচ্ছি । এতে কাজও হচ্ছে ।"

হোম আইসোলেশনকে প্রাধান্য দিতে চাইছে দার্জিলিং জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর

দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক এস পুণ্যম বালম জানিয়েছেন, "শর্তসাপেক্ষে বাড়িতে চিকিৎসায় জোর দেওয়া হচ্ছে । আমরা প্রথমেই দেখে নিচ্ছি আক্রান্তের বয়স কত । এর পাশাপাশি আক্রান্তর উপসর্গ ও অন্য কোনও রোগ আছে কি না সেটিও দেখা হচ্ছে ৷ এই সমস্ত বিষয়গুলোর পাশাপাশি বাড়িতে আলাদা ঘর এবং আলাদা শৌচাগার আছে কিনা তা নিশ্চিত হলে আমরা ডাক্তারদের পরামর্শে আক্রান্তকে বাড়িতে থেকেই চিকিৎসার কথা বলছি । তিনি আরও বলেন, "রোগী বাড়িতে চিকিৎসায় সম্মত না হলে হাসপাতালের পরিবর্তে সেফ হাউসে যাওয়ার কথা বলছি । বাড়িতে যেসব রোগীরা চিকিৎসা করাবেন তাদের জন্য রয়েছে ডাক্তারদের বিশেষ একটি দল । তাদের ফোন নম্বর রোগীদের কাছে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে । যেকোনও প্রয়োজনে ওই ডাক্তারদের সরাসরি যোগাযোগ করছেন বাড়িতে থাকা সংক্রমিত ব্যক্তি বা তাদের পরিবার । স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা মাঝেমধ্যে গিয়ে তাদের অক্সিজেন লেভেল এবং অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ করছেন । ইতিমধ্যেই জেলার প্রায় আড়াইশো জনকে বাড়িতে রেখে সুস্থ করে তোলা হয়েছে ।"

বাড়িতে থেকে কোরোনা চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা
তবে যেসব ক্ষেত্রে বাড়িতে থাকার শর্তাবলী নিশ্চিত করা যাচ্ছে না সেসব আক্রান্তকে সেফ হোমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দার্জিলিং জেলায় তিনটি সেফ হোম রয়েছে । এর মধ্যে একটি আছে দার্জিলিং-এ । এর পাশাপাশি শিলিগুড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে নতুন করে 50 শয্যা বিশিষ্ট একটি সেফ হোম প্রস্তুত করা হচ্ছে । এছাড়া সেফ হোমের জন্য আরও বেশ কিছু জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে । কোনও কারণে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়লে যাতে জায়গার অভাব না হয় তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের কর্তারা ।

ABOUT THE AUTHOR

...view details