দার্জিলিং, 13 সেপ্টেম্বর : শ্বশুরবাড়িতে শিশুকন্যাকে কুপিয়ে খুনের পর স্ত্রীকেও খুনের চেষ্টা ৷ তাতে ব্যর্থ হওয়ায় নিজের গলাতেই ধারালো অস্ত্রের কোপ মেরে আত্মহত্যার চেষ্টা ৷ তাতেও সফল না হওয়ায় শেষমেশ গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করলেন শ্রমিক ! ভয়াবহ এই ঘটনা ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শিলিগুড়ি লাগোয়া নকশালবাড়ি ব্লকে ৷
আরও পড়ুন :Behala murder: বেহালা মা-ছেলে খুনে ধৃত মৃতার দুই মাসতুতো ভাই
নকশালবাড়ির ত্রিহানা চা বাগানের জাবরা ডিভিশনের শ্রমিক লাইন ৷ সোমবার এখানকার একটি বাড়ি থেকেই উদ্ধার হয় প্রদুম প্রজার (23) ক্ষতবিক্ষত ও ঝুলন্ত দেহ ৷ উদ্ধার করা হয়েছে তাঁর মেয়ে, আড়াই বছরের অনিকা প্রজার দেহও ৷ পাশাপাশি, গুরুতর আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে প্রদুম প্রজার স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা প্রজা ওরাওঁকে ৷ স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভর্তি করেছেন ৷ হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই গৃহবধূর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক ৷ অন্যদিকে, প্রদুম ও তাঁর মেয়ে অনিকার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে নকশালবাড়ি থানার পুলিশ ৷ কেন এমন কাণ্ড ঘটালেন প্রদুম, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দার্জিলিংয়ের ডিএসপি (গ্রামীণ) অচিন্ত্য গুপ্ত ৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নকশালবাড়ি ব্লকের বেলগাছি চা বাগানে অস্থায়ী শ্রমিকের কাজ করতেন প্রদুম ৷ থাকতেন বাগানেরই শ্রমিক বস্তিতে ৷ সংসারে অনটন ছিল নিত্যসঙ্গী ৷ তাই স্থানীয় একটি হোটেলেও কাজ করতে হত প্রদুমকে ৷ রবিবার সকালে প্রদুমের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা মেয়ে অনিকাকে নিয়ে জাবরা শ্রমিক লাইনে বাপের বাড়ি যান ৷ রাতে কাজ থেকে সরাসরি শ্বশুরবাড়ি চলে যান প্রদুম প্রজা ৷ এরপর সকলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করে শুয়ে পড়েন ৷
প্রদুমের শাশুড়ি রতিয়া ওরাওঁ জানিয়েছেন, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে মাটিতেই শুয়েছিলেন প্রদুম ৷ আর রতিয়া শুয়েছিলেন খাটে ৷ ভোররাতে আচমকা ঘুম ভেঙে যায় বৃদ্ধার ৷ তিনি দেখেন, উন্মত্তের মতো আচরণ করছেন প্রদুম ৷ ধারালো অস্ত্র নিয়ে একরত্তি মেয়েকে কোপাচ্ছেন তিনি ! অনিকার আর্ত চিৎকারে ঘুম ভেঙে যায় প্রিয়াঙ্কার ৷ তিনি স্বামীকে আটকানোর চেষ্টা করতেই তাঁর উপরও ঝাঁপিয়ে পড়েন প্রদুম ৷ অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হন প্রিয়াঙ্কা ৷ তিনি ও তাঁর মা রতিয়া জোর করে প্রদুমের হাত থেকে অস্ত্রটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু, তাতে লাভ হয়নি কোনও ৷ উল্টে, বাধার মুখে পড়ে প্রদুম নিজের গলাতেই কোপ মারতে শুরু করেন ৷ অস্ত্রটি কোনও মতে কেড়ে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যান রতিয়া ও প্রিয়াঙ্কা ৷ এরপর রক্তাক্ত অবস্থায় গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে প্রদুম ৷ এদিকে চিৎকার শুনে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা ৷ তাঁরাই পুলিশে খবর দেন এবং প্রিয়াঙ্কাকে হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করেন ৷
আরও পড়ুন :Bhatkunda Murder Case : পঞ্চায়েত প্রধানের ছেলে খুনে আটক চার, টেন্ডারের সমস্যার জেরেই খুন ?
ঘটনা প্রসঙ্গে রতিয়া ওঁরাও বলেন, ‘‘ঘুমের মধ্যে আচমকা দেখি প্রদুম আমার মেয়ে আর নাতনিকে কোপাতে শুরু করেছে ৷ আমি আর আমার মেয়ে কোনও মতে প্রাণে বেঁচে গিয়েছি ৷ কিন্তু নাতনিকে বাঁচাতে পারলাম না ৷ ও কেন এমন করল জানি না ৷’’