শিলিগুড়ি, 20 মার্চ : শিলিগুড়িতে একটা চালু রসিকতা আছে, অশোক ভট্টাচার্যের মাথাব্যথা হলে ট্যাবলেট খান শঙ্কর ঘোষ । আক্ষরিক অর্থে এই দুজনের সস্পর্ক ছিল গুরু-শিষ্যর । শঙ্কর ঘোষকে অশোকের ছায়াসঙ্গী বলা হত । অশোক ভট্টাচার্য মেয়র থাকাকালীন অলিখিত ভাবে দু নম্বর স্থানটি ছিল শঙ্কর ঘোষের দখলে । সেই শঙ্করের আচমকা সিপিএম ত্যাগে শোরগোল পড়ে গিয়েছে । বিষয়টি আরও অন্যমাত্রা পেয়েছে কারণ, বিজেপিতে যোগ দিয়ে সটান প্রার্থী হয়ে গিয়েছেন শঙ্করবাবু । গুরুর বিরুদ্ধে একেবারে সম্মুখ সমরে নেমে পড়েছেন তিনি । তাই শিলিগুড়ি আসনটি এবারের ভোটে আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে । রাজ্যের বাকি আসনের উল্টোপথে হেঁটে এখানে মূল লড়াইটা হচ্ছে সিপিএম বনাম বিজেপির মধ্যে । তৃণমূলের ওমপ্রকাশ মিশ্র রয়েছেন বটে, তবে তিনি কতটা লড়াইয়ে থাকতে পারবেন তা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেই সন্দেহ রয়েছে ।
অশোকের ছায়া থেকে বেরোতেই বিদ্রোহী শঙ্কর
গুরু-শিষ্য এবার মুখোমুখি লড়াইয়ের ময়দানে। শিলিগুড়িতে গুরু অশোক ভট্টাচার্যকে ছেড়ে তাঁর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন শিষ্য শঙ্কর ঘোষ ।
এখন প্রশ্ন হল, রাতারাতি কি এমন ঘটল যে শঙ্কর ঘোষ সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন এবং প্রার্থীও হয়ে গেলেন । ইয়ং ব্রিগেডকে প্রার্থী চেয়ে দার্জিলিং জেলা সিপিএমে যে ক'জন সরব হয়েছিলেন, তার মধ্যে শঙ্কর ঘোষ অগ্রগণ্য ছিলেন । তাঁর নিজের বয়স 50-এর নিচে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গের একাধিক কেন্দ্রে ছাত্র-যুব ফ্রন্ট থেকে প্রার্থী করা হলেও উত্তরবঙ্গে সেভাবে তরুণদের তুলে আনা হয়নি । পুরোনো মুখের উপরেই আস্থা রাখা হয়েছে । বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ জন্মেছিল শঙ্করবাবুর মনে । তাঁর আশা ছিল, শিলিগুড়ি না হলেও পাশের ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি আসনে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন । কারণ জেলা সিপিএমে অশোক ভট্টাচার্য, জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারের পরই ধারে ভারে শঙ্কর ঘোষের স্থান। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি । তিনি বুঝে যান, সিপিএমে থাকলে তাঁকে অশোকের ছায়ায় থাকতে হবে । আর করোনাকে জয় করে যেভাবে সত্তরোর্দ্ধ অশোকবাবু ছুটে চলেছেন, তাতে শিলিগুড়ির প্রাক্তন মেয়র খুব তাড়াতাড়ি রিটায়ার করবেন বলে মনে হয় না । তাই নিজের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা চরিতার্থ করতে শঙ্করবাবু বিজেপিতে নাম লেখান । তবে বিজেপিতে যোগ দিতে সলতে পাকানোর কাজ অনেক আগে থেকেই শুরু করেছিলেন তিনি । দলে তাঁর অনুগামীরা আগেই ভিড়েছিলেন বিজেপিতে । তিনি নিজেও গোপনে গেরুয়া বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন । ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে প্রার্থী না হতে পেরে আর সময় নষ্ট করেননি শঙ্কর ঘোষ । বিজেপিতে গিয়ে জীবনে প্রথমবার বিধানসভায় লড়াইয়ের সুযোগ পেয়েছেন তিনি ।
মনের গোপনে শঙ্কর ঘোষের ক্ষোভের কথা গেরুয়া শিবিরের অজানা ছিল না । তাই বিজেপির পক্ষ থেকে আগে থেকেই তাঁর কাছে টোপ দেওয়া হয়েছিল । সিপিএমের প্রার্থী তালিকায় তাঁর নাম না থাকার পরই জার্সি বদল করে ফেলেন তিনি । যেভাবে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে দলে টানার প্রতিযোগিতা চলছে, তাতে শঙ্কর ঘোষকে পেতে তৃণমূলও ঝাঁপাতে পারত । কিন্তু সিপিএমের যেমন অশোক-রাজ, দার্জিলিং জেলা তৃণমূলে তেমনি গৌতম-রাজ । সেখানে গেলে তাঁকে গৌতমের ছায়ায় ঢাকা পড়তে হত । সেদিক থেকে বিজেপি অনেকটাই ফাঁকা মাঠ । শিলিগুড়িতে বিজেপিতে সেরকম ওজনদার কোনও নেতা নেই । বস্তুত বিজেপিতে যোগ দিয়ে প্রার্থী হওয়া ছাড়াও যেভাবে প্রচারের আলো শুষে নিতে পেরেছেন তিনি, তৃণমূলে যোগ দিয়ে তা সম্ভব ছিল না। তাই হিসাব কষে বিজেপিতেই নাম লিখিয়েছেন শঙ্কর ঘোষ । এতদিন গুরুর ছায়ায় থেকে এবার তাঁর বিরুদ্ধেই লড়তে হচ্ছে শঙ্করবাবুকে । গুরুমারা বিদ্যা প্রয়োগ করে পারবেন কি গুরুকে বধ করতে ? অশোক-শঙ্করের লড়াই নিয়ে টি-20র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে শিলিগুড়িতে ।