ঘটনায় তাজ্জব স্থানীয় বাসিন্দারা ৷ শিলিগুড়ি, 22 ডিসেম্বর:সম্প্রতি ভারতীয় সেনার কিছু গোপন তথ্য বিদেশে পাচার করা হয় ৷ সেই তথ্য হাতে পেয়েই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের পক্ষ থেকে রাজ্যকে সতর্ক করা হয় ৷ এরপরই মাঠে নামে রাজ্য পুলিশের (West Bengal Police) স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (Special Task Force) বা এসটিএফ (STF) ৷ টানা তিনদিন শহরে নজরদারি চালায় তারা ৷ শেষমেশ শিলিগুড়ির (Siliguri) 24 নম্বর ওয়ার্ডের ভরতনগর থেকে মহম্মদ শাকিল ওরফে গুড্ডু কুমারকে (Guddu Kumar) গ্রেফতার করা হয় ৷ তাঁর কাছ থেকে ইতিমধ্য়েই বেশ কিছু মানচিত্র এবং নথি উদ্ধার করা হয়েছে ৷ এসটিএফের ডিএসপি (উত্তরবঙ্গ) সুদীপ ভট্টাচার্য এই গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বলেন, "ধৃতকে জেরা করে বেশ কিছু তথ্য উঠে এসেছে ৷ সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷"
উল্লেখ্য, পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের এজেন্ট সন্দেহে বুধবারই মহম্মদ শাকিল ওরফে গুড্ডু কুমার গ্রেফতারের খবর সামনে এসেছিল ৷ ওই দিনই ধৃতকে জলপাইগুড়ি আদালতে পেশ করা হয় ৷ বিচারক অভিযুক্তকে 14 দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন ৷ বৃহস্পতিবার ধৃতকে নিয়ে তাঁর শিলিগুড়ির ভাড়াবাড়িতে যান গোয়েন্দারা ৷ সেখানে খানাতল্লাশি চালান তাঁরা ৷ এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, গুড্ডু আদতে বিহারের চম্পারণের বাসিন্দা হলেও গত দু'বছর ধরে ঘাঁটি গেড়েছিলেন শিলিগুড়ি (Siliguri) শহরে ৷
আরও পড়ুন:শিলিগুড়ির টোটো চালক আইএসআই এজেন্ট, গ্রেফতার করল এসটিএফ
এই ঘটনায় তাজ্জব বনে গিয়েছেন শাকিলের বাড়ির মালিক সঞ্জয় কুমার সুশীল ৷ তিনি জানান, "একবছর ধরে ওই যুবক আমার বাড়িতে ভাড়া ছিলেন ৷ তার আগের একবছর ভাড়া থাকতেন পাশেই আর একজনের বাড়িতে ৷ কখনও ওঁর আচরণে সন্দেহ হয়নি ৷ আমার কাছে ওঁর ভোটারকার্ড, প্যানকার্ড, আধার রয়েছে ৷ ছেলেটি বিএসসি পাস ৷ তাই আমি ওঁকে বলেছিলাম, আমার ছেলেকে মাঝেমধ্যে এসে পড়াতে ৷ সেই সূত্রে আমার বাড়ির ভিতরেও যাতায়াত ছিল ওঁর ৷ আমার প্রথম থেকেই ওঁকে দেখে মনে হয়েছিল, খুব ভালো ছেলে ৷ তিনি যে এমন কাজ করতে পারেন, তা আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না ৷ সন্দেহ হতে পারে, এমন কাজই তিনি কখনও করেননি ৷ এমনকী, এই একবছরে ওঁর সঙ্গে কেউ কখনও দেখাও করতে আসেননি ৷ তাহলে কীভাবে সন্দেহ হবে বলুন ? "
একই সুর শোনা গিয়েছে স্থানীয় বাসিন্দা রাজকুমারের গলাতেও ৷ তিনি পেশায় টোটোচালক ৷ গুড্ডুও তাঁদের সঙ্গেই টোটো চালাতেন ৷ ফলে বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল ৷ কিন্তু, এর বেশি গুড্ডু সম্পর্কে তাঁরা জানেন না ৷ এমনকী, বুধবার যে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়, সেই তথ্যও অনেক পরে রাজকুমারদের কাছে পৌঁছয় ৷ গোটা ঘটনায় তাজ্জব বনে গিয়েছেন তাঁরা ৷
তবে, এরই মধ্যে গুড্ডুর বাড়ির মালিক এমন কিছু কথা বলেছেন, যা সন্দেহ বাড়ায় ৷ যেমন, তিনি জানিয়েছেন, গুড্ডু বারবার বলতেন, তিনি শিলিগুড়ি শহরের আনাচকানাচ সম্পর্কে সবকিছু জানতে চান ! তাতে নাকি তাঁর ব্যবসার সুবিধা হবে ! অথচ, নির্দিষ্ট কোনও ব্যবসা তিনি করতেন বলে জানেন না তাঁর বাড়ির মালিক ৷ গুড্ডু নানা ধরনের কাজ করতেন ৷ শিলিগুড়ি শহরের বাইরে আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং আন্তঃরাজ্য সীমানাগুলি সম্পর্কে নিয়মিত খবর রাখতেন তিনি ৷ কীভাবে এইসব এলাকা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়, তারও খবর রাখতেন ৷ এছাড়াও, শহরের আশেপাশে কোথায় কোথায় সেনাছাউনি রয়েছে, তার খোঁজ রাখতেন গুড্ডু ৷