ফায়ারিং রেঞ্জে হাতির মৃত্যু নিয়ে সেনা ও বন দফতরের বক্তব্য দার্জিলিং, 16 মার্চ: 24 ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই জঙ্গল থেকে উদ্ধার হল আরও দুটি হাতির রক্তাক্ত মৃতদেহ (Again Recovered 2 Elephant Body) ৷ এবারও ফায়ারিং রেঞ্জে ঢুকে পড়েছিল বলেই ওই দু'টি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে । এই ঘটনায় আরও বেশ কয়েকটি হাতি জখম হয়েছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর । এই নিয়ে মোট তিনটি হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷
অন্যদিকে, জখম হাতিগুলির উদ্দেশ্যে জঙ্গলে তল্লাশি শুরু করেছে বন দফতর । ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে শহরে । বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতে শোরগোল পরে গিয়েছে রাজ্যজুড়ে । প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বন দফতরের ভূমিকা নিয়েও । ঘটনায় সেনা ও বন দফতরের মধ্যে শুরু হয়েছে তরজা (Army and Forest Office on Elephants Death Issue)।
প্রসঙ্গত, 13 মার্চ তিস্তা চরের ফায়ারিং রেঞ্জে প্রশিক্ষণ চলছিল সেনার। এরপর 14 মার্চ মঙ্গলবার শিলিগুড়ি সংলগ্ন সালুগাড়া রেঞ্জে একটি 12 বছরের হাতির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয় । ওই হাতিটি ফায়ারিং রেঞ্জে ঢুকে পড়ার ফলে তার মৃত্যু হয় বলে দাবি করে বন দফতর । এই ঘটনার 24 ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার হয় আরও দুটি হাতির দেহ ।
যদিও ফায়ারিং রেঞ্জে সেনার প্রশিক্ষণের ফলে কোন বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়নি বলে দাবি করেছেন উচ্চপদস্থ সেনা আধিকারিকরা । অন্যদিকে, বন দফতরের দাবি, ফায়ারিং রেঞ্জে ঢুকে পড়াতেই সেনার বম্ব সেল ফেটে স্প্রিংটার লেগে ওই হাতিগুলির মৃত্যু হয়েছে । হাতি দু'টির শরীরে রয়েছে স্প্রিংটারের ক্ষতও মিলেছে । ময়নাতদন্তের সময় তাদের শরীর থেকে উদ্ধার হয়েছে স্প্রিংটারের অংশ ৷
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দু'টি হাতির মধ্যে একটির দেহ উদ্ধার হয়েছে বৈকুণ্ঠপুর ফরেস্ট ডিভিশনের অন্তর্গত তারঘেরা রেঞ্জে । যদিও বন দফতর জানিয়েছে এই হাতিটি কানের সংক্রমণজনিত রোগে মৃত্যু হয়েছে ৷ আর অন্যটির দেহ উদ্ধার হয়েছে সাতমাইল রেঞ্জে । বুধবারই ওই দু'টি হাতির দেহ উদ্ধার করেন বনকর্মীরা । আর তারপরেই বনাধিকারিকদের মধ্যে ছুটোছুটি শুরু হয়ে যায় । উদ্ধার হওয়া হাতি দু'টির মধ্যে সাতমাইলের হাতিটি পূর্ণবয়স্ক মহিলা হাতি বলে জানা গিয়েছে ।
এই বিষয়ে রাজ্যের মুখ্য বনপাল (হেড অফ ফরেস্ট ফোর্স) সৌমিত্র দাশগুপ্ত বলেন, "এর আগে একটি এবং আরও দু'টি হাতির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে । তাদের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে ঠিকই । তবে তদন্ত ও ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না-পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর কারণ কোনওভাবেই নিশ্চিত করে বলা যাবে না। সেরকম ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনে সেনা ও সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলা হবে । গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে ।"
বন দফতরের দাবি, তিস্তা চরে সেনার ফায়ারিং রেঞ্জে কোনওভাবে ঢুকে পড়ে হাতির পাল । সেল ফাটলে তার থেকে স্প্রিংটার বের হয় । সেগুলি কোনওভাবে লেগেই জখম হতেই হাতিগুলি জঙ্গলে ঢুকে পড়ে । কিছুদূর যাওয়ার পরেই মৃত্যু হয় তাদের । যদিও বন দফতরের এই দাবি সম্পূর্ণ নস্যাৎ করে দিয়েছে সেনা ।
বিষয়টি নিয়ে এক সেনা আধিকারিকরা জানান, ফায়ারিং রেঞ্জে প্রশিক্ষণের অনেক আগে থেকেই গোটা এলাকা খালি করা হয়। বন দফতরকেও জানানো হয় । সেইসময় এলাকা কোনও বন্যপ্রাণী না-থাকলে প্রশিক্ষণের অনুমতি দেয় বন দফতর। আর বন্যপ্রাণী সেই এলাকায় থাকলে সেনার তরফে প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখা হয় । এক্ষেত্রেও সেই সতর্কতাই অবলম্বন করা হয়েছিল । ভারতীয় সেনার কর্নেল অঞ্জনকুমার বাসুমাতারি বলেন, "ফায়ারিং রেঞ্জে প্রশিক্ষণে কোনও হাতির মৃত্যু হয়নি । ঘটনাটি কতটা সত্যি তা তদন্ত করে দেখা হবে ।" ফলে ঘটনাটি ফায়ারিং রেঞ্জকে ঘিরে নাকি এর পিছনে চোরা শিকার বা অন্য কোনও কারণ রয়েছে তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে ।
আরও পড়ুন :ফায়ারিং রেঞ্জে প্রবেশ, সেনার গুলিতে মৃত্যু হস্তি শাবকের