বুনিয়াদপুর, 22 নভেম্বর: রাখাল বালকের পালে বাঘ পড়ার গল্প মনে আছে ? প্রতিদিন বাঘ পড়ার গল্প ফেঁদে মজা নেওয়ার সেই পুরনো কাহিনি ৷ তারপর যেদিন সত্যিই বাঘ পড়ল সেদিন আর কেউ এল না ৷ সবাই ভাবল এদিনও বোধহয় রাখাল মজা করছে ৷ এই গল্পেরই অনুরূপ ঘটনার সাক্ষী দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বুনিয়াদপুর পৌরসভার 2 নম্বর ওয়ার্ডের বড়াইল বুড়িতলায় ৷
মনের মতো কিছু না হলেই আত্মহত্যার হুমকি দিতেন এই যুবক ৷ হাতে দড়ি কিংবা অন্য কিছু নিয়ে দৌড়তেন গলায় ফাঁস দিতে ৷ প্রতিবারই কেউ না কেউ তাঁকে আটকাতেন ৷ অভিনয়ের পর তাঁর মন বুঝে চলতেন বাড়ির সবাই ৷ সম্ভবত সেই কারণেই বিষয়টিকে হাতিয়ার করে ফেলেছিলেন তিনি ৷ তাঁর এমন অভিনয় গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল পরিবার-সহ এলাকাবাসীরও ৷ তাই সোমবার বিকেলে যখন সবার সামনেই তিনি হাতে ধুতি পাকাচ্ছিলেন, তখন বাড়ির কেউ গা করেনি ৷ এমনকি তাঁর স্ত্রীও কোনও গুরুত্ব দেননি ৷ একসময় ঘরের ছাদের হুক থেকে ঝুলে পড়েন তিনি ৷ কিছুক্ষণ পর বিষয়টি নজরে আসে তাঁর স্ত্রীর ৷ বাড়ির লোকজন ধুতি কেটে তড়িঘড়ি তাঁকে স্থানীয় গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষরক্ষা হয়নি ৷ চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন ৷
মৃত যুবক কার্তিক পাহান বুনিয়াদপুর এফসিআই গোডাউনে শ্রমিকের কাজ করতেন ৷ বাবা অর্জুন পাহানও পেশায় শ্রমিক ৷ প্রেম করে বছর দু'য়েক আগে বোল্লার সুস্মিতা পাহানকে বিয়ে করেন ৷ মাত্র 23 দিন আগে তাঁদের একটি ছেলে হয়েছে ৷ পরিবারের সদস্যরা জানাচ্ছেন, ছোট থেকেই খুব জেদি ছিলেন কার্তিক ৷ বিয়ের পর থেকে তাঁর আত্মহত্যার অভিনয় করার রোগ মাথায় চেপেছিল ৷ মনের মতো কিছু না হলেই হাতে দড়ি বা অন্য কিছু নিয়ে আত্মহত্যা করতে দৌড়তেন ৷ অন্তত 12 বার এমনই ঘটনা ঘটিয়েছেন ৷ আর গত 15 দিনে তিনি চারবার এই কাণ্ড ঘটাতে গিয়েছিলেন ৷ বেশিরভাগ সময় তাঁর জামাইবাবু রাজু পাহান তাঁকে আটকান ৷ তবে কার্তিকের এহেন আচরণ গা সওয়া হয়ে গিয়েছিল সবার ৷
কার্তিকের দাদা সিদ্ধার্থ পাহান বলছেন, "এর আগে অন্তত 12 বার ভাই আত্মহত্যা করার নাটক করেছে ৷ আমরা ওকে অনেক বুঝিয়েছি ৷ কেন ও এমন করত জানি না ৷ ওর কোনও অসুখও ছিল না ৷ সোমবার বিকেল চারটে নাগাদ ও ফের একই কাজ করে ৷ বাড়ির সবাই ওকে ধুতি পাকাতেও দেখেছিল ৷ কিন্তু কেউ কিছু ভাবেনি ৷ শেষ পর্যন্ত সেই অভিনয়ই কাল হল ওর ৷"