বালুরঘাট, 27 সেপ্টেম্বর: বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তিনটি নদী । বালুরঘাটে আত্রেয়ী, গঙ্গারামপুরে পুনর্ভবা ও বংশীহারীর টাঙন নদী বর্তমানে ফুলে ফেঁপে উঠেছে । নদীর জল অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে জেলাজুড়েই । নিচু জায়গাগুলিতে জল ঢুকতে শুরু করেছে । বালুরঘাটে আত্রেয়ীর জল আরও বেড়ে যাওয়ার ফলে বালুরঘাট শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকায় বহু এলাকায় জল ঢুকে পড়েছে । বালুরঘাট শহর ও শহর সংলগ্ন এলাকায় প্রায় শতাধিক বাসিন্দা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে । একই অবস্থা গঙ্গারামপুর, তপনের বিস্তীর্ণ এলাকা, কুমারগঞ্জের সমজিয়া, বংশীহারী ও কুশমণ্ডির একাধিক এলাকা ।
গতকাল থেকে আত্রেয়ীর জল বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী বালুরঘাট শহর সংলগ্ন বেলাইন, সিংপাড়া, বালুরঘাট শহরের চকভৃগু, খিদিরপুরসহ বেশ কিছু এলাকার বাড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে । এইসব এলাকার প্রায় শতাধিক বাসিন্দা নিকটবর্তী স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে । অন্যদিকে, বালুরঘাটের জলঘর গ্রামপঞ্চায়েতের চককাশী এলাকায় নদী বাঁধ উপচে বিস্তীর্ণ এলাকায় কৃষিজমি ও বেশ কিছু বাড়িতে জল ঢুকেছে । খাসপুরেও একাধিক বাড়িতে জল ঢুকেছে । বালুরঘাটের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সুপার, BDO, জয়েন্ট BDOসহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা পরিদর্শনে গিয়ে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন । চকভৃগু শশ্মান এলাকায় নদী বাঁধ মেরামতির কাজও শুরু করেছে জেলা সেচ বিভাগ । যদিও সেচ বিভাগের কাজে খুশি নয় স্থানীয় বাসিন্দারা ।
অন্যদিকে, তপন ব্লকের রামপাড়া চ্যাঁচড়া গ্রামপঞ্চায়েতের সুতইল, কসবা, বাটোরাসহ বেশকিছু গ্রাম পূর্ণভবার জলে প্লাবিত হয়েছে । বাড়ির ভিতরে এবং রাস্তায় জল জমে যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়েছে । তপনে একটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে প্রায় 60 জন বাসিন্দা আপাতত আশ্রয় নিয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর । এছাড়াও কুমারগঞ্জ ব্লকের সমজিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জলে ডুবে গিয়েছে । আজ সকাল থেকেই জল ঢুকতে শুরু করেছে নবগ্রাম, সমজিয়াসহ একাধিক এলাকায় । ইতিমধ্যেই এলাকার বেশিরভাগ বাড়িতে হাঁটু জল । প্রশাসন সূত্রে খবর, কুমারগঞ্জ ব্লকে তিনটি রিলিফ ক্যাম্পে প্রায় 130 জন আশ্রয় নিয়েছে । এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জেলাজুড়ে ছয়টি রিলিফ ক্যাম্প খোলা হয়েছে । সেখানে মোট 267 জন আশ্রয় নিয়েছে । প্রশাসনের তরফে রিলিফ ক্যাম্পগুলিতে সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে । রিলিফ এবং রেসকিউ কাজের জন্য আলাদা আলাদা এলাকায় প্রতিনিধিদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । এছাড়াও কুইক রেসপন্স টিম, সিভিল ডিফেন্স এবং স্পিড বোর্ড ও চালকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে । তবে এখনও পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির বা কোন প্রানীর মৃত্যুর খবর নেই ।
এবিষয়ে জেলা সেচ বিভাগের নির্বাহী বাস্তুকার স্বপন বিশ্বাস বলেন, "বালুরঘাটে আত্রেয়ী নদীর জল বিপদসীমার ছয় ইঞ্চি, পুনর্ভবার জল বিপদসীমার আট ইঞ্চি ও বংশীহারীর টাঙন নদীর জল বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে । রাতে আরও কিছুটা জলস্তর বাড়তে পারে । নদী বাঁধগুলি জোরকদমে সংস্কারের কাজ চলছে । ভয়ের কোনও কারণ নেই । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে ।"