বালুরঘাট, 3 অক্টোবর : কোরোনা ও লকডাউনের ফলে ব্যাপক সমস্যায় পড়েছেন বালুরঘাট-সহ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মাইক ব্যবসায়ীরা । সামনেই দুর্গোৎসব এলেও এখনও পর্যন্ত সেভাবে কেউ কাজের বরাত পাননি বললেই চলে । এদিকে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ও বড় রাজনৈতিক কর্মসূচি । এর ফলে দিন দিন সমস্যা আরও বাড়ছে । অনেকে পেটের টানে এই পেশা থেকে অন্য পেশায় চলে গেছেন । কবে সব ঠিক হবে সে দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন জেলার মাইক ব্যবসায়ীরা ।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় সব মিলিয়ে 300 থেকে 350 জন মাইক ব্যবসায়ী রয়েছেন । এর মধ্যে বালুরঘাট শহরেই রয়েছেন প্রায় 50 জন। হাতে আর বেশিদিন নেই দুর্গাপুজোর । ঢাকে কাঠি পড়ার অপেক্ষা । এই সময় অন্যান্য বছরে মাইক ব্যবসায়ীদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে । মূলত এই সময় কাজের বরাত পাওয়া নিয়ে ছোটাছুটি করতে হয় ব্যবসায়ীদের । পাশাপাশি সাউন্ড সিস্টেমের বিভিন্ন সরঞ্জাম ঝালিয়ে নিতে হয় । তবে অন্যান্য বছরের মতো ব্যস্ততা এবার আর নেই বালুরঘাট-সহ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মাইক ব্যবসায়ীদের । কারণ এখনও তাঁরা সেভাবে দুর্গাপুজোর কাজের বরাত পাননি । কোরোনা ও লকডাউনের ফলে বিগত সাত মাস ধরে কাজ নেই বললেই চলে । কোনও বড় সামাজিক বা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হচ্ছে না । এমনকী কোরোনার জন্য বন্ধ বড় রাজনৈতিক কর্মসূচিও । বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান । এই সব ক্ষেত্রেই মাইক ব্যবসায়ীরা ডাক পেতেন । তবে এবার কিছুই নেই। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন বালুরঘাট শহর থেকে জেলার শতাধিক মাইক ব্যবসায়ী । পেটের দায়ে পেশা বদলাতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে ।
অবহেলায় ধুলো জমছে সাউন্ড সিস্টেম, অ্যাম্পলিফায়ার, মাইকের স্ট্যান্ডে দীর্ঘদিন ধরে কাজ না থাকায় বহুমুখী সমস্যায় পড়েছেন ব্যবসায়ীরা । বেতন দিতে পারছেন না কর্মীদের । এমনকী বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাউন্ড সিস্টেম রাখার ঘর বা গোডাউনের ভাড়াও দিতে পারছেন না তাঁরা । কাজ না থাকায় অনেকে এই পেশা ছেড়ে মাছ ব্যবসা, সবজি ব্যবসা করতে শুরু করেছেন ।
পুজো আসছে, তাও কাজের অর্ডার আসেনি মাইক ব্যবসায়ীদের এবিষয়ে বালুরঘাটের মাইক ব্যবসায়ী সমু পাল ও মৃণ্ময় মজুমদার জানান, প্রায় সাত মাস ধরে তাঁরা কাজ পাচ্ছেন না । এমন সময় দুর্গাপুজোর জন্য বিভিন্ন কাজের অর্ডার পেতেন । তবে এবার কোনও পুজো কমিটি সেই ভাবে মাইকের জন্য তাঁদের কাছে আসছেন না । অনেকে আসলেও ভাড়ার কথা শুনে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন । দীর্ঘ সাত মাস ধরে এভাবেই চলছে। কাজ না থাকায় কর্মীদের বেতন ঠিক মতো দিতে পারছেন না। গোডাউন ভাড়ার টাকার জন্য মালিকরা তাগাদা দিচ্ছেন ।
কোরোনা ও লকডাউন না হলে এই সময় বালুরঘাট পৌরসভার নির্বাচন হত । তাহলে হয়ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির জন্য মাইক ভাড়া পেতেন । এদিকে কোরোনার লকডাউনের জন্য বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানও বন্ধ । ধুলো জমছে সাউন্ড সিস্টেমে । দীর্ঘদিন ধরে মাইকের বিভিন্ন সরঞ্জাম পড়ে থাকায় তা বিকল হয়ে পড়ছে । এর ফলে তাঁরা চরম বিপাকে পড়েছেন ।
অন্যদিকে এ-বিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর সাউন্ড ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা রজতকুমার দাস জানান, "প্রায় সাত মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ রয়েছে । এর ফলে অনেক মাইক ব্যবসায়ী অন্য পেশায় ঝুঁকেছেন । যারা একসময় মালিক ছিলেন তাঁরা এখন অন্যের হয়ে কাজ করছেন । কেউ মাছ বিক্রি, কেউ সবজির ব্যবসা আবার কেউ অন্যের দোকানে কাজ করছেন । এভাবে চলতে থাকলে সব কিছু বিক্রি করে অন্য পেশায় সকলকেই যেতে হবে ।"