কুমারগঞ্জ, 13 এপ্রিল : রোজের মতো লকডাউনে সাধারণের পাশে থাকতে আজও ত্রাণ সামগ্রী বিলির কাজে ব্যস্ত ছিলেন আদিত্য বসাক ৷ আদিত্যবাবু দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ থানার সাফানগর এলাকার তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি ৷ এলাকায় কারা এখনও ত্রাণ সামগ্রী পাননি সেসব কাজই কার্যালয়ে বসে পরিচালনা করছিলেন ৷ হঠাৎই স্থানীয় বাসিন্দা লুখিরাম কার্যালয়ে এসে তাঁর পা চেপে ধরে ৷
চুল উস্কোখুস্কো, মুখে আতঙ্কের ছাপ ৷ পা ধরে কেঁদে চলেছে সমানে ৷ কী হয়েছে জানতে চাইলে সে জানায়, নিজের মাকে খুন করেছে ৷ মদ খেয়ে আছে ভেবে প্রথমে হালকাভাবেই ব্যাপারটা নিয়েছিলেন আদিত্যবাবু ৷ পরে বুঝতে পারেন ঘটনাটা সত্যি ৷ লুখিরাম কাঁদতে কাঁদতেই জানায়, সে ভুল করেছে ৷ তাই থানায় আত্মসমর্পণ করতে চায় ৷ তাকে কুমারগঞ্জ থানায় পাঠিয়ে দেন আদিত্যবাবু ৷ তারপর তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ৷
স্থানীয় সূত্রে খবর, লুখিরামের স্ত্রী নমি মার্ডি মাস খানেক আগে আগুনে পুড়ে মারা যায় ৷ তারপর থেকেই মা সতী হেমব্রম (65)-কে ডাইনি অপবাদ দিতে থাকে সে ৷ অভিযোগ, গতরাতে মায়ের পেটে বল্লম ঢুকিয়ে মেরে ফেলে ৷ এদিকে, গোটা বাড়িতে রক্ত থাকায় তা গোবর জল দিয়ে মুছে ফেলে লুখীরাম ৷ এরপর মায়ের দেহ ঘাড়ে করে বাড়ির কিছুটা দূরে আত্রেয়ী নদীতে ফেলে দিয়ে আসে সে ৷ আজ সকালে সাফানগর আত্রেয়ী নদীতে সেই দেহ ভেসে ওঠে ৷ কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ লুখিরামকে নিয়ে গিয়ে দেহ শনাক্ত করে ৷ দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ৷ লুখিরামের বিরুদ্ধে খুনের মামলা শুরু করেছে পুলিশ ৷
বর্তমান যুগেও এমন কুসংস্কারের ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করেছেন আদিত্য বসাক ৷ তিনি বলেন, লকডাউন উঠলে এলাকায় সচেতনতামূলক প্রচার করবেন ৷ এছাড়া লুখিরামের তিন সন্তান বর্তমানে অনাথ ৷ এই বিষয়ে সরকার যদি নজর দেন তারও আবেদন করেন তিনি ৷ পুলিশের তরফে জানানো হয়, লুখিরাম আত্মসমর্পণের পর দেহ উদ্ধার হয় ৷ ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷