গঙ্গারামপুর, 10 অগস্ট : দুই বাংলার কাঁটাতারের বাঁধন মেনে এগিয়েছে তিন নদী ৷ টাঙ্গন, পুনর্ভবা আর আত্রেয়ী। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থেকে শিববাটি ৷ এই রাস্তাটা ক্রমশ উত্তরে গিয়েছে পুনর্ভবাকে প্রায় যেন স্পর্শ করে ৷ এই পথে পথে ইতিহাস কথা বলে ৷ অনাদি অতীত যেন সামনে হাজির হয় ৷ উত্তরের এই পথ ধরে কিছুদূর এগোলেই আর্কিওলজিকাল সার্ভের নীল সাইনবোর্ড ৷ আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছে, পৌঁছে গিয়েছেন ইতিহাস প্রতিদ্ধ বানগড়ে ৷ বানগড়, সেই ঐতিহাসিক সময় থেকে এর অস্তিত্ব
এখানে এলেই পাল সেন যুগ-সহ বিভিন্ন যুগের স্থাপত্য নজরে আসে। গঙ্গারামপুর শহর থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার দূরেই রয়েছে বানগড়। পায়ে হেঁটে ও গাড়ি করে খুব সহজেই বানগড়ে যাওয়া যায়। কথিত রয়েছে বান রাজার নাম থেকেই এর নাম হয়েছে। বান বাজার মেয়ে ঊষার সঙ্গে নাকি সম্পর্ক ছিল শ্রীকৃষ্ণের নাতি অনিরুদ্ধের। কিন্তু রাক্ষস বংশের রাজা বান অনিরুদ্ধকে মেনে নেননি। ঊষাকে অপহরণ করে যেই রাস্তা দিয়ের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই রাস্তাটি "ঊষাহরণ" রাস্তা নামে পরিচিত। ঊষা অনিরুদ্ধের বিয়ের ছাদনা তলার চারটি কলা গাছ পাথর স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। যা এখন পবিত্র স্থান বলে পরিচিত। আরও কথিত রয়েছে 1937 সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কুঞ্জ গোবিন্দ গোস্বামী নেতৃত্বে বানগড়ে প্রথম খনন কার্য হয়। সেই সময় মাটির নিচ থেকে ইতিহাসের নানান ধ্বংসাবশেষ মেলে। তার থেকে গুপ্ত, মৌর্য, পাল ও সেন যুগের এবং মুসলিম আমলের বিভিন্ন স্থাপত্য সামনে আসে । পরবর্তীতে 2007, 2008 এবং 2009 সালেও বানগড়ে খননকার্য চালানো হয়। খননকার্যে পাল সেন বংশ সহ অন্য বংশের নানা মূর্তি এবং মুদ্রা উদ্ধার হয়। তবে তারপর আর খননকার্য চালানো হয়নি। এবিষয়ে ইতিহাসবিদ সমিত ঘোষ জানান, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পুরাতত্ত্বের আঁতুড়ঘর। আর বানগড়ে সব থেকে বেশি পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন মেলে। এই বানগড়কে নিয়ে সেখানে ইতিহাসের নানা অধ্যায়ে রয়েছে। শুঙ্গ, গুপ্ত, অম্বজ, পাল, সেন এবং মুসলিম আমলের নানা স্থাপত্য সেখানে চোখে পড়ে। এই বানগড়ে যে খনন কার্য শুরু হয় তা 1938 থেকে 1941 সাল পর্যন্ত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কুঞ্জ গোবিন্দ গোস্বামীর নেতৃত্বে। সে সময় ছটি অধি বসতি স্তর পাওয়া যায়। তখনই পাল ও সেন যুগের তথ্য সামনে এসেছে। এরপর দীর্ঘদিন বানগড়ে খননকার্য বন্ধ ছিল। 2007 সালে পাটনা এক্সাবেশন ব্রাঞ্চ থ্রির অধীনে অধ্যাপক সতীশ স্মরণের নেতৃত্বে খনন হয়। তখনও সেই কারণে বেশ কিছু নিদর্শন উঠে আসে। পরবর্তীতে 2008 এবং 2009 সালে ফের খননকার্য করা হয়। বিভিন্ন সময় খননকার্যে মূর্তি মুদ্রাসহ নানান নিদর্শন পাওয়া গেছে। যার বেশির ভাগ বালুরঘাট কলেজ ও জেলা মিউজিয়ামে সংরক্ষিত রয়েছে।