বালুরঘাট, 26 সেপ্টেম্বর : একটানা 30 বছর ভাত খাননি বৃদ্ধা । ছেলের উপর রাগ করে বা কিছুটা দুঃখ থেকেই । বছর 30 আগে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যান রঞ্জিত মহন্ত । দক্ষিণ দিনাজপুর থেকে সোজা বাংলাদেশ । রান্না বন্ধ করে দিয়েছিলেন নন্দরানি মহন্ত । নিজের জন্য আর কোনওদিন ভাত রান্না করেননি ! সেই থেকে চা ও পান খেয়ে থাকেন । সুস্থ আছেন । ঘরের কাজ করছেন । আবার মুড়ি নিয়ে হাটে বিক্রিও করতে যাচ্ছেন । তাঁর বয়স প্রায় সত্তর ছুঁই ছুঁই । কিন্তু কীভাবে রয়েছেন নন্দরানি ? সেই রহস্য জানতেই আগ্রহী সবাই ।
বালুরঘাটের মালঞ্চা আশ্রমপাড়া । এখানেই থাকেন নন্দরানি মহন্ত । বয়স 67 । প্রায় বছর 30 আগের ঘটনা । নন্দরানির একমাত্র ছেলে রঞ্জিত মহন্ত । রাগ করে বাংলাদেশের আত্মীয় বাড়ি চলে যান । সেই সময়ই শোকে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন নন্দরানি । ভাতও খাননি আর কখনও । তারপর কেটে গেছে 30 বছর । শুধুমাত্র ভাত নয়, কোনও ভারী খাবারও খান না তিনি ।
তবে বাড়ি ছাড়ার 15 বছর পর ফিরে আসেন রঞ্জিত । তবে বাড়িতে আর ফেরেননি । নন্দরানির বাড়ি থেকে পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে একটি বাড়িতে থাকেন । ছেলে দেশে ফিরলেও মুখে আর ভাত তোলেননি নন্দরানি । এখনকার খাবার বলতে দুধ চা ও পান । দিনে অন্তত 10-12 বার দুধ চা এবং পান খান । চা খাওয়ার সময় তাতে কিছু মুড়ি ছড়িয়ে দিয়ে খান । এই খেয়েই দিব্যি সুস্থ রয়েছেন ।
নন্দরানি মহন্তের স্বামী হরেন্দ্রনাথ মহন্ত । তাঁর বয়স 76 । তাঁদের তিন মেয়ে ও এক ছেলে । সকলেরই বিয়ে হয়ে গিয়েছে । রঞ্জিত আলাদা থাকেন । দু'জনেই বৃদ্ধ হওয়ায় এক মেয়েকে কাছে নিয়ে রেখেছেন । নন্দরানি রোজ মুড়ি বিক্রি করতে যান বালুরঘাটে । তবে এখন কোরোনা ও লকডাউনের জন্য বিগত কয়েক মাস ধরে সেই ব্যবসা বন্ধ হয়ে রয়েছে । ব্যবসা বন্ধ হয়ে থাকায় রোজগারও বন্ধ । এমত অবস্থায় সংসারে অভাব-অনটন । আগে গোরুর দুধ দিয়ে চা খেলেও বর্তমানে পাউডার দুধ দিয়ে চা খান নন্দরানি ।
এই বিষয়ে নন্দরানি মহন্ত জানান, প্রায় 30 বছর আগে একমাত্র ছেলে বাংলাদেশে চলে যাওয়ায় তিনি ভাত সহ অন্য খাওয়া ছেড়ে দিয়েছিলেন । তখন থেকেই চা ও পান খেয়ে আসছেন । এখন আর ভাত খাওয়ার ইচ্ছা করে না । স্বামীর জন্য ভাত রান্না করলেও তিনি তা খেতে পারেন না ।
কীভাবে জীবনযাপন করেন নন্দরানি ? প্রতিবেশী দুলাল বর্মণ জানান, ছোটো থেকেই তিনি দিদাকে দেখে আসছেন । কোনওদিন ভাত বা অন্য ভারী কিছু খেতে দেখেননি । ভাতের বদলে চা ও পান খান । দিব্যি সুস্থ রয়েছেন দিদা । এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনও বিজ্ঞানসম্মত কারণ নিশ্চয়ই আছে ।
কিন্তু কীভাবে সম্ভব ? চিকিৎসক সৌরভ কুন্ডু জানান, এভাবেও বেঁচে থাকা সম্ভব । শিশুর ক্ষেত্রে সে প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র মায়ের দুধ খায় । ওই সময় ওই শিশুর অন্য কোনও খাবার খাওয়া বারণ । দুধের মধ্যে আয়রন বাদে কার্বোহাইড্রেড, ফ্যাট ও প্রোটিন থাকে । এছাড়াও চিনিতে ক্যালোরি থাকে । এইভাবেই টানা 30 বছর ভাত না খেয়েও দুধ চা খেয়ে বেঁচে রয়েছেন বৃদ্ধা ।