নরেন্দ্রপুর, 28 জুলাই: সমাজের ভয়েই 11 মাসের সন্তানকে বিক্রি করেন তিনি ৷ পুলিশি জেরায় এমনই জানালেন নরেন্দ্রপুরের ঘটনায় অভিযুক্ত মা। শুক্লা দাস সহ বাকিদের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিল আদালত । নরেন্দ্রপুর থানার পুলিশ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে মা শুক্লা দাস সহ চার জনকে গ্রেফতার করে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির 317, 370, 372, 120 (বি) এবং জুভেনাইল জাস্টিস 2007-এর 81 ধারায় মামলা রুজু করা হয় ৷ বৃহস্পতিবার বারুইপুর মহকুমার আদালতে পেশ করলে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক ।
স্বামীর মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক বছর আগে। এরপরই অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন রানাভুতিয়ার বাসিন্দা শুক্লা দাস। দীর্ঘদিন ধরে এই সম্পর্কে জড়িয়ে থাকার ফলে সন্তান সম্ভবা হয়ে পড়েন শুক্লা। লোক লজ্জার ভয়ে নিজের সন্তানকে নিয়ে কী করবে, কিছু বুঝে উঠতে না পেরে অবশেষে সন্তানকে বিক্রি করার চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শুক্লা ৷ এমনটাই অন্তত দাবি করেছেন অভিযুক্ত 'মা' শুক্লা দাস ৷ আয়ার মাধ্যমে এক নিঃসন্তান দম্পতির সঙ্গে যোগাযোগ হয় শুক্লার। সেই নিঃসন্তান দম্পতির হাতে নিজের 11 দিনের সন্তানকে মাত্র দু'লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন তিনি ৷ যে ঘটনা সামনে আসতে হতবাক হয়ে যায় সকলেই ৷ চাঞ্চল্য ছড়ায় গোটা এলাকাতেও ৷
বছর পাঁচেক আগে শুক্লা দাসের স্বামীর মৃত্যু হয়। সম্প্রতি স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। যদিও মহিলা জানান, একটা সময় গর্ভপাত করানোর কথা ভেবেছিলেন তিনি। সেই বিষয়টি জানতে পারেন প্রতিবেশী শান্তি মণ্ডল ও তাঁর স্বামী তাপস মণ্ডল। তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, শান্তি আয়ার কাজ করেন। সেই সূত্রে অনেকের সঙ্গেই তাঁর চেনা-জানা। তিনিই পঞ্চসায়র থানা এলাকার বাসিন্দা ঝুমা মালিকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন শুক্লার। নিঃসন্তান ঝুমা মালিক জমি বিক্রি করে দুই লক্ষ টাকার বিনিময়ে শুক্লা দাসের 11 দিনের সন্তানকে কিনে নেন।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে মহিলাকে গুলি করে হত্যা, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু অভিযুক্তেরও
বিষয়টি জানতে পেরে শুক্লা দাসের প্রতিবেশী উত্তম হালদার নরেন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার তদন্তে নেমে শুক্লা দাস, ঘটনায় মধ্যস্থতাকারী শান্তি মণ্ডল তাঁর স্বামী তাপস এবং ঝুমা মাঝিকেও গ্রেফতার করে। যদিও সদ্যোজাতর মায়ের বক্তব্য, তিনি সন্তান বিক্রি করেননি। তিনি সন্তানকে বড় করার জন্য পরিচিতের হাতে তুলে দিয়েছিলেন মাত্র। যেহেতু তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নন। তাই তিনি সন্তানকে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, ঝুমা মাঝিরও বক্তব্য, তিনি সাহায্যের জন্য জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছিলেন শান্তিকে। আয়া শান্তি অবশ্য জানাচ্ছেন, তিনি সেন্টার থেকেই আয়ার কাজ করেন। সেই সূত্রেই ঝুমার সঙ্গে তাঁর পরিচয়। ঝুমা নিঃসন্তান হওয়ায় দুঃখ করতেন। তাই তিনি সন্তান বিক্রির ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করেছিলেন মাত্র ৷