ডায়মন্ড হারবার, 10 জুন : ভোজনরসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে ইলিশের জুড়ি মেলা ভার । বর্ষা মানেই ইলিশ আর ইলিশের বিভিন্ন পদ ৷ আর মাত্র কয়েকটা দিনের অপেক্ষা, তারপরই ইলিশকে জাল বন্দি করতে মাঝ সমুদ্রে পাড়ি দেবেন মৎস্যজীবীরা (Fishermen have started taking preparation for the sea voyage ahead of the fishing) ৷
তাই দক্ষিণ 24 পরগনার ডায়মণ্ড হারবার, কুলপি, ফলতা, কাকদ্বীপ, নামখানা, বকখালি, পাথরপ্রতিমা ও রায়দিঘির বিভিন্ন বন্দরগুলোতে এখন চরম ব্যস্ততা । নাওয়া-খাওয়া ভুলে মৎস্যজীবীরা ব্যস্ত নিজেদের মাছ ধরার সরঞ্জাম গোছাতে । চলছে জাল তৈরি থেকে ট্রলার সংস্কারের কাজ ৷
মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, 15 এপ্রিল থেকে 15 জুন এই দু'মাস সময় পর্যন্ত মাছের প্রজননের জন্য গভীর সমুদ্রে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে ৷ সরকারি নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর 15 জুন থেকে আবার মাঝ সমুদ্রে মাছ ধরতে যেতে পারবেন মৎস্যজীবীরা । তাই এখন চলছে শেষ বেলার প্রস্তুতি ৷
মাছ ধরতে যাওয়ার আগে প্রস্তুতি নিচ্ছেন মৎস্যজীবীরা আরও পড়ুন :Tiger Kills Fisherman : নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও মাছ ধরতে জঙ্গলে, বাঘের হামলায় প্রাণ গেল মৎস্যজীবীর
এই বিষয়ে মৎস্যজীবী শ্রীকৃষ্ণ দাস বলেন, "বেশ কয়েক বছর ধরে ইলিশ ধরতে যাচ্ছি ৷ গভীর সমুদ্রে ভয়ানক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় আমাদের । সাগরের উত্তাল ঢেউ পাড়ি দিয়ে আমরা জাল ফেলি । বিগত তিন বছর ধরে তেমনভাবে ইলিশ পাইনি আমরা । তার জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীদের । এ বছর মনে করছি ইলিশের জোগান ভালই হবে ৷"
ইলিশের মরশুমে মাঝ সমুদ্রে ট্রলার নিয়ে যেতে জ্বালানি তেল ও অন্যান্য সবকিছু নিয়ে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয় ৷ ট্রলার মালিক বিশ্বনাথ দাসের কথায়, যে হারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে তাতে বহু ট্রলার মালিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন । অনেকজন ট্রলার বিক্রিও করে দিয়েছে । বেশ কয়েক বছর ধরে মরশুমে ইলিশ ধরার অভিযানে যা খরচ হয় সেই তুলনায় মৎস্যজীবীরা মাছ পাচ্ছেন না ৷ ফলে ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবী উভয়েই ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছে ৷"
ইলিশকে জাল বন্দি করতে মাঝ সমুদ্রে পাড়ি দেবেন মৎস্যজীবীরা আরও পড়ুন :Jamai Sasthi 2022 : জামাইষষ্ঠীর বাজারে হাওড়ায় বিকোচ্ছে বার্মার ইলিশ
ঝিরিঝিরি বৃষ্টি ও পূবালী বাতাস হল ইলিশের আদর্শ উপকূল পরিবেশ । আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসে ইলিশের দল মোহনার দিকে ছুটে আসে । দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার-সহ মৎস্য আধিকারিক (সামুদ্রিক) জয়ন্ত প্রধান জানান, ইতিমধ্যেই মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যাওয়ার জন্য অনুমতি দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে । সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনেই মৎস্যজীবীরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাবে । তবে ইলিশ ধরার জালের ফাঁস 90 মিলিমিটার হতে হবে । 23 সেন্টিমিটারের ছোট মাছ ধরা যাবে না । গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া মৎস্যজীবীদের পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট, লক বুক, জিপিআরএস ডিভাইস নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক । 15 তারিখের আগে কোনও মৎস্যজীবী গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে বেরোচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে বিভিন্ন বন্দরগুলোতে নজরদারি চালানো হচ্ছে । সঠিক সময় যদি রাজ্যে বর্ষা প্রবেশ করে তাহলে ইলিশের সম্ভাবনা প্রবল । আমরা আশা করি এই বছর ভাল ইলিশ ধরতে পারবে মৎস্যজীবীরা । মৎস্য দফতরের পক্ষ থেকে দক্ষিণ 24 পরগনার সকল মৎস্যজীবীদের শুভেচ্ছা রইল ।
আরও পড়ুন :Cultivate Hilsa in fresh water of Ganga : গঙ্গার মিষ্টি জলে ইলিশ চাষের উদ্যোগ মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের
গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে ট্রলার দুর্ঘটনার কথা নতুন নয় ৷ তাই কোনওরকম দুর্ঘটনার হাত থেকে বাঁচাতে মৎস্যজীবীদের সচেতন ও সতর্কতার পাঠ দিচ্ছেন উপকূলরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকরা ৷ ইতিমধ্যেই তাঁরা ট্রলার মালিক ও মৎস্যজীবীদের সঙ্গে এই বিষয়ে বৈঠকও করেছেন ৷
ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী হলদিয়ার প্রধান নাবিক স্বরূপ রতন ঘোড়াই জানান, বর্ষাকালে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় ট্রলার দুর্ঘটনা সম্মুখীন হতে হয় মৎস্যজীবীদের । ট্রলার দুর্ঘটনার কারণে বহু মৎস্যজীবী মারাও যায় । অনেক ক্ষেত্রে ট্রলারগুলিতে লাইফ জ্যাকেট না থাকার কারণে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রলারের মৎস্যজীবীদের বাঁচার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায় । অনেক ট্রলার জিপিআরএস ডিভাইস নিয়ে মাছ ধরতে যায় না । এর ফলে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরার সময় ভারতীয় জলসীমানা লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে । ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর পক্ষ থেকে সকল মৎস্যজীবী ও ট্রলার মালিককে অনুরোধ করেছি যে, মাছ ধরতে যাওয়ার সময় ট্রলারে পর্যাপ্ত পরিমাণে লাইফ জ্যাকেট ও জিপিআরএস ডিভাইস নিয়ে যাওয়ার জন্য ও সেটা অন রাখার জন্য । গভীর সমুদ্রে কোনওরকম দুর্ঘটনার সম্মুখীন হলে খুব দ্রুতই ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হবে ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী ।
আরও পড়ুন :Fishermen get Hilsa in off season : অসময়ে জালে ধরা পড়ল ইলিশ, খুশি মৎস্যজীবীরা