মথুরাপুর, 7 নভেম্বর:আবারও আল-কায়দা (Al-Qaeda) যোগ থাকার অভিযোগে গ্রেফতার রাজ্যের বাসিন্দা ৷ এবারের ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ 24 পরগনার মথুরাপুর (Mathurapur) এলাকায় ৷ ধৃতের (Suspected AQIS member Arrested) নাম মনউদ্দিন খান ওরফে মনিরুদ্দিন ৷ 20 বছরের এই তরুণ কলেজ পড়ুয়া ৷ এলাকায় মেধাবী ছাত্র এবং ভালো ছেলে হিসাবেই এতদিন পরিচিত ছিলেন তিনি ৷ জঙ্গিযোগের অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশের (Kolkata Police) স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (Special Task Force) বা এসটিএফ (STF) ৷ তাদের দাবি, নিষিদ্ধ জঙ্গিগোষ্ঠী আল-কায়দার ভারতীয় শাখা (Al-Qaeda in the Indian Subcontinent) বা আকিস (AQIS)-এর সদস্য সন্দেহে আজিজুল হক নামে এক শিক্ষককে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল ৷ তাঁকে জেরা করেই মনউদ্দিনের সন্ধান মেলে ৷
জেরায় আজিজুল এসটিএফ-কে জানিয়েছেন, মনউদ্দিন তাঁর হাতে নিজের পরিচয়পত্র-সহ বিভিন্ন নথি তুলে দিয়েছিলেন ৷ মনউদ্দিনের দেওয়া এই পরিচয়পত্রের সাহায্যেই জঙ্গিদের সিমকার্ড ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয় ! এছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ায় আল-কায়দার প্রচার ও 'স্লিপার সেল' তৈরিতেও এই ছাত্র জঙ্গি নেতাদের সাহায্য করতেন বলে অভিযোগ ৷
মনউদ্দিনের গ্রেফতারিতে হতবাক এলাকাবাসী ৷ সূত্রের দাবি, এর আগে বাংলাদেশী ব্লগার খুনে অভিযুক্ত ফয়জলকে গ্রেফতার করে কলকাতা-সহ দেশজুড়ে আল-কায়দার নেটওয়ার্ক সম্পর্কে তথ্য পান লালবাজারের গোয়েন্দারা ৷ তাঁকে জেরা করে উত্তরপ্রদেশ থেকে গ্রেফতার করা হয় হসনত নামে আরও এক জঙ্গিকে ৷ এই হসনতের মালদার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় একটি পেনড্রাইভ ৷ আল-কায়দা যে ভারতের বেশ কয়েকজন ভিআইপি-কে খুন করার ও কয়েকটি শহরে বিস্ফোরণের ছক কষেছে, সেই প্রমাণ মিলেছে ওই পেনড্রাইভ থেকে !
আরও পড়ুন:আল কায়দা যোগের অভিযোগে এসটিএফের জালে ডায়মন্ড হারবারের দুই যুবক
এই ঘটনার তদন্তের স্বার্থেই পরবর্তীতে ভোপালের জেল থেকে আরও দুই জঙ্গিকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় ৷ তাঁদের কাছ থেকে মথুরাপুরের বাসিন্দা আজিজুল হকের সন্ধান মেলে ৷ গোয়েন্দাদের হাতে আসা তথ্য বলছে, দক্ষিণ 24 পরগনায় আল-কায়দা স্লিপার সেল তৈরির কাজ শুরু করেছে ! সেই কাজেই যুক্ত ছিলেন আজিজুল ! বাংলাদেশ থেকে আসা জঙ্গিদের ভুয়ো পরিচয়পত্র, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দেওয়া থেকে শুরু করে আজিজুল তাঁদের আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করতেন বলে অভিযোগ ৷
সেই সূত্র ধরেই এসটিএফ জানতে পারে, দক্ষিণ 24 পরগনায় আল-কায়দা নতুন মডিউল তৈরির ছক কষছে ৷ এসটিএফ-এর একটি সূত্র জানিয়েছে, আজিজুল মথুরাপুর অঞ্চলে মূলত আরবি ভাষা পড়াতেন ৷ তাঁর কাছে মূলত বালক-বালিকারাই পড়তে আসত ৷ এছাড়াও, এলাকার কয়েকজন তরুণ ছাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করেন আজিজুল ৷ তাঁদেরও ভাষা শিক্ষা দিতে শুরু করেন তিনি ৷ মথুরাপুরের রানাঘাটা গ্রামের বাসিন্দা মেধাবী ছাত্র মনুউদ্দিন খানের সঙ্গে গত বছর যোগাযোগ করেন আজিজুল ৷ দক্ষিণ বারাসতের একটি কলেজের ইতিহাসের তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া মনউদ্দিনকে নিজের বাড়িতে ডেকে পড়াতে শুরু করেন আজিজুল ৷ পেশায় চালগুঁড়ির ব্যবসায়ী মনউদ্দিনের বাবা মজফ্ফর খান দাবি করেছেন, ছেলে শিক্ষকের কাছে পড়তে যেতেন বলে তাঁরাও কেউ তাঁকে বাধা দেননি ৷ কিন্তু গত প্রায় সাত মাস ধরে আজিজুলের সঙ্গে তাঁর ছেলের যোগাযোগ ছিল না ৷
এসটিএফ-এর আধিকারিকদের মতে, কলকাতা ও তার আশপাশের এলাকায় আকিস নানাভাবে নেটওয়ার্ক তৈরি করছে ৷ আজিজুলের মতো শিক্ষকদের আল-কায়দার বাংলাদেশী শাখার নেতারা এসে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন ও মগজধোলাই করছেন ৷ আবার আজিজুলের মতো শিক্ষকরাই তাঁদের ছাত্রদের মগজধোলাই করছেন ৷ মৌখিকভাবে নাশকতার প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে ! কীভাবে বিস্ফোরক তৈরি করতে হয়, সেই সংক্রান্ত নথি তুলে দেওয়া হচ্ছে ওই ছাত্রদের হাতে !
এদিকে, মনউদ্দিনের গ্রেফতারিতে হতবাক প্রতিবেশীরা ৷ তাঁদের দাবি, এলাকায় ভালো ছেলে হিসাবে পরিচিত ছিলেন এই তরুণ ৷ পড়াশোনায় ভালো ছিলেন ৷ নিয়মিত খেলাধুলো করতেন ৷ সকলের সঙ্গে হেসে কথা বলতেন ৷ সেই ছেলেই যে জড়িয়েছেন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে, একথা মেনে নিতে পারছেন না তাঁরা ৷