ডায়মন্ডহারবার, 12 অগস্ট: দীর্ঘ দু'বছর বাদে বেঞ্চে ছাত্রছাত্রী আর ব্ল্যাকবোর্ডে শিক্ষকের দৃশ্য ফিরে এসেছে ৷ এর মধ্যেই ছন্দপতন ঘটেছে সরিষা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৷ স্কুল ছাত্রছাত্রীদের, বিশেষত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রদের নানাবিধ স্কুল-বিরোধী কার্যকলাপে হয়রান স্কুল কর্তৃপক্ষ ৷ তার মধ্যে স্কুলের মধ্যে নেশা করা, দেওয়ালে গুটখার থুতু ফেলা, ছাত্রীদের বিরক্ত করার মতো গুরুতর অভিযোগ রয়েছে ৷ এর একটি তালিকা প্রকাশ করেন কর্তৃপক্ষ ৷ সেই তালিকায় পড়ুয়াদের অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করার কথাও জানানো হয় (Sarisha High School authority alleges against Government opposition power as letter surfaces in social media in Diamond Harbour) ৷
এ পর্যন্ত বিষয়টি পড়ুয়াদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল ৷ বিপত্তি ঘটল, কর্তৃপক্ষ প্রকাশিত একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির কিছু পড়ুয়ার বিরুদ্ধে 14টি অভিযোগের তালিকা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ায় ৷ তালিকায় জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরীক্ষার খাতায় নোংরা গালিগালাজ লেখা, ক্লাসঘরে মদ্যপান ও তারপর বমি, 'রোমিওর নাটক করা', 25টি পাখার ব্লেড 'পদ্মফুল' করে দেওয়া, বিশেষ কোনও ছাত্রীর জন্য একাদশ শ্রেণির ছাত্র দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাসে গিয়ে বসছে অথবা উলটোটা হচ্ছে ৷ এমনকী তালিকায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে, "যে কোনও দিন যে কোনও ছাত্র নিজেদের মধ্যে মারপিট করে মারা যেতে পারে ৷"
সোশাল মিডিয়ার দৌলতে এই তালিকা এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে ৷ স্বভাবত, এতে স্কুলের সুনাম নষ্ট হচ্ছে ৷ পাশাপাশি এলাকাবাসীর চোখ কপালে উঠেছে । তাদের প্রশ্ন, এটি স্কুল নাকি সমাজ বিরোধীদের আখড়া ?
আরও পড়ুন: শিক্ষকের অভাবে 6 মাস বন্ধ বাঁকুড়ার স্কুল, সমস্যায় পড়ুয়ারা
বর্তমানে সরিষা হাইস্কুলে প্রায় দু'হাজার ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করে । তাই কিছু ছাত্রের জন্য পুরো স্কুলের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে । সরিষা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের মতে সোশাল মিডিয়ায় এই অভিযোগপত্র ভাইরাল করাটা একপ্রকার ষড়যন্ত্র ৷ তিনি একে সরকার বিরোধী কার্যকলাপ হিসেবেই উল্লেখ করছেন ৷ তাঁর বক্তব্য, "কিছু মানুষ বর্তমান সরকারের কর্মপ্রচেষ্টাকে হেয় করতে, বদনাম করতে প্রতি মুহূর্তে উন্মুখ হয়ে থাকে ৷ তাঁরা দেখলেন সন্তান এই অভিযোগপত্র নিয়ে এসেছে ৷ তখন তাঁরা একে ভাইরাল করে দেওয়ার কথা ভাবলেন ৷ এটা সরকারের বিরোধী শক্তিদের কাজ ৷" এর উদ্দেশ্য স্কুলকে ছোট করা ৷ পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব্যবস্থা যতটা সম্ভব ভালো ভাবে করা যায়, সরকার তা সাধ্যমতো চেষ্টা করছে, জানালেন ক্ষুব্ধ প্রধানশিক্ষক ৷
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগপত্র স্কুলের পরিচালন সমিতির সভাপতি অরবিন্দ মণ্ডল জানান, লকডাউনের পর স্কুল খুলতে নিয়ম শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে । স্কুলের একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির বেশকিছু ছাত্রের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ স্কুল কর্তৃপক্ষ । স্কুলের দেওয়ালে গুটখার পিক, স্কুলের মধ্যে দেদার নেশা ৷ শুধু তাই নয়, ভেঙে ফেলা হয় স্কুলের পাখা ৷ ক্লাসের মধ্যেই চলে ব্যাপক মারপিট । আর এ সব কিছু নিয়ে ছাত্রদের শাসন করতে গেলে শিক্ষকদের মারতে আসে ছাত্ররা । শিক্ষকদের তুই-তোকারি করে কথাও বলে পড়ুয়ারা ৷ সভা ডেকে অভিভাবকদের বুঝিয়ে পড়ুয়াদের পথে ফেরাতে পারবে স্কুল কর্তৃপক্ষ ?
আরও পড়ুন: স্কুল চত্বরেই বসে মদ ও জুয়ার আসর ! অবাক কাণ্ড চোপড়ায়