নরেন্দ্রপুর, 25 নভেম্বর:রাস্তার উপর ধ্বস্তাধ্বস্তি চলছে এক পুরুষ ও মহিলার মধ্যে ৷ পুরুষটির হাতে ধারালো কোনও অস্ত্র ৷ সেই অস্ত্র দিয়ে মহিলাটিকে এলোপাথারি কোপাচ্ছে পুরুষটি ৷ মেয়েটি চিৎকার করছেন আর বলছেন, ‘‘দাদা বাঁচাও ৷ ওর হাতের ছুরিটা কেড়ে নাও ৷’’
শুক্রবার সন্ধ্যা ৷ ঘটনাস্থল কলকাতার শহরতলির গড়িয়া স্টেশন সংলগ্ন নতুনপাড়া ৷ ভরসন্ধেয় এমন ঘটনা ঘটতে দেখে রাস্তায় তখন যে কয়েকজন লোক ছিলেন তাঁদের কাউকে নির্বিকার হয়ে চলে যেতে দেখা গেল ৷ কেউ আবার এগিয়ে এলেন সাহায্য করতে ৷ আর স্থানীয়দের সেই সাহায্যের জন্যই আপাতত বছর সাতাশের ওই তরুণী কলকাতার বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷
ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, তা নরেন্দ্রপুর থানা এলাকার মধ্যে পড়ে ৷ স্থানীয়রাই পুলিশকে খবর দেন ৷ পুলিশ এসে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে ৷ প্রথমে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় সোনারপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ৷ সেখানেই তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়৷ পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৷ আপাতত তিনি সেখানে চিকিৎসাধীন ৷ তবে তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক ৷
তদন্তে নেমে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে যে ছেলেটির সঙ্গে ওই তরুণী লিভ-ইন করতেন ৷ যদিও এলাকায় তাঁরা স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ছিলেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ জানিয়েছেন ৷ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত পলাতক ৷ পুলিশ আপাতত তাঁকে খুঁজছে ৷
এলাকার বাসিন্দা সুজাতা ভদ্র বলেন, ‘‘তখন সবজি কাটছিলাম ঘরে ৷ হঠাৎই ছুটে এলেন একটি মেয়ে ৷ গলা ও হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে ৷ বলল, আমাকে বাঁচাও ৷ আমার স্বামী কুপিয়ে মেরে দিচ্ছে ৷ রক্ত দেখলে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি ৷ তাই আমার মেয়ে সাহায্য় করে তাঁকে ৷’’ ওই এলাকার আরেক বাসিন্দা বাপ্পা দে-র কথায়, ‘‘পৌনে সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে ৷ পরিচিত নয় ৷ ভাড়াটিয়া শুনেছি ৷ ছেলেটির নানা মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক আছে বলে শুনেছি ৷’’
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রাথমিক তদন্তেও তারা অভিযুক্তের একাধিক মহিলার সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছে ৷ তাছাড়া ওই যুবক ও তরুণীর মধ্যে প্রায়ই অশান্তি হত ৷ পুলিশের অনুমান, বাবুর একাধিক মহিলা সঙ্গ নিয়েই ঝামেলা বাঁধত দু’জনের মধ্যে ৷ শুক্রবার সন্ধ্যায় তা চরমে ওঠে৷ যার জেরে আক্রান্ত হন মিতা ৷
পুলিশ এখনও ওই দু’জনের সঠিক পরিচয় জানতে পারেনি বলে খবর ৷ সেই বিষয়টি তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গিয়েছে ৷ মেয়েটির বাড়ি কোথায়, তাঁর বাড়িতে কে কে আছেন, ছেলেটিই বা কোন এলাকার বাসিন্দা, তাঁর পরিবারে কে কে আছেন, পুলিশ আপাতত এই সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে ৷ মেয়েটি কিছুটা সুস্থ হলে বা অভিযুক্ত ধরা পড়লে এই প্রশ্নগুলির উত্তর মিলবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা ৷
তবে সাম্প্রতিক কালে লিভ-ইন সম্পর্কের টানাপোড়েনের জেরে রক্তাক্ত পরিণতির একাধিক খবর সামনে এসেছে ৷ কখনও লিভ-ইন পার্টনারকে খুন করে টুকরো টুকরো করে ফ্রিজে রেখে দেওয়া বা খুন করে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ৷ কিন্তু প্রকাশ্যে এভাবে প্রকাশ্যে কোপানোর ছবি সচরাচর সামনে আসে না ৷ বেশ কয়েক বছর আগে প্রেমিকাকে রাস্তায় কোপানোর দৃশ্য সামনে এসেছিল মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে ৷ সেই ঘটনায় অভিযুক্তকে কয়েকমাস আগে ফাঁসির সাজা দিয়েছে আদালত ৷
অন্যদিকে সম্প্রতি দিল্লিতে সামান্য কিছু টাকার জন্য এক বন্ধুকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে এক তরুণের বিরুদ্ধে ৷ সেই ভিডিয়োতে দেখা যায় যে কোপানো পর অভিযুক্ত আনন্দে নাচছে ৷ গড়িয়ার ঘটনাতেও তেমনই নৃশংসতা প্রকাশ্যে এসেছে ৷ যে ভিডিয়োটি সামনে এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে যে ছেলেটি এলোপাথারি কোপাচ্ছে ৷ হাতের অস্ত্রটিকে আরও ধারালো করতে রাস্তার পাঁচিলে ঘষতেও দেখা যাচ্ছে তাকে ৷ যদিও ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি ইটিভি ভারত ৷
আরও পড়ুন:
- খুন করে সঙ্গিনীর দেহ সেপটিক ট্যাংকে রেখে অন্য মেয়েকে বিয়ে যুবকের
- আত্মঘাতী হয়েছেন সরস্বতী, মুম্বইয়ে যুবতীর দেহের টুকরো উদ্ধারে দাবি অভিযুক্তের
- মহিলাকে শ্বাসরোধ করে খুন ! পলাতক লিভ-ইন পার্টনার