ভাঙড় ও চোপড়ায় অশান্তির ঘটনা নিয়ে বক্তব্য মমতার ডায়মন্ডহারবার, 15 জুন: পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্যজুড়ে চলা হিংসার ঘটনার যাবতীয় দায় বিরোধীদের কাঁধে চাপালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ ভাঙড়ের অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জন্য তিনি আইএসএফ-এর ঘাড়ে দায় ঠেলেছেন ৷ নওশাদ সিদ্দিকীর নাম না করলেও মুখ্যমন্ত্রী ইঙ্গিতে তাঁকেই নিশানা করে দাবি করেছেন যে, আইএসএফ বিধায়কই প্ররোচনা দিয়ে লুঠতরাজ চালিয়েছে ৷
মমতার দাবি, ভাঙড়ে তৃণমূল কংগ্রেস যেটা করেছে, সেটা শুধুই প্রতিরোধ-প্রতিবাদ ৷ চোপড়াতেও বোমা-গুলির তাণ্ডবে প্রাণহানির ঘটনায় নিজের দলকে ক্লিনচিট দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ দুই বাম-কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যুর ঘটনা তাঁর ভাষায় 'নিজেদের মধ্যে ঝামেলা' ৷ মুখ্যমন্ত্রীর যুক্তি, পঞ্চায়েতে পারিবারিক অশান্তির প্রভাবও নির্বাচনে পড়ে ৷ বাম আমলের পঞ্চায়েত নির্বাচনের রক্তক্ষয়ের প্রসঙ্গ টেনে মমতা আজ বলেছেন, মাত্র তিন থেকে চারটে অঞ্চলে গন্ডগোল হয়েছে । বাংলাকে বদনাম করতে বিরোধীরা অশান্তির ঘটনাকে তুলে ধরে ইস্যু করছে ৷
প্রসঙ্গত, আগামিকাল তৃণমূলের নবজোয়ার কর্মসূচি শেষ হচ্ছে । নবজোয়ার কর্মসূচির শেষবেলায় কাকদ্বীপে একই মঞ্চে দেখা যাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে । আজ সেই উপলক্ষেই ডায়মন্ডহারবারে পৌঁছেছেন মুখ্যমন্ত্রী । সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন তিনি ।
এ দিন ঠিক কী বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ! মনোনয়নের শেষবেলায় অশান্তি এবং জেলায় জেলায় বিভিন্ন প্রান্তে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রায় 74 হাজার বুথ, সেখানে মাত্র তিন থেকে চারটে অঞ্চলে গন্ডগোল হয়েছে । সেটাও স্থানীয় ব্যাপার । তৃণমূল কংগ্রেস কোনওভাবেই এর সঙ্গে যুক্ত নয় ।
আরও পড়ুন:মনোনয়নের শেষদিনেও রণক্ষেত্র ভাঙড়, গুলিতে মৃত এক আইএসএফ কর্মী
মমতার কথায়, "আমাদের দলকে কঠোরভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, যে যার মতো মনোনয়ন দেবে, কোনওভাবেই আটকানো যাবে না । আর সে কারণেই এ বার লক্ষাধিক মনোনয়ন জমা পড়েছে । এমনটা কোনও রাজ্যে কোনও দিন হয়নি । আর একাংশ বাংলাকে বদনাম করতে চাইছে ৷ সেই জায়গা থেকেই অশান্তির ঘটনাকে তুলে ধরে ইস্যু করছে ।"
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, পঞ্চায়েত ভোটে অশান্তি নতুন কোনও বিষয় নয় । 2003 সালের সিপিএমের আমলে পঞ্চায়েত ভোটের দিন 36 জন মারা গিয়েছিল । 2008 সালেও মৃত্যুর সংখ্যা এর কাছাকাছি ছিল । 2013 সালে মীরা পাণ্ডের সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে আসা হয়েছিল । কিন্তু সে সময়ও মৃত্যু হয়েছিল 39 জনের । মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, "পঞ্চায়েত নির্বাচনের সমস্যা হল এত নিচু স্তরে একই পরিবারের একাধিক জন দাঁড়িয়ে যায় । ফলে পারিবারিক অশান্তির প্রভাব নির্বাচনে দেখা যায় ।"
ভাঙড়ের হিংসা নিয়ে দায় ঝেড়ে মুখ্যমন্ত্রী এই ঘটনায় আইএসএফকে কাঠগড়ায় তুলেছেন ৷ নাম না করে নওশাদ সিদ্দিকীর দিকেই ইঙ্গিত করেছেন তিনি । মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভাঙড়ের ঘটনায় যারা বিরোধীতে আছে এ বার জিতেছে, তারাই প্রথম যা করার করেছে । সেই প্রথম গাড়ি ভাঙচুর করেছে । মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছেন, "ও (নওশাদ) প্ররোচিত ক'রে, মানুষকে বিপথে পরিচালিত ক'রে ভাঙচুর লুঠতরাজ করেছে । ফলে কাল একটা রিটালিয়েট হয়েছে । ফলে কাল আমাদের পক্ষ থেকে একটা প্রতিবাদ হয়েছে ।" আজ ভাঙড়ের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, "আজকের ঘটনা সম্পর্কে আমি জানি না । আমি রাস্তায় রয়েছি । তবে প্রশাসনকে বলেছি কঠোর ব্যবস্থা নিতে ।"
আরও পড়ুন:চোপড়ায় বোমা-গুলির তাণ্ডবে ধুন্ধুমার, কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে কমিশনে যাচ্ছে বিরোধীরা
ভাঙড়ের পাশাপাশি মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় উত্তর দিনাজপুরের চোপড়াও ৷ গুলি-বোমার তাণ্ডবে বাম ও কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয় ৷ এই ঘটনায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল উঠলেও তা মানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রী ৷ তাঁর দাবি, চোপড়ার ঘটনায় তৃণমূল যুক্ত নয় ৷ চোপড়ার মৃত্যুর পেছনে রয়েছে সিপিএম ।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ইসলামপুর এবং চোপড়ায় যে ঘটনা ঘটেছে এর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই । যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের দলের তরফে টিকিট দেওয়া হয়নি বলে জানান তিনি । মমতার দাবি, গতকাল পর্যন্ত তাঁরা দলের কাছে টিকিট চেয়েছে । দল তাঁদের কাজে খুশি নয় । যাঁরা মানুষের কাজ ভালো করে করেনি, তাঁদের এ বার দল টিকিট দেয়নি । মুখ্যমন্ত্রীর মতে, "চোপড়ার ঘটনাটা নিজেদের মধ্যে ঝামেলা । আমি পুলিশকে বলে দিয়েছি কঠোর ব্যবস্থা নিতে ।"