কলকাতা, 21 ডিসেম্বর: উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) কায়দায় গঙ্গা আরতির (Ganga Aarati) ব্যবস্থার জন্য আগেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী । শোনা যাচ্ছে বাবুঘাটে পাকাপাকি হবে সেই ব্যবস্থা হতে চলেছে ৷ তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও হয়নি । বুধবার নবান্ন সভাঘরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) জানিয়ে দিলেন, গঙ্গা এবং সাগরের সঙ্গমে এবার মেলার সময় সাগর আরতি (Sagar Aarati) হবে । তাও একদিনের জন্য নয়, হবে তিন দিন । ১২ থেকে ১৪ জানুয়ারি, এই তিন দিন রাজ্য সরকারের তরফ থেকে এই সাগর আরতির ব্যবস্থা করা হয়েছে ।
প্রসঙ্গত, এদিন নবান্নে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর গঙ্গাসাগর মেলার (Gangasagar Mela) প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী । সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন, এবছরও রাজ্য সরকারের উদ্যোগে সাগর দ্বীপে মেলার আয়োজন করা হয়েছে । তাঁর আশা, করোনা কাল কাটিয়ে এবছর পুণ্যার্থীদের রেকর্ড ভিড় হবে সাগরদ্বীপে । তিনি জানান, 8 থেকে 17 জানুয়ারি এবছর গঙ্গাসাগর মেলা হবে ।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘গঙ্গাসাগর মেলা আমাদের গর্ব । করোনাকালে (Covid Pandemic) দু’বছর সমস্যা থাকলেও গঙ্গাসাগর মেলা হয়েছে । করোনাকে জয় করে এবছর আরও ভালোভাবে এই মেলা সম্পন্ন করার চেষ্টা হচ্ছে । এই সময় জেলা পরিষদ থেকে বিমা করা থাকে, কেউ মারা গেলেই পরিবারকে 5 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ।
তিনি আরও জানান, গত বছর মাঝেরহাট ব্রিজ চালু হওয়ার ফলে এবছর সাগরে যাতায়াত সুগম হয়েছে । পুণ্যার্থীদের জন্য 2250 টি সরকারি বাস, 500 বেসরকারি বাস, 4 টি বার্চ, 14 টি ভেসেল, 100 টি লঞ্চ এবং 21 টি জেটি ব্যবহার করা হবে । এছাড়া রেলকেও অনুরোধ করা হয়েছে মেলার দিনগুলোতে অতিরিক্ত ট্রেন চালাতে । বার্চ, ভেসেল ও লঞ্চে জিপিএস ট্র্যাকিং ও করা হয়েছে । এছাড়া আপদকালীন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মেগা কন্ট্রোলরুম তৈরি করা হয়েছে ।
তিনি জানান, ট্রাফিক ব্যবস্থাকে মনিটরিং করার জন্য 11 টি বাফার জোন এবং 15 টি পার্কিং জোন তৈরি করা হয়েছে । গত বছরের মতোই গঙ্গাসাগরে যাওয়া আসার জন্য সিজন টিকিটের ব্যবস্থা করা হয়েছে ৷ প্রত্যেক বাসেই একজন করে সাগর বন্ধু থাকবেন ।
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, এবছর মেলা উপলক্ষ্যে সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন জায়গায় ক্যাম্প হবে । পুলিশের তরফ থেকেও আলাদা করে ক্যাম্প করা হবে, আইএনসিএ ডিপার্টমেন্ট, ট্যুরিজম ডিপার্টমেন্ট প্রতিবছরের মতো গেট তৈরির দায়িত্বে থাকবে । এবছর কচুবেড়িয়া এবং লট এইট-এর মধ্যে খুব ভালোভাবে ড্রেজিং করা হয়েছে । যাতে এখান থেকে 18-20 ঘণ্টায় কারগো, প্যাসেঞ্জার ভেসেল যেতে পারে । একইভাবে চিমাগুলি ও বেনুবনের মধ্যেও ড্রেজিং করা হয়েছে । মেলার জন্য নেভিগেশনের জন্য আলাদা করে চ্যানেল তৈরি করা হয়েছে ।
সরকারের তরফ থেকে ক্রাউড ম্যানেজমেন্টের জন্য কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাও এদিন জানার মুখ্যমন্ত্রী । তাঁর বক্তব্য, ক্রাউড ম্যানেজমেন্টের জন্য 51 কিলোমিটার মেটাল ও টেম্পোরারি ব্যারিকেড ও 1150 টি সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো হয়েছে । এছাড়া ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি এবং জিপিএসের মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট করা হবে । কোনও অ্যাক্সিডেন্ট যাতে না হয়, তার জন্য 2100 সিভিল ডিভেন্স এবং এজেন্সির কর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছে । মেলার কারণে 10টি টেম্পোরারি ফায়ার স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে । 30 টা দমকলের ব্যবস্থাও সেখানে থাকবে । এছাড়া ভারত সেবাশ্রম-সহ 142 টি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের তরফ থেকে প্রায় ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবী উপস্থিত থাকবেন । প্রত্যেক বছর এঁরা তীর্থযাত্রীদের হেল্প করেন । এ বছরও তাঁরা মেলা প্রাঙ্গণে থাকবেন ।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, মেলা প্রাঙ্গণ পরিষ্কার রাখার জন্য 10 হাজারের বেশি টয়লেট এবং 60টি সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে । বিচ পরিষ্কার রাখার জন্য তিন হাজার ভলান্টিয়ার্স থাকছেন । সরকারের লক্ষ্য ইকো ফ্রেন্ডলি গঙ্গাসাগর মেলা । পুরো মেলাকে প্লাস্টিক মুক্ত করা হচ্ছে । চিকিৎসার জন্য শুধু মেলার ক’দিন 300 বেডের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে । সাগর, নামখানা, চেমাগুড়ি লটআট যেখান থেকে পুণ্যার্থীরা যাতায়াত করবেন সেখানেও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করা হচ্ছে । জায়গায় জায়গায় ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট ও ফাস্ট এডের ব্যবস্থা থাকছে । স্পেশালিস্ট ডাক্তার, নার্স, প্যারামেডিকেল কর্মী সর্বত্র থাকবেন । এছাড়া একটি এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, চারটি ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স এবং 100 টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা থাকছে । ক্রিটিক্যাল রোগীদের জন্য গ্রিন করিডোরের ব্যবস্থা থাকছে । এছাড়া 24 ঘণ্টা পোস্টমর্টেম ফেসিলিটিও থাকছে ।
১২-১৩-১৪ জানুয়ারি সাগর আরতির ব্যবস্থা করা হয়েছে । এছাড়া বাংলার দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, তারাপীঠ, তারকেশ্বর, জহুরা কালীবাড়ির আদলে মন্দির করা হচ্ছে । যাতে মেলায় আগত মানুষজন এই বিখ্যাত মন্দিরগুলির পরিবেশকেও দেখতে ৷ এবার গঙ্গাসাগর মেলায় তীর্থযাত্রীদের জন্য ব্যবস্থা থাকছে বিশেষ ছবি-সহ সার্টিফিকেটের । যেখানে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে স্পেশাল থ্যাঙ্কস জানানো হবে । এছাড়া ই-প্রসাদ, ই-দর্শন ও ই-স্নানের ব্যবস্থা তো থাকছেই ।
আরও পড়ুন:ফের মুখোমুখি মোদি-মমতা, গঙ্গা পরিষদের বৈঠকে থাকার কথা জানালেন মুখ্যমন্ত্রী