অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় খুশি সকলেই সোনারপুর, 8 জানুয়ারি: কম খরচে সফলভাবে যকৃৎ প্রতিস্থাপন (Liver Transplant) ৷ তাও আবার কলকাতার কোনও নামজাদা বা সরকারি হাসপাতালে নয় ৷ এই সাফল্য অর্জন করেছে জেলার একটি বেসরকারি হাসপাতাল ৷ সাতমাসের ব্যবধানে সিরোসিস অফ লিভারে (Cirrhosis of Liver) আক্রান্ত দু'জন রোগীর সফল অস্ত্রোপচার করেছেন সোনারপুরের (Sonarpur) 'ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ লিভার অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ সায়েন্সেস' (Indian Institute of Liver and Digestive Sciences) বা আইআইএলডিএসের (IILDS) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ৷
মারণ অসুখে আক্রান্ত হয়েছিলেন জলপাইগুড়ির লাটাগুড়ির বাসিন্দা সুজয় দেব ৷ চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, বাঁচতে হলে যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই ৷ কিন্তু, ভারতের যেকোনও প্রান্তে এই ধরনের অস্ত্রোপচার করাতে অন্তত 24 থেকে 25 লক্ষ টাকা খরচ হয় ৷ তাছাড়া, যথাযথ ডোনার পাওয়াটাও একটা বিরাট ঝক্কির ব্যাপার ৷ কিন্তু, সুজয়কে বাঁচাতে যকৃতের একটি অংশ দান করতে রাজি হয়ে যান তাঁর স্ত্রী সুস্মিতা ৷ ইতিমধ্যে, সোনারপুরের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের খবর পায় দেব পরিবার ৷ সুজয় ঠিক করেন, এই হাসপাতালেই নিজের চিকিৎসা করাবেন ৷ সেই মতোই করা হয় সমস্ত ব্যবস্থা ৷
আরও পড়ুন:15 দিন শ্বাসনালীতে আটকে জোঁক ! উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে বিরল অস্ত্রোপচারে ফিরল জীবন
গত বছরের 18 মে সুজয়ের যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা হয় ৷ বর্তমান তিনি ও তাঁর স্ত্রী দু'জনই ভালো আছেন ৷ প্রসঙ্গত, এই হাসপাতালে সুজয়ই প্রথম রোগী, যাঁর যকৃৎ প্রতিস্থাপন করা হল ৷ পরবর্তীতে সুজয়েরই প্রতিবেশী নকুল দেবেরও সফলভাবে যকৃৎ প্রতিস্থাপন করেন এই হাসপাতালের চিকিৎসকরা ৷ নকুলও একই অসুখে আক্রান্ত ছিলেন ৷ তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয় গত 22 ডিসেম্বর ৷ এখন ভালো আছেন তিনিও ৷ এই দু'টি অস্ত্রোপচারে খরচ হয় যথাক্রমে 13 এবং 14 লক্ষ টাকা ৷ যা অন্য়ান্য যেকোনও হাসপাতালের তুলনায় অনেকটাই কম ৷
যেসব চিকিৎসকরা এই অস্ত্রপচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তাঁরা হলেন, বরুণ নাথ, সুপর্ণা পাল, কল্যাণ বসু, অশোকানন্দ কোঙার, শৌভিক মিত্র, দীপঙ্কর মন্ডল, অরিজিৎ সামন্ত, তাপস ঘোষ এবং অনুসূয়া বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এই বিষয়ে হাসপাতালের এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর পার্থসারথি মুখোপাধ্য়ায় বলেন, "যকৃৎ প্রতিস্থাপন একটি জটিল অস্ত্রোপচার ৷ এই অস্ত্রোপচারের আগে অনেকগুলি বিষয় মাথায় রাখতে হয় ৷ প্রথমত, যিনি ডোনার তাঁর বয়স হতে হয় 20 থেকে 55 বছরের মধ্যে ৷ সেইসঙ্গে দেখতে হয়, তাঁর কোনও শারীরিক সমস্যা আছে কিনা ৷ আর থাকলেও তিনি যদি তাঁর যকৃতের অংশ দান করেন, তাহলে গ্রহিতার কোনও শারীরিক ক্ষতি হবে কিনা ৷ দ্বিতীয়ত, দাতা এবং গ্রহিতার রক্তের গ্রুপ এক হলে ভালো হয় ৷"
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চায়, এই বিষয়ে মানুষ আরও সচেতন হোক ৷ তাহলে হয়তো অনেক রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে ৷ এদিকে, অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে খুশি সুজয় ৷ স্বামীকে সুস্থ দেখে হাসি ফুটেছে তাঁর স্ত্রী এবং এক্ষেত্রে অবশ্য তাঁর জীবনদাত্রী সুস্মিতার মুখেও ৷ এই দম্পতিও চায়, যকৃৎ প্রতিস্থাপন নিয়ে আমজনতার মধ্যে আরও বাড়ুক সচেতনতা ও আগ্রহ ৷