আজও রাতের অন্ধকারে জেগে ওঠে শ্মশান, বলছে জনশ্রুতি বিষ্ণুপুর (দক্ষিণ 24 পরগনা), 3 নভেম্বর: আদিগঙ্গার পাড়ে কয়েকশো বছরের প্রাচীন মন্দিরবাজারের দক্ষিণ বিষ্ণুপুর শ্মশান । এই শ্মশানেই আগে ভিড় জমাতেন তান্ত্রিক ও সাধকরা । শবসাধনায় বসতেন অনেকেই । এখনও শ্মশানে ঢুকলে গা ছমছমে পরিবেশ । স্থানীয়দের বিশ্বাস, তান্ত্রিকদের সাধনার জোরে আজও রাতের অন্ধকারে জেগে ওঠে শ্মশান । ঘোরাফেরা করে অপঘাতে মৃতদের আত্মা ।
বছর আগে এই শ্মশান লাগোয়া জঙ্গলেই টালির ছাউনির নীচে কালী পুজো শুরু করেছিলেন তান্ত্রিক মণিলাল চক্রবর্তী । 108টি নরমুণ্ড দিয়ে চলত তন্ত্রমতে দেবীর উপাসনা । সেই থেকেই শ্মশানে পূজিত হয়ে আসছেন মা করুণাময়ী কালী । শ্যামাকালী পুজোর দিন আজও এলাকার হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান এই মন্দিরে । স্থানয়ীদের মুখে মুখে প্রচলিত আছে, তন্ত্রের দীক্ষা নিয়ে শ্মশানে সাধনা শুরু করেছিলেন ব্রাহ্মণ যুবক মণিলাল ।
কালীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে শ্মশান লাগোয়া জঙ্গলের মধ্যে পুজো শুরু করেন তিনি । দেবী নিত্যপূজার ইচ্ছা প্রকাশ করলে পাকাপাকিভাবে তৈরি করা হয় মন্দির । দেবী মূর্তির পিছনে বসানো হয় 108টি নরমুণ্ড । সামনে পঞ্চমুণ্ডির আসন । এখানে তন্ত্রমতে দেবীকে পুজো দেওয়া হলেও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ বলি । কালীপুজোর দিন মদ, কাঁচা মাংস ও ছোলা দিয়ে পুজো করা হয় ডাকিনী-যোগিনীকে । দেওয়া হয় শিয়াল ভোগও । গভীর রাতে মন্দিরের সেবাইত শ্মশান জাগানোর খেলায় মেতে ওঠেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে ।
মণিলালের মৃত্যুর পর থেকে তাঁর পুত্র সত্তরোর্ধ্ব শ্যামল চক্রবর্তী মন্দিরের দায়িত্ব সামলে আসছেন । তিনিই এখন প্রধান সেবাইত । শ্যামলবাবু বলেন, "বাবার মৃত্যুর পর কাকা ফণীভূষণ চক্রবর্তীর কাছ থেকে তন্ত্রের শিক্ষা নিতে থাকি । তাঁরই হাত ধরে গুপ্তবিদ্যা নিয়ে নাড়াচাড়া শুরু হয় । পরে করুণাময়ী মন্দিরে মায়ের নিত্য পূজা শুরু করি ।"
আরও পড়ুন: দ্বীপ গড়ে ওঠার পর থেকেই সাগরের অধিষ্ঠাত্রী তিনি, জানুন সেই আদি কালী মন্দিরের কথা