সাগর, 3 জুন : ঘূর্ণিঝড় যশ ও কোটালের তাণ্ডবের পর প্লাবিত ঘোড়ামারা দ্বীপ ৷ ভিটে মাটি, চাষের জমি, শেষ সহায় সম্বল সব হারিয়ে দ্বীপ ছাড়ছেন বহু মানুষ ৷ অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের মুখে দাঁড়িয়ে সরকারি সাহায্যের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তাঁরা ৷
তিন দিকে নদী আর একদিকে সমুদ্র । মাঝখানে জেগে আছে দক্ষিণ 24 পরগনার সাগর ব্লকের ছোট্ট দ্বীপ ঘোড়ামারা । প্রতিনিয়ত ঢেউয়ের ধাক্কায় ভাঙতে ভাঙতে ছোট হয়ে আসছে এই দ্বীপ । ঘোড়ামারার চারদিকে রয়েছে বটতলা নদী, হুগলি নদী, মুড়িগঙ্গা নদী ও বঙ্গোপসাগর । বাঁধ ভাঙার আতঙ্ক কখনওই পিছু ছাড়েনি দ্বীপের বাসিন্দাদের । প্রতিদিন নদী আর সমুদ্র দ্বীপটিকে যেন গিলে খাচ্ছে । বিগত কয়েকবছর ধরেই দ্বীপে ব্যাপক আকারে শুরু হয়েছে ভাঙন । ইতিমধ্যেই নদীর জলে তলিয়ে গিয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণপুর, বাগপাড়া, বৈষ্ণবপাড়া এবং খাসিমারার একাংশ । 2010 সাল থেকেই ভাঙন ব্যাপক আকার ধারণ করে । এখন এই দ্বীপে প্রায় 5 হাজার 800 মানুষের বসবাস । এঁদের মধ্যে 3 হাজার ভোটার । একান্ত নিরুপায় হয়ে যাঁরা এই দ্বীপে রয়ে গিয়েছেন তাঁদের অধিকাংশেরই ধান ও পান চাষ করাই মূল জীবিকা । বাকি অনেকেই মৎস্যজীবী এবং ভিনরাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন । মূলত ভাঙন আর দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করটা একপ্রকার গা-সওয়া হয়ে গিয়েছে ঘোড়ামারার বাসিন্দাদের । কিন্তু আয়লা, বুলবুল, আমফানের মতো ঘূর্ণিঝড় এসে বারবার তাণ্ডব চালিয়েছে এই দ্বীপে । তবে সম্প্রতি যশ ও পূর্ণিমার কোটালের জলোচ্ছ্বাসের জেরে প্লাবিত হয় গোটা দ্বীপটাই । যশ আসার পর বেশ কিছুদিন কেটে গেলেও এখনও অনেক জায়গাই জলমগ্ন । ভিটে মাটি, সারা বছরের সঞ্চয়, গোলা ভরা ধান সব ভেসে গিয়েছে নোনাজলে । এখনও কিছু জায়গা জলমগ্ন, এতগুলো মানুষ থাকবেন কোথায় ! আর খাবেনই বা কি ! ফলে বাধ্য হয়েই দ্বীপ ছাড়তে শুরু করেছেন বাসিন্দারা ৷
প্রকৃতির রুদ্র রূপে বিঘের পর বিঘে চাষ জমি আর কয়েক হাজার মানুষের বাসস্থান এক লহমায় তছনছ হয়ে গিয়েছে ৷ গ্রামগুলিতে যেন শ্মশানের শূন্যতা । দ্বীপের সিংহভাগ মানুষকে আগেই সরিয়ে আনা হয়েছিল নিরাপদ আশ্রয়ে । কিন্তু কিছু মানুষ প্রাণের মায়া ত্যাগ করেও ভিটেমাটি আগলে পড়েছিলেন দ্বীপে । ক্রমশ দ্বীপ ডুবতে শুরু করায় তাঁরাও আশ্রয় নেন স্কুলবাড়িতে । অনেকেই শেষ সম্বল এবং গবাদিপশু নিয়ে নৌকায় চড়ে এক প্রকার বাধ্য হয়েই দ্বীপ ছাড়ছেন ৷ এখনও দ্বীপের মন্দিরতলা, খাসিমারা, হাটখোলা, চুনপুরি, বাগপাড়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন ।
আরও পড়ুন:আলাপনকে শোকজ আইন সম্মত নয়, তবে মামলা করতে পারত কেন্দ্র