ক্যানিং, 28 সেপ্টেম্বর : জেলার অন্যতম বনেদি বাড়ির পুজো হিসেবে পরিচিত ক্যানিংয়ের ভট্টাচার্য বাড়ির দুর্গাপুজো । অন্যান্য বনেদি বাড়ির তুলনায় এই ভট্টাচার্য বাড়ির পুজোর বিশেষত্ব সম্পূর্ণ আলাদা । কারণ এখানে দেবী দুর্গা পূজিত হন পোড়া মুখ নিয়েই । দেবীর সারা শরীরও ঝলসানো তাম্র বর্ণের । এছাড়াও এখানে দেবী দুর্গার ডানদিকের পরিবর্তে বাঁদিকে থাকেন গণেশ ।
ক্যানিংয়ের এই বনেদি বাড়ির দুর্গা পূজিত হন পোড়ামুখে
ভট্টাচার্য বাড়িতে দেবী দুর্গার মন্দিরের পাশে ছিল দেবী মনসার মন্দির । পুরোহিত মহাশয় মনসা পুজো করে দুর্গাপুজো করতে এলে একটি কাক মনসা মন্দিরের ঘি এর প্রদীপের পলতে নিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় দুর্গা মন্দিরের শনের চালে সেটি পড়ে যায় ।
পরিবারের পুজোর ইতিহাস বহু প্রাচীন আমলের ৷ পূর্ববঙ্গের ঢাকার বিক্রমপুর বাইনখাঁড়া গ্রামে 434 বছর আগে শুরু হয়েছিল এই পুজো । পুজোর জৌলুস কমলেও, এখনো তার বনেদিয়ানাতেই সে শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার । 434 বছর আগে বাংলাদেশে এই ভট্টাচার্যদের বংশধররা শুরু করেছিলেন মা দুর্গার পূজা । মূলত জমিদার বাড়ির শোভা ও আভিজাত্য প্রদর্শনের জন্য শুরু হয়েছিল দেবী দুর্গার আরাধনা । কিন্তু পূজা শুরুর বেশ কয়েক বছরের মধ্যেই এই ভট্টাচার্য বাড়িতে ঘটে দুর্ঘটনা । ভট্টাচার্য বাড়িতে দেবী দুর্গার মন্দিরের পাশে ছিল দেবী মনসার মন্দির । পুরোহিত মহাশয় মনসা পুজো করে দুর্গাপুজো করতে এলে একটি কাক মনসা মন্দিরের ঘি এর প্রদীপের পলতে নিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় দুর্গা মন্দিরের শনের চালে সেটি পড়ে যায় । আর তাতেই পুড়ে যায় দুর্গা মন্দির ও প্রতিমা । এরপর এই বাড়ির মানুষজন ভাবেন দেবী দুর্গা বোধহয় তাদের পুজো আর চাইছেন না । সেই মতো পুজো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা । এমন অবস্থায় নাকি স্বপ্নাদেশ পান এই পরিবারের তৎকালীন গৃহকর্তা রামকান্ত ভট্টাচার্য । দেবী দুর্গা স্বপ্ন দেন, তাঁর পুজো যেন কোনওভাবেই বন্ধ না হয়, তার ওই পোড়া রূপেই যেন তাঁকে পুজো করা হয় । এমন স্বপ্ন পাওয়ার পর থেকে আবার শুরু হয় এই বাড়ির দুর্গাপুজা । কিন্তু আজও দেবীর সেই পোড়া মুখ ও ঝলসানো শরীর এর মূর্তিতেই বছরের পর বছর চলে আসছে এই দুর্গাপুজো ।
প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গাতে বড় বাজেটের পুজো প্যান্ডেলে যেমন চোখে পড়ার মতন ভিড় দেখা যায়৷ ঠিক তেমনি দূর থেকে এই ভট্টাচার্য বাড়ির ঠাকুর দেখতে আসেন দর্শনার্থীরা । বছরের অন্যদিনে কাজের জন্য পরিবারের সদস্যরা বাইরে থাকলে ও পুজোর দিন সবাই বাড়িতে এক সঙ্গে কাটান । পরিবারের বড়রা যেমন পুজো উপলক্ষে এক জায়গাতে হয়, ঠিক তেমনি ছোটরাও খুব আনন্দ করে । ক্যানিংয়ের পুজোগুলোর মধ্যে ভট্টাচার্য বাড়ির পুজো সেরার শিরোপার দাবি রাখে ।