ডায়মন্ড হারবার, 28 ডিসেম্বর: শীতের মরশুমে ভ্রমণপিপাসু বাঙালির অন্যতম পিকনিক ডেস্টিনেশনের লিস্টে থাকে হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত ডায়মন্ড হারবারের ঐতিহ্যবাহী কেল্লা ৷ কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পর্তুগিজদের তৈরি এই কেল্লা ধীরে ধীরে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে । শুধু থেকে গিয়েছে পিকনিক স্পটের নাম, 'পুরনো কেল্লা পিকনিক স্পট'। ডায়মন্ড হারবার শহর ছাড়িয়ে পুরনো কেল্লা পিকনিক মাঠটি রয়েছে ।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, পর্তুগিজ জলদস্যুরা বাণিজ্যের নাম করে নদীপথে বাণিজ্য জাহাজে লুঠপাট চালানোর জন্য এই কেল্লা ব্যবহার করত ৷ তৎকালীন হুগলি নদী লাগোয়া হাজিপুরের পূর্ব তীরের খাঁড়িতে ভাটার সময় সকালে ও বিকেলে সূর্য কিরণ প্রতিফলিত হয়ে ফুটে উঠত ধবধবে সাদা নুন ৷ মাঝ নদী থেকে মনে হত উজ্জ্বল হীরক খন্ড ৷ এই দৃশ্য দেখে পর্তুগীজ বণিকরা হাজিপুরকে 'ডায়মন্ড ক্রীক' নামে অভিহিত করতেন ৷ পর্তুগিজদের রাখা এই ডায়মন্ড ক্রীক নাম থেকেই পরে হাজিপুরের অধুনা নাম হয় ডায়মন্ড হারবার ৷ পর্তুগিজরা দেশ ছাড়ার পর কালের নিয়মে একই রকমভাবে জলপথে বাণিজ্যের জন্য এদেশে আসে ইংরেজরা ।
এরপর হাজিপুরে ঘাটি গড়ে ব্রিটিশরা ৷ 1868-1869 খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশরা ডায়মন্ড হারবারেই একটি দুর্গ নির্মাণ করেন ৷ যা 'ডায়মন্ড হারবার চিংড়িখালি কেল্লা' নামে পরিচিত । এই দুর্গেই ইট-পাথরের বাঙ্কারে একাধিক কামান বসানো হয়েছিল নদীর দিকে নিশানা করে ৷ যার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল জলদস্যুদের হাত থেকে নিম্ন গাঙ্গেয় বাংলাকে বাঁচানো । বাণিজ্যের সুবিধার্থে সেই সময় হুগলি নদীর তীরে পোতাশ্রয় বা বন্দর গড়ে তোলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ৷ একইসঙ্গে নদী পথে নজরদারির পাশাপাশি সৈন্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কয়েকবিঘা জমিতে তিনটি বিশাল আয়তনের বহুতল দুর্গকে নিয়ে গড়ে ওঠে কেল্লা ৷ এই কেল্লার নিরাপত্তার জন্য তিনটি কামানও বসানো হয়েছিল ৷ ডায়মন্ড হারবারের এই কেল্লা যে ব্রিটিশদের এক বিশেষ শক্ত ঘাঁটি ছিল, এ কথা বলাই যায় । কিন্তু বর্তমান নদী ভাঙনে সেই কেল্লা প্রায় বিলুপ্তির পথে ।
অসীমা মুখোপাধ্যায় নামে এক স্থানীয় বাসিন্দার কথায়, "গত 40 বছর আগে আমরা যে অবস্থায় ডায়মন্ড হারবার কেল্লাকে দেখেছি বর্তমানে তার আর কোনও অংশই অবশিষ্ট নেই । আমরা দেখেছি কেল্লায় যাওয়ার সময় তিনটি বড় বড় রাস্তা, একটি লাইট হাউস, দু'তলা সমান 7টি দুর্গ ও 7টি কামান ছিল । ধীরে ধীরে নদী ভাঙনের কারণে সেই রাস্তা দুর্গ ও লাইট হাউস সবই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে । এখন কেল্লার কিছু অংশ অবশিষ্ট রয়েছে । পর্যটকরা এখন দেখতে এসে কেল্লার এই অবস্থা দেখে হতাশ হয় । রক্ষণাবেক্ষণ করলে এটিকে বাঁচানো সম্ভব ছিল ।"
এই বিষয়ে সাহিত্যিক ঝড়েশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য,"ডায়মন্ড হারবারের পর্যটনের ক্ষেত্রে এই পুরনো কেল্লার গুরুত্ব অনেক । মানুষ পুরনো ইতিহাস ভুলে যেতে চলেছে । এখনও যদি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কেল্লাকে বাঁচানোর জন্য উদ্যোগী হয় তাহলে ডায়মন্ড হারবারের পর্যটন মানচিত্রে একটি নতুন পালক সংযোজন হবে । কেল্লাকে আর বাঁচানো যাবে না ৷ কিন্তু কেল্লার মতন যদি রেপ্লিকা তৈরি করা যায় তাহলে অনেক পর্যটকেরা তারা ডায়মন্ড হারবারে আসবে ।"