জয়নগর, 10 অগস্ট: স্বাধীনতার 75তম বর্ষপূর্তির উদযাপন চলছে দেশজুড়ে ৷ সংগ্রামী ইতিহাসে উজ্জ্বল জয়নগর-মজিলপুর, বহড়ু এবং তদসংলগ্ন এলাকা । বহু মনীষী, বিপ্লবী জন্মগ্রহণ করেছেন এখানে । দেশের জন্য নিজের প্রাণ বলিদান দেওয়া এমনই এক বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য (Bengal Revolutionary Kanailal Bhattacharya on 75 years Independence) ।
1931 সালের 27 জুলাই ৷ কানাইলাল ভট্টাচার্য 'বিমল দাশগুপ্ত' ছদ্মনামে বিপ্লবী দীনেশ গুপ্ত ও বিপ্লবী রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসির দণ্ডাদেশকারী বিচারক আরআর গার্লিককে হত্যা করেন ৷ এরপর পটাশিয়াম সায়ানাইডের ক্যাপসুল খেয়ে নেন । সেই অবস্থাতে উপস্থিত প্রহরী সার্জেন্টের গুলি তাঁর শরীর ঝাঁঝরা করে দেয় । সে সময় তাঁর পকেটে একখণ্ড কাগজ পাওয়া যায় । তাতে লেখা ছিল, "ধ্বংস হও; দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসি দেওয়ার পুরস্কার লও ৷"
মেদিনীপুরের ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট পেডির হত্যাকাণ্ডে বিপ্লবী বিমল দাশগুপ্তকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল পুলিশ । তাঁর নাম নিয়ে নিজের জীবনের বিনিময়ে বিমল দাশগুপ্তকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন কানাইলাল । পুলিশ দীর্ঘদিন তাঁর প্রকৃত পরিচয় উদ্ধার করতে পারেনি । এমনকী দেহ শনাক্তকরণের সময় বিপ্লবীর মা পর্যন্ত তাঁর দেহ দেখে চিনতে অস্বীকার করে জানান, এ তাঁর কানু নন ৷
আরও পড়ুন: স্বাধীনতার 75 বছরে ফিরে দেখা সংগ্রামীদের ইতিহাস
মাত্র 22 বছর বয়সে নাম-পরিচয়হীন শহিদ হয়ে আরেক বিপ্লবীকে বাঁচিয়ে যাওয়ার এই চেষ্টা ইতিহাসে বিরল । 1909 সালের 22 অগস্ট কানাইলাল ভট্টাচার্যের জন্ম হয় দক্ষিণ 24 পরগনার জয়নগর থানার মজিলপুরের দেওয়ান বংশে । তাঁর বাবা নগেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ও মা কাত্যায়নী দেবী ।
তিনি জয়নগর-মজিলপুর, বহড়ু, বিষ্ণুপুর ব্যায়াম সমিতির সদস্য ছিলেন । ছাত্রাবস্থায় আয়ারল্যান্ডের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, বাঘাযতীনের বুড়িবালামের যুদ্ধ, মাস্টারদার জালালাবাদ পাহাড়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের প্রতি আকৃষ্ট হন কানু। পরবর্তীতে যুবক কানাইলাল স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেন । নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল ভলেন্টিয়ার্স দলের সদস্যও হন তিনি । পরবর্তীতে বহড়ুর বিপ্লবী সুনীল চট্টোপাধ্যায়, বোড়ালের সাতকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সুপরিচিত বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন তিনি এবং এক যোদ্ধায় পরিণত হন।
বাংলার গর্ব, স্বাধীনতা সংগ্রামী কানাইলাল ভট্টাচার্য কানাইলাল মজিলপুর জেএম ট্রেনিং স্কুলের ছাত্র ছিলেন । আলিপুর জেলা সদরের ঠিকানায় এখনও বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্যের নাম উল্লিখিত রয়েছে । বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগে 13-14 বছর আগে এই দিনটিকে পালন করা হত । বর্তমানে কোনও সরকারি উদ্যোগ না করা হলেও বেসরকারি উদ্যোগে গঠিত 'বিপ্লবী কানাইলাল ভট্টাচার্য স্মৃতিরক্ষা কমিটি' 27 জুলাই দিনটিতে তাঁর মূর্তিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে ৷ মূর্তিটি মজিলপুরের দত্তবাজারে বিপ্লবীর বাড়ির পাশে অবস্থিত ।
আরও পড়ুন: মহরমের ছুটিতেও ডাকঘর খোলা, মিলল জাতীয় পতাকা