ডায়মন্ড হারবার ও আরামবাগ, 6 এপ্রিল : চৈত্রের চাঁদিফাঁটা রোদের মধ্যেই শেষ হল তৃতীয় দফার ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ৷ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন তেজ দেখিয়েছে রোদ্দুর, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তেজ বাড়িয়েছে ভোটের উত্তাপ ৷
কোথাও বুথ জ্যামের অভিযোগ, কোথাও ভোটারদের ভোটদানে বাধা, আবার কোথাও কাঠগড়ায় উঠল কেন্দ্রীয় বাহিনী ৷ বেশ কিছু এলাকায় ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠল কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে ৷ তাঁরা নাকি কোনও একটি নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করছেন ৷
তবে সব কিছুকে ছাপিয়ে নজর কাড়ল আরামবাগ ৷ আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে আরামবাগের তৃণমূল প্রার্থী ৷ সুজাতা খাঁ মণ্ডল ৷ বিজেপি নেতা সৌমিত্র খাঁ-র স্ত্রী ৷ বেলা গড়াতেই সুজাতার অভিযোগ, কেন্দ্রীয় বাহিনী ভোটারদের প্রভাবিত করছে, ভয় দেখাচ্ছে ৷
শুরুটা এখান থেকে ৷ তারপর দিনভর সংবাদমাধ্যমের নজর আরামবাগে ৷ একবার নয় ৷ দফায় দফায় আক্রমণ হল সুজাতার উপর ৷ বাঁশ নিয়ে রীতিমতো তাড়া করা হল ৷ মাথায় বাঁশের বাড়িও খেলেন ৷ কোনওরকমে ধানের জমি দিয়ে দৌড়ে প্রাণে বাঁচলেন ৷ শুধু একবার নয় ৷ এরপর ফের একবার আক্রান্ত হন সুজাতা ৷ গাড়ি ভাঙচুর হল ৷
আরও পড়ুন : উলুবেড়িয়ায় পাপিয়া অধিকারীকে সপাটে চড়, তৃণমূলকে নিশানা বিজেপি প্রার্থীর
কিন্তু কেন এই আক্রমণ ?
হিসেব কষতে বসলে কিছুদিন পিছিয়ে যেতে হবে ৷ উনিশের লোকসভা নির্বাচন ৷ বিজেপির হয়ে লড়ছেন সৌমিত্র ৷ সেইসময় সৌমিত্রর পাশেই ছিলেন সুজাতা ৷ প্রচারে ঝড় তুলেছিলেন স্বামীর জন্য ৷ তুলোধনা করেছিলেন তৃণমূলকে ৷ একের পর এক কড়া ভাষায় আক্রমণ শানিয়ে গিয়েছিলেন ৷ ইস্যুগুলি অনেকক্ষেত্রেই একই ছিল ৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই বলেন, উনিশের ভোটে সৌমিত্রর জেতার পথটা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিলেন সুজাতা ৷
তারপর ভোটের আগে হঠাৎ করে একদিন তৃণমূল ভবনে দেখা গেল সুজাতাকে ৷ যোগ দিলেন শাসক শিবিরে ৷ মমতা প্রার্থীও করলেন তাঁকে ৷ কিন্তু সাধারণ মানুষ কি পুরানো দিনগুলি ভুলে গেল ? যে সুজাতাকে বছর দেড়েক আগেও তৃণমূলকে চাছাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন ৷ আজ সেই সুজাতার মুখেই তৃণমূলের জয়গান ৷
শুধু সুজাতার আরামবাগ কেন্দ্রই নয় ৷ ডায়মন্ড হারবার ৷ গোঘাট ৷ উলুবেড়িয়া ৷ দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়ে উঠল ৷ উলুবেড়িয়া উত্তরের তৃণমূল প্রার্থী নির্মল মাজিকে তো দেখা গেল ভয়ে হেলমেট পরে ঘুরে বেড়াতে ৷ গোঘাট থেকে এবার বিজেপির প্রতীকে লড়ছেন বিশ্বনাথ কারক ৷ একসময়ের বাম বিধায়ক আজ একেবারে রং-নীতি সব বদলে পদ্মশিবিরে ৷
এই কেন্দ্রগুলির বেশ কিছু এলাকা থেকে আমফান থেকে শুরু করে একাধিক ইস্যুতে অভিযোগ উঠেছিল ৷ কাটমানি সংক্রান্ত অভিযোগও উঠে এসেছিল ৷ অনেকক্ষেত্রে ক্ষোভ প্রশমনে আসরে নামতে হয়েছিল মমতাকেও ৷ যে সব নেতাদের বিরুদ্ধে একসময় অনেক ক্ষোভ জন্মেছিল মানুষের মনে, আজ তাঁদের মধ্যে অনেকেই জার্সি বদলে অন্য দলের থেকে প্রার্থী হচ্ছেন ৷
আজ এই যে অশান্তি, উত্তেজনা... সেই সব কি তাহলে মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ? প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে ৷