নামখানা, 28 জুন : নদীর ধারে বাস, চিন্তা বারো মাস । কথাটি যেন সুন্দরবনের মানুষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে । সুন্দরবনের উপকূল তীরবর্তী এলাকার মানুষজন একাধিক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হয়ে একটু একটু করে হারিয়েছে তাঁদের ভিটেমাটি ।
গত 26 মে সুন্দরবনের আছড়ে পড়েছিল বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় যশ । ঘূর্ণিঝড় যশ ও পূর্ণিমার ভরা কোটালের জেরে সুন্দরবনের নদীগুলি মুহূর্তের মধ্যে রুদ্ররূপ ধারণ করে ৷ স্বমহিমায় সুন্দরবনের একাধিক গ্রামকে ভাসিয়ে দিয়েছিল । সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে স্থায়ী কোনও নদীবাঁধ না থাকায় প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় হারাতে হয় শেষ সম্বলটুকুও । একই গল্প নামখানার বাসিন্দা অশীতিপর এক দম্পতির ৷
নাদাভাঙার বেরাঘেরী গ্রামের বাসিন্দা খগেন ভুঁইয়া (95) বয়সের ভারে ঠিকমতো চলতেও পারেন না । বেশ কয়েক বছর আগে পারিবারিক বিবাদের জেরে একমাত্র ছেলে তাঁদের ঘরছাড়া করে । যশ ধেয়ে আসার আগে আশ্রয় নিয়েছিলেন সরকারি ত্রাণ শিবিরে ৷ সুপার সাইক্লোনের শেষে ফিরে দেখেন যশের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি সব গিয়েছে নদীগর্ভে ৷ ঘর নেই, তাই কোনওমতে ত্রিপল ঘিরে স্ত্রী আঙ্গুরাবালাকে নিয়ে বাস করতে হচ্ছে নদীবাঁধের উপরেই ৷ বৃদ্ধ দম্পতির জীবিকা বলতে নদীর মাছ ধরে তা পাড়া-গাঁয়েই বিক্রি করা ৷ নদীতে জলস্ফীতির পর এখন সেটাও বন্ধ ৷ ভরসা সরকারি ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির ত্রাণ ৷ এই ত্রাণের ভরসাতেই দিন কাটছে তাঁদের ।
খগেন ভুঁইয়া বলেন, "মাসখানেক আগের ঘূর্ণিঝড় যশের সময় শেষ সম্বলটুকুরও মায়া ত্যাগ করে ত্রাণ শিবিরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম । ত্রাণ শিবির থেকে ফিরে এসে দেখলাম ঘরবাড়ি বলতে আর কিছুই নেই । সব ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে । যশের তাণ্ডবের জেরে হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় গোটা গ্রাম । নদীগর্ভে চলে গিয়েছে ঘরবাড়ি । সেই থেকেই এই বাঁধের উপর ত্রিপলের ছাউনিতেই আছি ৷"
আঙ্গুরাবালা জানান, আয়লা থেকে আমফান, বুলবুল থেকে যশ বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় যখনই সুন্দরবনের হানা দিয়েছে তখনই নদীগর্ভে একটু একটু করে বিলীন হয়েছে সুন্দরবনের মানুষের জমি থেকে ঘরবাড়ি । সেই আয়লার সময় থেকে তাঁদের সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৷ তবে এখনও পর্যন্ত তেমন কিছু পাননি ৷ নদী ভাঙন নিয়ে ভয়মুক্ত থাকার কোনও জায়গাই নেই ৷ তবে সময়মতো সরকারি সাহায্য পেলে দিনযাপনে সুবিধা হয় ৷