বারুইপুর, 2 অক্টোবর: জমিদারি আজ আর নেই । তবে ভাঁটা পড়েনি জৌলুসে । বনেদি বাড়ির আনাচে-কানাচে এখনও জমিদারি বাড়ির পুজোর মেজাজ । কোথাও প্রতিমা গড়ার কাজ চলছে, দিনদুয়েকের মধ্যে উমার গায়ে রঙের প্রলেপ পড়বে, কোথাও আবার গোল করে পুজো নিয়ে আলোচনায় বসছে বাড়ির মেয়ে-বউরা । তারই মধ্যে 274 বছর ধরে প্রাচীন রীতিনীতি মেনে এখনও মা দুর্গার আরাধনায় মত্ত বারুইপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার ।
1157 বগাব্দে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের রাজবাড়ি থেকে বারুইপুরে এসেছিলেন জমিদার সহস্ররাম বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ এখানে এসে সুবিশাল দালান বাড়ি করে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি । সেই মন্দিরেই শুরু করেন উমার আরাধনা ৷ তারপর থেকে বারুইপুরের আদি গঙ্গা সংলগ্ন কল্যাণপুরের বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে বংশ পরম্পরায় দুর্গাপুজো হয়ে আসছে । এই বাড়িতে রথের দিন থেকে কাঠামোয় ঠাকুর গড়া শুরু হয় । প্রতিপদেই বসে ঘট । কুলপুরোহিতের সঙ্গে তন্ত্রধারক মিলে শুরু করেন চণ্ডীপাঠ ।
আরও পড়ুন:সপ্তমীর হোমের আগুন নেভে দশমীতে, 158তম বর্ষে পদার্পণ মণ্ডল বাড়ির দুর্গাপুজো
বাড়ির সদস্য চন্দনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, যেদিন থেকে দুর্গা মন্দিরে ঘট বসে, সেইদিন থেকেই পরিবারে কেবল মাছ ছাড়া মাংস, ডিম, পেঁয়াজ এসব কিছুই খাওয়া হয় না ৷ এই বিষয়টি চলে লক্ষ্মীপুজো পর্যন্ত । সপ্তমীর দিন মন্দির সংলগ্ন চাতালে যূপকাষ্ঠে হয় পাঁঠাবলি। এছাড়াও অষ্টমীর দিনও সন্ধিপুজোর সময় পাঁঠাবলির রীতি রয়েছে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে । এমনকী নবমীর দিনও পাঁঠা ও শস্য বলি হয়ে থাকে । পুজোর কয়েকটাদিন এই বাড়িতে মায়ের ভোগ বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত ভোগে উমাকে নানাপদ যেমন- মাছ, মাংস ,ডাল, খিচুড়ি সবই দেওয়া হয় । কিন্তু দশমীর দিন উমার ভোগে থাকে পান্তা ভাত ও কচু শাক । কারণ সেদিন অরন্ধন হিসেবে পালিত হয়। আগে থেকে রান্না করে রাখা ভাত ও কচু শাক মা দুর্গাকে খেতে দেওয়া হয় ৷ ওই খেয়েই উমাকে পাড়ি দিতে হয় কৈলাশের উদ্দেশে ৷