জলপাইগুড়ি, 3 জুন: শুক্রবারের সন্ধ্যায় ওড়িশার বালাসোর ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার খবর সামনে আসতেই বছর দেড়েক আগের আতঙ্কের স্মৃতি ফের ফিরে এলে কোচবিহারের কাকরিবাড়ির বাসিন্দা দেবব্রত শর্মার ৷ কারণ, তিনিও বছর দেড়েক আগে ভয়ঙ্কর এক রেল দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলেন ৷
বালাসোরের দুর্ঘটনার খবর শুনে তিনি তাই বললেন, ‘‘ট্রেন দুর্ঘটনায় আড়াই ঘণ্টা পর গ্যাস কাটার দিয়ে কামরা কেটে আমাকে বের করা হয়েছিল । ট্রেনে আটকে থাকা অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে আমি বাড়িতে ফোন করে জানাচ্ছিলাম যে আমি আর বাঁচব না ।’’ দুর্ঘটনার পর তিনি এতটাই ট্রমার মধ্যে চলে যান যে পরের এক বছর আর ট্রেনে ওঠেননি এই কলেজ ছাত্র৷ তাঁর কথায়, ‘‘ট্রেন উঠতে ভয় করে । উঠল পেছনের দিকে উঠি ।’’
2022 সালের 13 জানুয়ারি ময়নাগুড়ির দোমহনীতে বিকানের গুয়াহাটি এক্সপ্রেসে দুর্ঘটনা ঘটে । 12টি বগি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় । দুর্ঘটনায় 9 জন মারা যান ৷ 42 জন আহত হয়েছিলেন । মৃতরা বেশির ভাগই কোচবিহার জেলার বাসিন্দা ছিলেন ।কোচবিহারের আহত ট্রেন যাত্রীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন দেবব্রত শর্মা । আড়াই ঘণ্টা ট্রেনের ভেতরে আটকে থাকা অবস্থায় গ্যাস কাটার দিয়ে ট্রেন কেটে এনডিআরএফ জওয়ানরা দেবব্রত শর্মাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছিলেন ।
ট্রেনে আটকে থাকা আড়াই ঘণ্টার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন দেবব্রত শর্মা । তিনি বলেন, ‘‘ট্রেনের ভেতরে আড়াই ঘণ্টা কীভাবে কেটেছিল আমিই জানি । প্রতি মুহূর্তে মনে হচ্ছিল আর বাঁচব না । কিন্তু এনডিআরএফ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে ।’’ এর পর শুক্রবারের ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, ‘‘আমিও ট্রেন দুর্ঘটনায় ভুক্তভোগী । তাই আমি জানি কষ্টটা কেমন হয় ।’’
তিনি আরও বলেন, সেদিন শিলিগুড়ি থেকে কোচবিহার আসছিলাম । আত্মীয়ের বাড়ি থেকে ফেরার পথে বিকানের এক্সপ্রেসে জেনারেল টিকিট কেটে ট্রেনে উঠি । ট্রেনটি ছেড়ে দিয়েছিল তাই জেনারেল কামরায় উঠতে পারিনি । বাধ্য হয়েই স্লিপারে উঠে গিয়েছিলাম । দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম । হঠাৎই দেখি অন্ধকার হয়ে গেল । ভেবেছিলাম রেলের কাজ চলছে । এরপরেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলাম । এরপরেই হঠাৎ নিমেষের মধ্যে কী হয়ে গেল আমি জানি না ।’’
দেবব্রতর আরও বক্তব্য, ‘‘ট্রেনের কামরায় আমি যে আটকে আছি জানতামই না । জ্ঞান ফিরে দেখি বন্ধু ফোন করছে জানতেই চাইছে আমি কোথায় । তখন আমার সব পরিষ্কার হয় । আমি বাড়িতে ফোন করে বাবাকে সব জানাই ৷ বলি আমি আর বাঁচব না । আমার মাথায় কোমরে চোট লেগেছিল । চিৎকার করতে পারছিলাম না । এস6 কামরার উপর এস5 কামরাটি উঠে গিয়েছিল । আমি এস6 কামরায় মধ্যে ছিলাম । আমি আড়াই ঘণ্টা পর আমাকে ট্রেন কেটে বের করা হয়েছিল ।’’ দেবব্রতকে প্রথমে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভরতি করা হয় ৷ সেখানেই তাঁর বাবা গৌতম শর্মা পৌঁছে যান ৷
আরও পড়ুন:'যাকে ফোন করছেন তিনি মারা গিয়েছেন', ওপার থেকে জানাল অচেনা কেউ; উৎকণ্ঠায় বামনগোলার পরিবার