কোচবিহার, 20 নভেম্বর : একদিকে শুভেন্দু অধিকারী, অন্যদিকে মিহির গোস্বামী । শুভেন্দু-কাঁটায় বিদ্ধ রাজ্যের শাসক দলের বিড়ম্বনা ক্রমেই বাড়িয়ে চলেছেন মিহিরবাবু । কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক । ছাত্র রাজনীতি দিয়ে হাতেখড়ি । যুব কংগ্রেস... কংগ্রেস ও পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে । দীর্ঘদিন ধরে বিধায়ক পদ সামলেছেন । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক সফরে দীর্ঘদিনের সঙ্গী তিনি । কিন্তু সম্প্রতি দলের সঙ্গে দূরত্ব অনেকটাই বেড়েছে এই বিক্ষুব্ধ নেতার । একের পর এক ফেসবুক পোস্ট । গত দেড় মাসে শাসক দলের বিড়ম্বনা ক্রমেই বেড়েছে । সংবাদমাধ্যম থেকে সোশাল মিডিয়ায়... বিভিন্ন সময়ে দলনেত্রীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলেছেন । কেন তার এই অবস্থান ? ইটিভি ভারতের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে কোচবিহার দক্ষিণের বিধায়ক মিহির গোস্বামী ।
ইটিভি ভারত :বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতি চলছে । সামনে 2021 এর বিধানসভা নির্বাচন । কেন এই অবস্থান?
মিহির গোস্বামী : দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনে আমার এই অবস্থান এতদিন ছিল না । কারণ, আমি নীতি-আদর্শে বিশ্বাস করি । রাজনৈতিক কর্মসূচি, কর্মপন্থা পরিচালিত করবে রাজনৈতিক কর্মী এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব । এটাই আমি বিশ্বাস করি । কিন্তু আমার মনে হয়েছে তৃণমূলের বেশ কয়েক বছর ধরে সেই অবস্থানটা নেই । বর্তমানে দলের নিচুস্তরের কর্মীদের কথা, চিন্তা, কর্মপন্থার মূল্য নেতৃত্বের কাছে নেই । আমি আমার কথা বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছি, সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমেও বহুবার জানিয়েছি ।
ইটিভি ভারত :জয়গাঁ উন্নয়ন পর্ষদ থেকে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে কোচবিহার মেডিকেল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন । সেই পদ থেকে তৃণমূল নেতৃত্ব সরিয়ে দিয়েছে । তখন প্রতিবাদ করেননি । হঠাৎ জেলা কমিটি, ব্লক কমিটি ঘোষণার পর প্রতিবাদ শুরু করেছেন । কেন এই প্রতিবাদ?
মিহির গোস্বামী : দীর্ঘ 30 বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করেছি । তৃণমূল গঠিত হবার পর থেকে দীর্ঘ 22 বছর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর নেতৃত্বে চলেছি । কিন্তু অদ্ভুতভাবে লক্ষ্য করেছি, কলকাতার কিছু 'পরগাছা' নেতা সবসময় দিদিকে ঘিরে থাকেন । বটগাছের শিঁকড় যেমন উপর থেকে নিচে আসে, বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থা হয় যে বটগাছ আর দেখা যায় না । আজকেও অবস্থাটা এমনই হয়েছে । আজকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অস্তিত্বই দলের মধ্যে আছে কিনা এটা আমার কাছে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন । আমাকে বিভিন্নভাবে কোচবিহার জেলা নেতৃত্ব থেকে শুরু করে কলকাতার পরগাছারা অপমান, অসম্মান করেছেন । যেখানে আমি ভালো কাজ করেছি, সেখান থেকে আমাকে সড়ানোর চক্রান্ত করেছে এবং সরিয়েছে । আমি তাতে কিছু মনে করিনি । কারন আমার মনে হয়েছে দল যা ভালো মনে করেছে তাই করেছে ।
আমি বুঝতে পারি না, আমার দোষ কোথায়? আমাকে জানানোর প্রয়োজন মনে করে না । লোকসভা নির্বাচনের পর কোচবিহার জেলা বিধানসভাভিত্তিক কমিটি গড়ে দেওয়া হল যার চেয়ারম্যান এলাকার বিধায়করা । কিন্তু পরবর্তীতে জেলা ও ব্লক কমিটি ঘোষণা নিয়ে আমাদের জানানো হল না । এর আগে 18 সেপ্টেম্বর রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে গোটা জেলার বিষয়টি জানিয়ে এসেছিলাম । বলেছিলাম, আমাদের কথা মত যদি কাজ হয় তাহলে আছি, না হলে আমি নেই । কারণ, এক ঠিকাদার সংস্থার কথায় যদি দল পরিচালনা হয় অথবা রাজ্যের অপরিণত নেতৃত্বের নির্দেশে যদি সংগঠন পরিচালিত হয় তাহলে আমার পক্ষে সংগঠনের কাজে থাকা সম্ভব নয় । পরবর্তীতে কমিটি ঘোষণা হল অথচ আমি জানতেই পারলাম না । আমার বিধানসভা কেন্দ্রে কে ব্লক সভাপতি হবে আমি জানি না । আমাদেরকে গুরুত্ব দেয়া হল না । আমার মনে হয় দলের কাছে আমার আর প্রয়োজন নেই । প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে ।
ইটিভি ভারত :সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন "আমার দল আর আমার নেত্রীর হাতে নেই" । কেন এমনটা মনে হল?