কোচবিহার, 14 নভেম্বর : 1812 সালে কোচবিহারের রাজা হরেন্দ্রনারায়ণের উদ্যোগে শুরু হয়েছিল রাসের মেলা ৷ সেই থেকে প্রতিবছর রাসচক্র ঘুরিয়ে সূচনা হয় কোচবিহারের বিখ্যাত রাস উৎসবের ৷ তিন পুরুষ ধরে সেই রাসচক্র তৈরি করছেন সেখানকারই এক মুসলিম পরিবার । রাসপূর্ণিমার দিন মদনমোহন বাড়িতে গিয়ে পুরো রাসচক্র তৈরি করেন তাঁরা ।
Coochbehar Rash Mela : টানা একমাস নিরামিষ খেয়ে রাসচক্র তৈরি করেন আলতাফ
হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় এই রাসচক্র । মিঁয়া পরিবারের তৈরি রাসচক্র দেখতে ভিড় জমে ৷ কিন্তু, ট্রাস্টের তরফে দেওয়া চাকরিতে তাঁদের সংসারে অনটন ঘোচেনি বলে খেদ মিঁয়া পরিবারের ।
পরে কোচবিহারের রাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের উদ্যোগে বৈরাগী দিঘির পারে মদনমোহন মন্দির গড়ে তোলা হয় ৷ সেখানেই প্রতিবছর রাস পূর্ণিমা তিথিতে রাস উৎসব হয় । হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির সংমিশ্রণে তৈরি করা হয় রাসচক্র । এক সময় রাসচক্র ঘুরিয়ে রাজারা রাসমেলার সূচনা করতেন । এখন রাজার পরিবর্তে মন্দিরের ট্রাস্টি এবং জেলাশাসক রাসচক্র ঘুরিয়ে মেলার সূচনা করেন । প্রথমে রাজাদের তরফে এই রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় কোচবিহারের হরিণচওড়া এলাকার বাসিন্দা মামুদ মিঁয়াকে । পরবর্তীতে তাঁর ছেলে আজিজ মিঁয়া ওই রাসচক্র তৈরির দায়িত্ব পান । এরপর দায়িত্ব নেন তাঁর ছেলে আলতাফ মিঁয়া ৷ লক্ষ্মীপুজোর দিন উপোস থেকে রাসচক্র তৈরির কাজ শুরু করেন আলতাফ । সেদিন থেকে টানা একমাস নিরামিষ খাবার খান । এরপর রাসপূর্ণিমার দিন মদনমোহন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পুরো রাসচক্র তৈরি করেন । এবারও তিনি ওই কাজ করেছেন।
ট্রাস্টের তরফে 7000 টাকা মাসিক মাইনের চাকরি দেওয়া হয়েছে তাঁকে । কিন্তু এই চাকরিতে তার সংসার চলে না বলে আলতাফ মিঁয়ার দাবি । রাসচক্র তৈরিতে আলতাফকে সহযোগিতা করে তাঁর ছেলে আমিনুর । বছরের অন্যান্য সময় কাঠের কাজ করলেও এইসময়টা বাবাকে সাহায্য করেন তিনি । তিনি বলেন, ‘‘রাজ আমলের এই কাজ করতে ভালই লাগে । কিন্তু বাবা এই 7000 টাকার চাকরি ছাড়া আর কিছু পায়নি । তাই একটা ভাল কিছু চাকরি হলে সুবিধা হত ৷’’