কোচবিহার, 31 জুলাই : ঘুম ভাঙলেই খটখট শব্দ । দিনরাত কাজ চলছে তাঁত ঘরে । একদিকে তাঁত বোনার ব্যস্ততা, অন্যদিকে তা রপ্তানি করার ব্যস্ততা । দুই মিলিয়ে দম ফেলারও সময় থাকে না শিল্পী থেকে ব্যবসায়ী সকলে । পুজোর আগে তো এই ব্যস্ততা চরমে ওঠে । কার্যত নাওয়া-খাওয়া ভুলে বছরের বাকি দিনগুলোর কাজও অনেকটা এগিয়ে রাখেন তাঁরা । এই ছবিটাই পরিচিত কোচবিহারের দিনহাটার তাঁত পাড়ায় । কিন্তু ছবিটা পালটায় লকডাউনের শুরু থেকে । আর পাঁচটা ব্যবসার মতো ক্ষতির মুখে পড়ে তাঁত ব্যবসায়ও । শুরুতে কোনওমতে কয়েকটা কাজ হলেও পরে একেবারেই বন্ধ হয়ে যায় । আনলকে কাজ শুরু হলেও সেভাবে স্বাভাবিক হয়নি কিছু । ফলে রীতিমতো সমস্যায় শিল্পীরা । একই পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদেরও । তাঁদের কথায়, সংসার চালাতে খুবই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে । এভাবে চললে কী হবে জানা নেই ।
কোরোনার প্রভাব পড়েছে সব ক্ষেত্রেই । সরকারি, বেসরকারি, ক্ষুদ্র, ছোটো, মাঝারি শিল্প, বাদ যায়নি কিছুই । প্রভাব পড়েছে তাঁত শিল্পেও । একদিনে তিন মাস লকডাউন, তার উপর আনলকে বাড়ছে সংক্রমণ । ফলে ক্রেতার সংখ্যা নেই বললেই চলে । ক্রেতা নেই, রপ্তানিও বন্ধ, রীতিমতো সমস্যায় তাঁত শিল্পীরা । কোচবিহারের দিনহাটা মহকুমার তাঁত শিল্পীদের অনেকেরই কথায়, অসমসহ উত্তর-পূর্ব রাজ্যে যাচ্ছে না মেখলা, আনারকলি , দোকনা । বানিয়ে ফেলে রেখে দিতে হচ্ছে । না হয় তো বানানোই হচ্ছে না । চলছে না সংসার । কীভাবে আগামী দিন কাটবে, কী পরিস্থিতি আসতে চলেছে জানা নেই ।
পরিসংখ্যান বলছে, আগে যেখানে প্রতি মাসে আট থেকে দশ লাখ টাকার জিনিস রপ্তানি হত, এখন সেটা একেবারেই কমে গেছে । উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির ব্যবসায়ীরা আনলকের পর থেকে সেভাবে উৎসাহও দেখাচ্ছেন না বলেও মত অনেকের । ফলে রাজ্যের কিছু এলাকা বাদে সেভাবে ব্যবসা চলছে না । কিন্তু সংসার চালাতে হবে, তাই কার্যত জোর করেই কাজ করছেন শিল্পীরা । মাত্র একটি শিফটেই এক, দু'টো শাড়ি তৈরি হচ্ছে রোজ । বানাচ্ছেন তাঁত বা হ্যান্ডলুমের শাড়িও ।