কোচবিহার, 12 মার্চ:হাইকোর্টের নির্দেশে স্বামীর চাকরি বাতিলের এক মাসের মধ্যে আত্মঘাতী স্ত্রী। ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কোচবিহারের মেখলিগঞ্জে ব্লকের চ্যাংরাবান্ধা গ্রামপঞ্চায়েতের খেতাবেচা এলাকার ঘটনা (Housewife Died by Suicide on Her Husbands Job Loss)। শুক্রবার রাতে নিজের বাড়িতে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন সন্ধ্যা রায় নামে ওই গৃহবধূ। শনিবার পুলিশ ময়নাতদন্তের পর দেহ আজ তুলে দেওয়া পরিবারের হাতে।
ওই গৃহবধূর আত্মঘাতী হওয়ার কারণ কী ? এর উত্তর কি স্বামীর চাকরি বাতিল ? ঘটনার পরই স্বামীর চাকরি বাতিলের কারণ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে এলাকায়। গৃহবধূর স্বামীর নাম কাঞ্চন রায়। কাঞ্চন রায় মেখলিগঞ্জের জামালদহ তুলসীদেবী হাইস্কুলের গ্রুপ-ডি পদে চাকরি করতেন। এক মাসে আগে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে তার চাকরি বাতিল হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামীর চাকরি যাওয়ার পরই সংসারে অশান্তি নেমে আসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "চাকরি পেতে চা বাগান-সহ জমি বিক্রি করেছেন। ফলে চাকরি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যান কাঞ্চন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে কথা-কাটাকাটি চলত। মনে হয় সেই কারণই আত্মঘাতী হয়েছেন সন্ধ্যা।"
গৃহবধূর এক আত্মীয়ও অবশ্য স্বীকার করেছেন চাকরি যাওয়ায় অর্থনৈতিক সমস্যায় ভেঙে পড়েছিল পরিবারটি। তাঁর দাবি, একটা সাজানো সংসার তছনছ হয়ে গিয়েছে কাঞ্চনের চাকরি যাওয়ায়। তাঁদের দুই ছেলে রয়েছে। একজন আগামী বছর মাধ্যমিক দেবে আর একজন অষ্টম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন কাঞ্চনের স্ত্রী। এলাকায় চাকরি বাতিলের জন্য স্ত্রীর আত্মঘাতীতে নতুন করে প্রশ্ন ওঠা শুরু করেছে যাদের হাত ধরে চাকরি পেয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার।
আরও পড়ুন:মোবাইলে ভিডিয়ো রেকর্ডার অন করে আত্মহত্যা যুবকের
স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, "যারা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন তাঁরা শাস্তি পেলেন, কিন্তু যারা চাকরি বিক্রি করলেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।" প্রসঙ্গত, কাঞ্চন যখন চাকরি পান তখন তাঁর জাঠতুতো দাদা দিলীপ রায় ছিলেন দাপুটে তৃণমূল নেতা ও চ্যাংড়াবান্ধা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ৷ এছাড়াও তাঁর নিজের দাদা যাদব রায় ছিলেন পঞ্চায়েত সদস্য। কাজই অনেকে মনে করছেন তৃণমূলের নেতাদের পরিবার হওয়ায় চাকরি পেয়েছেন।অন্যদিকে, চাকরি বাতিলের জেরে আত্মঘাতীর ঘটনায় তৃণমূলকে কাঠগড়ায় তুলছে বিজেপি। বিজেপির জলপাইগুড়ি জেলা সাধারণ সম্পাদক দধীরাম রায় বলেন, "তৃণমূলের চাকরি বিক্রির মতো অপসংস্কৃতিতে হাজার হাজার পরিবার সর্বশান্ত হচ্ছে। এই সরকারকে উৎখাত করতে না-পারলে এরকম ঘটনা আরও অনেক দেখতে হবে। কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অমিত ভার্মা জানিয়েছেন, ওই গৃহবধূর মৃত্যুর একটি অস্বাভাবিক মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।