কোচবিহার , 6 সেপ্টেম্বর : কোচবিহার জেলার একটি ক্ষুদ্র জনপদ গোসানিমারি । এর থেকে থেকে দক্ষিণ দিক বরাবর কিছুটা এগোলেই রাস্তার বাঁ হাতে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে কামতেশ্বরী মন্দির । এখানে সারা বছর দেবী কামতেশ্বরীর পুজো করা হয় । আর শরৎকালে তিনি দুর্গারূপে পূজিত হন ।
প্রায় চারশো বছর ধরে পুজো হচ্ছে এখানে । পুজোর ইতিহাস নিয়ে এবং কামতেশ্বরী মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে একটা ইতিহাস আছে । যদিও মন্দিরের প্রতিষ্ঠা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা মতভেদ রয়েছে । বর্তমান মন্দিরটি কোচবিহারের মহারাজা প্রাণনারায়নের আমলে 1665 খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় । মন্দিরের দেওয়ালে এমনটাই লেখা রয়েছে । জানা যায় , দেবী কামতেশ্বরীর পুজোর জন্য সেই সময় বিহারের দ্বারভাঙা থেকে ঝা পরিবারকে নিয়ে আসেন কোচবিহারের মহারাজা । তখন থেকেই ঝা পরিবারের সদস্যরা এই পুজো করে আসছেন । সারা বছরই মন্দিরে পুজো হয় । আর শরৎকালে দেবী দুর্গারূপে পূজিত হন । মায়ের মূর্তিটি এখানে পাথরের । পুজোর সময় আলাদা করে কোনও মূর্তি গড়া হয় না । এই বিষয়ে সেবায়েত পরিবারের সদস্য পেশায় শিক্ষক প্রদীপকুমার ঝা বলেন , "পাথরের মূর্তিটিকেই পুজো করা হয় । শুধু কলাবউ আলাদা করে তৈরি করা হয় । বৈদিক রীতি-নীতি মেনে পুজো করা হয় ।" এমনকী , মূর্তিটির সামনে পুরোহিত ছাড়া আর কেউ যেতে পারে না । যদিও এর কারণ নিয়ে নানা বিতর্ক আছে ।
মহালয়ার পরের দিন থেকেই শুরু হয়ে যায় পুজো । প্রতিপদ থেকে মূল মন্দিরে দেবীর সিংহাসনের উত্তর দিকে ঘট বসিয়ে পুজো শুরু হয় । এরপর ষষ্ঠীর দিন মন্দির প্রাঙ্গণে থাকা বেল গাছে বেল বরণ হয় । সপ্তমীতে মূল পুজো শুরু হয় । সপ্তমীর দিন সকালে মাকে 22 টি জায়গার মাটি ও 22টি জায়গার জল দিয়ে স্নান করানো হয় । প্রতিপদ থেকে নবমী পর্যন্ত প্রতিদিন জোড়া পায়রা বলি দেওয়া হয় । অষ্টমীতে মোষ বলি দেওয়া হয় । এছাড়া , দশমীতে চালকুমড়ো বলি দেওয়ার প্রথা রয়েছে । তবে সারাবছরই মায়ের পুজোর সময় পায়রা বলি দেওয়া হয় । মূল মন্দিরের সামনে যে যজ্ঞ ঘর রয়েছে , সপ্তমী থেকে সেখানে যজ্ঞ শুরু হয় । যজ্ঞের আগুন নেভে দশমীতে । কথিত আছে , দেবী কামতেশ্বরী কামাক্ষ্যার আর এক রূপ । এই বিষয়ে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত কালীনাথ ঝা বলেন , " দেবী কামতেশ্বরী কামাক্ষ্যার আর এক রূপ । প্রতিপদ থেকে এই মন্দিরে দুর্গাপুজো শুরু হয় । প্রতিদিনই বলি প্রথা রয়েছে । এছাড়া প্রতিদিন পুজোতে যে ভোগ দেওয়া হয় , তাতে কোনও লঙ্কার ব্যবহার করা হয় না । গোলমরিচের ব্যবহার হয় । "