কোচবিহার, 19 জুন : বিজেপি সাংসদ জন বারলার বঙ্গভঙ্গের হুঁশিয়ারিতে লড়াইয়ের নতুন রসদ হাতে পেল কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস ৷ একুশের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্য়জুড়ে 200-র বেশি আসন পেলেও কোচবিহার কার্যত খালি হাতেই ফিরিয়ে দিয়েছে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের দলকে ৷ ন’টির মধ্যে মাত্র দু’টি আসনে ফুটেছে ঘাসফুল ৷ বাকি সাতটি আসন গিয়েছে পদ্মের ঝুলিতে ৷ এই পরিস্থিতিতে কোচবিহারে নতুন করে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সেই কাজে কিছুটা হলেও সুবিধা করে দিলেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ ৷
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি তুলেছিলেন জন ৷ শনিবার ফের একবার সেই দাবিতেই সরব হন তিনি ৷ আলিপুরদুয়ারে নিজের কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে তিনি বলেন, এই দাবি তাঁর নয়, আমজনতার ৷ জনের যুক্তি, উত্তরবঙ্গে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে হলে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সরকারের অধীনে থাকলে হবে না ৷ তার জন্য কেন্দ্রের শাসনে থাকতে হবে ৷ অথবা পৃথক রাজ্য গড়ে উত্তরবঙ্গের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে ৷
আরও পড়ুন :উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্য়ের স্বীকৃতির দাবিতে ফের সরব জন বারলা
কোচবিহারে জমি ফিরে পেতে জনের এই মন্তব্য লুফে নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ তাদের সাফ কথা, মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার অজুহাতে আসলে বাংলাকে কেটে দু’টুকরো করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে ৷ ঠিক যেমনটা করা হয়েছিল ইংরেজ আমলে ৷
কোচবিহারের বাসিন্দাদের অনেকেরই বাংলাদেশের সঙ্গে শিকড়ের যোগ রয়েছে ৷ পরিস্থিতির চাপেই তাঁরা এপারে চলে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন ৷ তাই অনেক দিন আগের কথা হলেও বঙ্গভঙ্গের জ্বালা তাঁদের অজানা নয় ৷ পরিবারিক সূত্রেই সেসব ‘গল্প’ তাঁদের জানা ৷ বিজেপি সাংসদের মন্তব্যকে হাতিয়ার করে সেই আবেগেই ধাক্কা দিতে চাইছে কোচবিহার জেলা তৃণমূল কংগ্রেস ৷
শনিবার দুপুরে কোচবিহারে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূল ৷ সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মন, কোচবিহার জেলা তৃণমূলের দুই কোর্ডিনেটর উদয়ন গুহ ও অর্ঘ্য রায়প্রধান-সহ অন্যরা ৷ তাঁরা বলেন, রক্ত দিয়ে হলেও বাংলা ভাগ রোখা হবে ৷ অর্থাৎ, একুশের ভোট প্রচারে ঠিক যেমন মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর ব্রিগেডের অন্যরা বাঙালি জাত্যাভিমানকে উসকে দিয়েছিলেন, ঠিক একইভাবে ফের একবার বঙ্গভঙ্গের যন্ত্রণা উসকে বাঙালির একতাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে কোচবিহার জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ আর তাকে হাতিয়ার করেই জেলায় পদ্ম-সাফাই অভিযানে নামার তোড়জোড় শুরু হয়েছে ৷
আরও পড়ুন :অধীরের মুখে মমতার প্রশংসা, মোদিকে ঠেকাতে পারেন দিদি
এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্য সরকারের গত 10 বছরের কাজের খতিয়ানও তুলে ধরেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সরকার কোচবিহারের জন্য এখনও পর্যন্ত কী কী কাজ করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন দলের নেতারা ৷ সূত্রের খবর, জন বারলার বক্তব্যকে সামনে রেখে নতুন করে ঘুঁটি সাজাচ্ছে কোচবিহার জেলা তৃণমূল ৷ উত্তরবঙ্গের কামতাপুরি, রাজবংশী, নস্যশেখ-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভঙ্গবিরোধী আন্দোলনে নামতে চলেছে তারা ৷
তবে বিজেপিকে ঠেকাতে যখন এভাবে কোমর বাঁধছে শাসকদল, ঠিক তখনই আবার তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ৷ এদিনের সাংবাদিক বৈঠকে জেলার প্রবীণ নেতা রবীন্দ্রনাথ ঘোষের অনুপস্থিতি ঘিরে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ৷ তবে কি দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে রাজ্য়ের প্রাক্তন মন্ত্রীর ? গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন উদয়ন ৷ তাঁর পাল্টা যুক্তি, রাজ্য়ের বর্তমান মন্ত্রী পরেশ অধিকারীও তো সাংবাদিক বৈঠকে আসতে পারেননি ৷ তাতে কী ? এতে বিতর্ক বা জল্পনার কিছু নেই বলেই দাবি উদয়নের ৷