জলপাইগুড়ি, 28 এপ্রিল:নাগরাকাটার সভা থেকে উত্তরবঙ্গ বনধ ডাকা নিয়ে বিজেপিকে যেমন বিঁধলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, তেমনই রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের যে ধারা এতদিন বজায় ছিল, সেই রেওয়াজ ভাঙার ডাক দিয়েছেন তিনি ৷ শুক্রবার গ্রাম জনসংযোগ যাত্রায় নাগরাকাটা জনসভায় যোগ দিয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেখান থেকেই তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে যেভাবে মানুষ মারা যেত, সেই প্রথা ভাঙার সময় এসেছে ৷ তিনি বলেন, "আমরা চাইছি এই সন্ত্রাসের ইতি টানতে। সিপিএম যেখানে ছিল সেখানে সন্ত্রাস ঢুকিয়ে দিয়ে গিয়েছে।"
একই সঙ্গে তিনি জানান, রাজ্যে এতগুলি পঞ্চায়েতে জিতেও বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনায় টাকা বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ গ্রাম সংযোগ যাত্রায় রয়েছেন তৃণমূল সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণ সবকটি জেলার পঞ্চায়েতেই যাবেন অভিষেক ৷ আর এদিন সেই মোতাবেক নাগরাকাটায় পৌঁছে বিজেপিকে একহাত নিলেন অভিষেক ৷ তিনি বলেন, "পঞ্চায়েতে এত আসন জিতল তাও কেন্দ্রের টাকা বন্ধ করে দিল। বাংলা গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা বন্ধ করে দিয়েছে। আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে ভালো ফল হয়নি আমাদের। কিন্তু তাও কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার দেওয়া হচ্ছে সকলকে ৷ বিজেপির লোকরাও পাচ্ছে।" অভিষোকোর দাবি, জলপাইগুড়ি জেলায় 80টি গ্রামপঞ্চায়েতের মধ্যে যেখানে তৃণমূল হেরেছে সব জায়গাতেই রাস্তা হচ্ছে। কোন জায়গায় রাস্তার কাজ বন্ধ করা হয়নি। এক্ষেত্রে তাঁর দাবি, রাজ্য সরকার নিজের টাকা খরচ করে 12 হাজার 500 কিলোমিটার রাস্তা করছে।
অন্যদিকে, কালিয়াগঞ্জে পুলিশের গুলিতে বিজেপি কর্মী মৃত্যুঞ্জয় বর্মনের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে উত্তরবঙ্গ বনধ ডেকেছে বিজেপি ৷ সেই মতো এদিন সকাল থেকেই শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ, মালদা, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার বেশ কিছু এলাকায় উত্তেজনা চরমে পৌঁছয় ৷ বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাঁধে পুলিশের ৷ জোর করে দোকান, বাজার এমনকী সরকারি দফতর বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিজেপি কর্মীদের বিরুদ্ধে ৷ এদিন সে প্রসঙ্গে অভিষেক বলেন, "যারা বনধের নামে গাড়ি ভাঙচুর করছে, টায়ার জ্বালাচ্ছে তাদের বলছি, এটা কোন সংস্কৃতি ? যারা মানুষকে সমস্যায় ফেলে রাজনীতি করে তাদের সমর্থন করা উচিৎ না।" অভিষেকের দাবি, বিজেপি নিজেদের সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে বনধ ডেকেছে। তিনি বলেন, "বিজেপি নেতাদের অসুবিধা কী ? এদের তো খামে করে, খবরের কাগজে মুড়ে টাকা দিয়ে যাবে। এই টাকা নিয়ে এরা ফুর্তি করবে ৷ এদের পরিবার চলবে।"
এরই সঙ্গে উত্তরবঙ্গে গিয়ে রাজ্যভাগ নিয়েও মুখ খুলেছেন অভিষেক ৷ সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জন বার্লার সুরে সুর মিলিয়ে উত্তরবঙ্গকে আলাদা রাজ্যের পক্ষে জোরদার সওয়াল করেছিলেন রাজবংশী নেতা অনন্ত বর্মন ৷ এদিন অভিষেক বলেন, "নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহরা এই জেলায় এসে বলুক এখানে আলাদা রাজ্য হবে ৷ তাহলে আমি কোনও দিন রাজনীতির আঙিনায় পা দেব না। বিজেপি মিথ্যে কথা বলে। বিজেপি বলেছে উত্তরবঙ্গ আলাদা রাজ্য হবে। যারা মানুষকে ভাগ করতে চাইছে।" তাঁর অভিযোগ, ভোটের পর বিজেপির নেতাদের খুঁজে পাওয়া যায় না। আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে বিজেপির সাংসদ থাকলেও গত নয় বছরে এলাকার উন্নয়নের জন্য তাঁরা কিছু করেননি বলেও জানান অভিষেক ৷
আরও পড়ুন: বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে মামলা থেকে সরানো মানে অপশক্তির জয়, মত চাকরিপ্রার্থীদের