কলকাতা, 21 জুলাই : বিশ্বের যে কোনও হেলথ কেয়ার সিস্টেমের মেরুদণ্ডই হল প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সিস্টেম । গোটা উত্তর ভারতেই প্রাইমারি স্বাস্থ্য পরিষেবার মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে । উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য পরিষেবায় তেমন কোনও পার্থক্য নেই । রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে গতকাল এই মন্তব্য করেন চিকিৎসক কাফিল খান ।
গতকাল NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসকদের একটি সংগঠনের আলোচনাসভায় অংশগ্রহণ করেন তিনি । রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবার অবস্থা কেমন? এবিষয়ে ETV ভারতের প্রতিনিধিকে তিনি বলেন, "গতবার যখন এসেছিলাম তখন কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছিলাম । এখানকার চিকিৎসকরা বলেছেন গ্রামাঞ্চলের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সন্ধের পর চিকিৎসক পাওয়া যায় না । তালা দেওয়া থাকে । কোনও এমারজেন্সি হলে রোগীদের 10-20 কিলোমিটার দূরে নিয়ে যেতে হয় । " তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গে এনসেফ্যালাইটিসের প্রকোপ রয়েছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) অনুযায়ী প্রতি 1000 জন রোগী পিছু 1 জন করে চিকিৎসক থাকার কথা । কিন্তু এরাজ্যে প্রতি 2500 রোগী পিছু 1 জন চিকিৎসক । এটা অবশ্য শহরের ক্ষেত্রে । গ্রামের ক্ষেত্রে এই অনুপাতের ব্যবধানটা আরও বেশি ।
কী ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা আরও উন্নত করা যেতে পারে? কাফিল বলেন, "সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সিস্টেমকে মজবুত করা প্রয়োজন । আমাদের এটা বুঝতে হবে, এখনও আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বেসিক চাহিদা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, শিক্ষা । সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল স্বাস্থ্য পরিষেবা সংক্রান্ত বাজেট তৈরি করা । "
উল্লেখ্য, কাফিল খান 2017 সালে সংবাদ শিরোনামে আসেন । উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুরের বাবা রাঘবদাস মেডিকেল কলেজে অক্সিজেনের অভাবে ওই বছর এক রাতে 33 শিশুর মৃত্যু হয় । সেরাতে দায়িত্বে ছিলেন কাফিল । তিনি কয়েকজন চিকিৎসককে নিয়ে শিশুদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু এই ঘটনার জেরে জেল হয়েছিল তাঁর । দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জামিন পান তিনি । এরপর দেশজুড়ে "Health For All"-এর জন্য কাজ শুরু করেন । চলতি মাসের 4 তারিখ কলকাতায় তিনি "Health For All" পশ্চিমবঙ্গের জন্য ঘোষণা করেন ।
চলতি মাসের 14 তারিখ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে "Health For All"-র প্রস্তাব দিয়েছেন কাফিল । বলেন, "স্বাস্থ্যের অধিকারের জন্য লড়াই করছি । সংবিধানের 21 নম্বর ধারা অনুযায়ী আমাদের স্বাস্থ্যের অধিকার দেওয়া হয়েছে । জাতি-ধর্ম-ধনী-গরিব নির্বিশেষে ভারতীয় যে কোনও নাগরিক হিসাবে এই অধিকার রয়েছে ।" এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির সঙ্গেও কথা বলতে চেয়েছিলেন তিনি । বলেন, "শেষবার যখন এসেছিলাম মেইল করেছিলাম । কিন্তু এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে কোনও উত্তর আসেনি । ওনার একজন সাংসদের সঙ্গে দেখা করেছি । তাঁকে এই বিষয়টি জানিয়েছি । তিনি জানিয়েছেন, বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাবেন ।"
এখনও পর্যন্ত 11টি রাজ্যে এটি চালু হয়েছে । তাই প্রতিটি রাজ্যের সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে তাঁর এই "Health For All"-র পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে চান ।
চিকিৎসকরা ধর্মের ভিত্তিতে চিকিৎসা করেন । মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করেই মূলত গতকাল NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ওই আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছিল । এই বিষয়ে কাফিল খান বলেন, " মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে আমি একদম সহমত নই । জাতি-ধর্ম-আঞ্চলিকতা-লিঙ্গ-আর্থ-সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে প্রতিটি রোগীর চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে ভরতির সময় চিকিৎসকদের শপথ নিতে হয় । আমার মনে হয় না, কোনও চিকিৎসক কোনও রোগীকে ধর্ম-জাতির বিচারে দেখেন । তাঁরা একজন রোগীকে রোগী হিসাবেই দেখেন, চিকিৎসা করেন ।"