সিউড়ি, 19 নভেম্বর : দেউচা-পাচামিতে খোলামুখ কয়লা খনি প্রকল্পের জন্য জমি কেনার ক্ষেত্রে শ্বেতপত্র প্রকাশ করল রাজ্য সরকার ৷ সেই শ্বেতপত্র নিয়ে এদিন জমি মালিকদের সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করে বীরভূম জেলা প্রশাসন ৷ বাংলা, ইংরেজি ও সাঁওতালি ভাষায় এই শ্বেতপত্র জমি মালিকদের দেওয়া হল ৷ বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘সরকারি জমিতেই প্রথম শুরু হবে খোলামুখ কয়লা খনি ৷ তারপর খুব দ্রুত পুনর্বাসন দিয়ে প্রয়োজনীয় জমি কিনবে সরকার ৷’’
শুক্রবার দেউচা-পাচামিতে খোলামুখ কয়লা খনির জমি অধিগ্রহণ প্রসঙ্গে সিউড়ির রবীন্দ্র সদনে জমি মালিক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক হয় ৷ বৈঠক করেন বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায়, জেলা পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী প্রমুখ । যেখানে খনি হবে, সেই এলাকা মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত । তাই আদিবাসী সংগঠনগুলি এই বৈঠকে অংশ নেয় ৷
আরও পড়ুন :Deucha Pachami : দেওচা পাচামি যাওয়ার মুখে বিজেপি নেতাকে কালো পতাকা
খোলামুখ কয়লা খনি প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন ৷ সেই পুনর্বাসন এদিন শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করল রাজ্য সরকার ৷ সেই শ্বেতপত্র বাংলা, ইংরেজি ও সাঁওতালি ভাষায় জমিদাতাদের দেয় বীরভূম জেলা প্রশাসন ৷ পরে সাংবাদিক বৈঠক করেন জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপার ।
বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, ‘‘অধিগ্রহণ নয়, সরকারি নিয়মে জমি কেনা হবে ৷ আজ শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হল তিনটি ভাষায় ৷ সেই পত্র সকল সংগঠনগুলিকে দেওয়া হয়েছে । জমি মালিকদের বুঝিয়ে আলোচনা করে তবেই জমি নেওয়া হবে ৷ যে পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, সেটা খুবই ভাল ।" বৈঠক শেষে আদিবাসী নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দেন, তাঁরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন জমি দেওয়া হবে কি না ৷
আরও পড়ুন :Mamata Banerjee : সিঙ্গুর মডেলে দেউচা-পাচামিতে জমি অধিগ্রহণ নয়, ঘোষণা মমতার
প্রসঙ্গত, দেউচা-পাচামি হল বীরভূমের মহম্মদবাজার হরিণ সিং কোল ব্লক । 3400 একর জমি নিয়ে 1178 মিলিয়ন হেক্টর কয়লা ব্লক রয়েছে । 1148 মিলিয়ন হেক্টর ব্যাসল্ট জমা রয়েছে । এই যে 3400 একরের মধ্যে এক হাজার একর সরকারি জমি ।
সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এই এলাকায় 12টি গ্রামে 4314টি বাড়িতে 21 হাজারের বেশি মানুষ বাস করেন । যার মধ্যে তিন হাজার ছ’শো জন তফশিলি জাতিভুক্ত এবং 9034 জন তফসিলি উপজাতিভুক্ত ৷ বিপুল কয়লা জমা থাকায় যে এলাকা দেশের সবচেয়ে বড় কোল ব্লকগুলির মধ্যে অন্যতম। দেউচা-পাচামিতে 35 হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চলেছে রাজ্য সরকার ৷ এর মধ্যে 10 হাজার কোটি টাকা পুনর্বাসন প্যাকেজে খরচ করা হবে ৷ প্রথম পর্যায়ে দেওয়ানগঞ্জ থেকে কাজ শুরু হবে ৷
আরও পড়ুন :Farm Laws Repeal : কৃষি আইন বাতিলে রাজনৈতিক লাভ হবে কি বিজেপির ?
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় জানিয়েছিলেন, জমিদাতাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ৷ বাড়িও দেওয়া হবে ৷ পরিবার পিছু একজন কাজও পাবেন ৷ ক্ষতিপূরণের নানা স্তর থাকবে ৷ বাড়ি-সহ জমি থাকলে বিঘা প্রতি 10-13 লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ৷ এছাড়াও স্থানান্তকরণের জন্য পাবেন পাঁচ লক্ষ টাকা । আর আর কলোনিতে পাবেন 600 বর্গফুটের বাড়ি । যে সব পরিবার বাড়ি জমি হারাবে, তাদের পরিবারের একজন জুনিয়র কনস্টেবলের চাকরি পাবেন । এমন চাকরি পাবেন 4942 জন ।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছিলেন, প্রায় 3 হাজার জন ক্রাশার লেবার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য 1 লক্ষ 20 হাজার টাকা পাবেন । ওই এলাকায় 160 জন কৃষি শ্রমিক 50 হাজার টাকা পাবেন । 500 দিনের জন্য 100 দিনের কাজ পাবেন । 285 জন ক্রাশার মালিক তাঁদের জমি বাড়ির দাম এবং 50 হাজার টাকা শিফ্টিং অ্যালাউন্স পাবেন । ছয় মাস ধরে 10 ট্রাক ব্যাসল্ট বিনামূল্যে পাবেন । কাছের চাঁদা মৌজায় ব্যাসল্ট শিল্প উদ্যানের পুনর্গঠন হবে । 27 জন খাদান মালিক জমি ও বাড়ির দাম পাবেন ।
আরও পড়ুন :TMC Joining: তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন বিকাশ ভবনের সামনে বিষ পান করা শিক্ষিকারা