বোলপুর, 4 মে: অমর্ত্য সেনের বাড়ির কাছে আন্দোলনের প্রস্তুতি, ক্যাম্পাসের পরিবেশ বিঘ্নিত হবে । এই মর্মে বৃহস্পতিবার বোলপুর মহকুমা শাসককে চিঠি দিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । পাশাপাশি, অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের হুঁশিয়ারিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে ৷ এতে তাঁর প্রাণ সংশয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করে শান্তিনিকেতন থানায় অভিযোগ দায়ের করল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । প্রসঙ্গত, অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের 'প্রতীচী' বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য 145 ধারা জারি করা রয়েছে ।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন 13 শতক জমি দখল করে রেখেছেন ৷ একথা উল্লেখ করে জমি ফেরত চেয়ে 3টি চিঠি দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । প্রয়াত পিতা আশুতোষ সেনের উইল অনুযায়ী উত্তরাধিকার সূত্রে জমি অমর্ত্য সেনের ৷ এই মর্মে আবেদনের ভিত্তিতে 1.38 একর (সম্পূর্ণ জমি) জমি অধ্যাপক সেনের নামে রেকর্ড করে দেয় বোলপুর ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর ৷ এরপরেই অমর্ত্য সেনকে জমি খালি করার নির্দেশ দিয়ে শান্তিনিকেতনের 'প্রতীচী' বাড়িতে নোটিশ লাগিয়ে দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । এমনকি, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ও অনুষ্ঠানে 'ভারতরত্ন' অমর্ত্য সেনকে নিশানা করে 'জমি দখলকারী', 'জমি কবজাকারী' প্রভৃতি শব্দ বলতে শোনা গিয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে ৷ যা নিয়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বস্তরে ৷ বিশ্বের সম্পদ অমর্ত্য সেনকে অবমাননা প্রতিবাদে পথে নামছেন বিদ্বজ্জনেরা । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও দলকে নির্দেশ দিয়েছেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আন্দোলনে নামার জন্য ৷ তিনি নিজেও আন্দোলনে সামিল হওয়ার কথা জানিয়েছেন ।
6 মে অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । তাই ওই দিন প্রতীচী বাড়ির পাশে অমর্ত্য সেনের মামাতো ভাই শান্তভানু সেনের বাড়িতে একটি অবস্থান মঞ্চ তৈরি করা হচ্ছে ৷ প্রতিবাদে সামিল হওয়ার কথা সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন, পরিচালক গৌতম ঘোষ, চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী, শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য প্রমুখর । তার আগে 5 মে মানববন্ধন করেও প্রতিবাদ করার উদ্যোগ নিয়েছেন শান্তিনিকেতনের বেশ কিছু মানুষজন ৷ এছাড়া, 2 মে অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের হুঁশিয়ারির প্রতিবাদে শান্তিনিকেতনের রাস্তায় প্রতীচী বাড়ি পর্যন্ত মশাল মিছিল করেছিল তৃণমূল নেতৃত্ব ।
এদিন, বোলপুর মহকুমা শাসককে বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব মানবেন্দ্রনাথ সাহা একটি চিঠি দিয়েছেন । তাতে উল্লেখ করা হয়েছে, "অধ্যাপক অমর্ত্য সেনের জমি সংক্রান্ত বিষয় বিচারাধীন । 'প্রতীচী' বাড়ির কাছে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট 145 ধারা জারি করেছে ৷ কিন্তু, সদ্য 2 মে মশাল মিছিল হল প্রতীচী বাড়ি পর্যন্ত । বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও অনুমতি নেওয়া হয়নি ৷ 5 মে একটি ধরনা, বিক্ষোভ, অবস্থান হওয়ার কথা লিফলেটে দেখছি ৷ এতে বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে পঠন-পাঠন বিঘ্নিত হবে । এই রাস্তায় বহু ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতন গৃহ, উপাসনা গৃহ, রবীন্দ্রভবন, সঙ্গীত ভবন, কলাভবন, কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র প্রভৃতি রয়েছে ৷ বিশ্বভারতীর পরিবেশ রক্ষার্থে এই ধরনা, অবস্থান বন্ধ করে দেওয়া হোক ।"