বীরভূম, 26 জুন:খাতায়-কলমে এখনও অনুব্রত মণ্ডলই বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি ৷ তিনি তিহাড় জেলে বন্দি থাকলেও, দল বা জেলায় তাঁর দাপট যে অক্ষুণ্ণ তা তাঁর পদ আগলে বসে থাকে থেকেই প্রমাণিত ৷ আর এহেন কেষ্ট-গড়ে দাঁড়িয়েই পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে ফের বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন শতাব্দী রায় ৷ অনুব্রত'র 'বোমা মারো' থেকে রাজ্যপালের ভূমিকা, পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে বেরিয়ে ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে একাধিক প্রশ্নের সোজা-সাপটা জবাব দিলেন তৃণমূল সাংসদ। একই সঙ্গে, তিনি এও জানাতে ভুললেন না, অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে এখনও তাঁর মতের মিল নেই ৷ স্তাবকদের কথায় উজ্জীবিত হতেন অনুব্রত, এমন মন্তব্যও শোনা গেল সাংসদের গলায়।
ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়ে দলের বিরুদ্ধে ওঠা একাধিক অভিযোগের যেমন জবাব দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ, তেমনই বিরোধীদের লোক নেই বলে পালটা কটাক্ষও শোনা গিয়েছে তাঁর গলায় ৷ শতাব্দীর দাবি, বীরভূমে বিরোধীরা দুর্বল ৷ যার জেরে, ঝাড়খণ্ড থেকে প্রার্থী ভাড়া করে আনতে হচ্ছে তাদের ৷ নিজের সংসদ এলাকায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচার সারছেন তৃণমূল সাংসদ। প্রচারের ফাঁকেই ইটিভি ভারতের মুখোমুখি হয়েছিলেন তিনি ৷ আর সেই সাক্ষাৎকারেই বিস্ফোরক বীরভূমের সাংসদ।
ইটিভি ভারত: পঞ্চায়েত নির্বাচন গ্রামে প্রচারে বেরিয়ে মানুষের কতটা সাড়া পাচ্ছেন?
শতাব্দী রায়: 2009 থেকে আজও বীরভূমের মানুষের উচ্ছ্বাস, ভালোবাসা আছে। আমি কৃতজ্ঞ তাদের কাছে। মানুষ যে তৃণমূলকে ভোট দেবে তা একশো শতাংশ নিশ্চিত ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মানুষের আস্থা আছে।
ইটিভি ভারত: অনুব্রত-হীন পঞ্চায়েত নির্বাচন। আগে দু'বার যদিও হয়নি ৷ আপনি দিদির দূত কর্মসূচিতে গিয়ে বহু জায়গায় বিক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন ৷ এবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে কী একই অভিজ্ঞতা?
শতাব্দী রায়: বিক্ষোভ শব্দটা আপনাদের তৈরি। যদি কেউ বলে দিদি এখানে ড্রেন হয়নি ৷ ওটাকে ক্ষোভ বলে না আবেদন বলে ৷ সবাই মিলে বিদ্রোহ করলে ক্ষোভ বলে। আর আমরা তো মানুষের কথা শুনতেই এলাকায় যাই, কার কী প্রয়োজন জানতে। বিভিন্ন প্রকল্প সব মানুষ ঠিক মতো পাচ্ছে কি না, দেখা দরকার।
ইটিভি ভারত: অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে আপনার মতানৈক্য সর্বজনবিদিত। পরের দিকে দেখা গেল আপনি অনুব্রতর সঙ্গে বেশ কয়েকবার বৈঠকও করেন। তবে কি পরের দিকে মতের মিল হয়েছিল?
শতাব্দী রায় : ওঁর কিছু কথা, ভাবনা আমি সমর্থন করতাম না ৷ সেই জন্য মতের অমিল ছিল, সেটা এখনও পর্যন্ত আছে। মিডিয়া সব থেকে বেশি অনুব্রত মণ্ডলকে মিস করছে এখন ৷ তোমরা উত্তেজিত করতে আর সে একটা করে কথা বলত, বোম মারো, চড়াম চড়াম। সারা দিন টিভিতে চলত। আর তাঁর আশপাশের স্তাবকরা বলত, দাদা টিভিতে চলছে, আপনি হিরো হয়েছেন। আসলে মিডিয়া তাঁকে ভিলেন বানাত। তাই মিডিয়া অনেক বেশি মিস করছে অনুব্রতকে। আর সাংগঠনিক ভাবে সত্যিই তিনি ভালো সংগঠক ৷ বীরভূমে এতটা শক্তিশালী সংগঠন বানিয়েছেন ৷ বড় নেতা ছিলেন। দলকে অনেক কিছু দিয়েছেন। সে যখন আবার আসবে আবার কাজ করবে। মতের ক্ষেত্রে অমিল আছে, আবার কাজের ক্ষেত্রে মিল সেটাও আছে।
ইটিভি ভারত : অনুব্রত মণ্ডল নেই। কিন্তু রাজ্যের মধ্যে একমাত্র বীরভূম যেখানে নির্বাচনে আগেই অধিকাংশ পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। আপনি নিশ্চয় বোমাবাজির রাজনীতি চান না, সন্ত্রাসের রাজনীতি চান না। তাহলে এটা কোনও গণতন্ত্র নির্বাচনের আগেই এতগুলো পঞ্চায়েত শুধুমাত্র বীরভূমে জয়লাভ করল তৃণমূল! আপনার মনে কি প্রশ্ন জাগে না?
শতাব্দী রায় :ভয়ের জন্য বিরোধীরা মনোনয়ন দিতে পারেনি বলছেন। ভয় যদি পায় তাহলে এতগুলো পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদে কী করে ভোট হচ্ছে? তারা ভয় পাচ্ছে না? বীরভূমের কোথাও যদি ভোট না হত, যেটা আগের ক্ষেত্রে হয়েছিল, তখন বলতেন সন্ত্রাস হচ্ছে। ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এনে দাঁড় করাচ্ছে বিরোধীরা।
ইটিভি ভারত: পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে কি বলবেন?
শতাব্দী রায়: রাজ্যপাল যা কাজ করবে, করছে তা বিজেপির হয়ে। এটা প্রমাণিত। তাঁর প্রতিটি পদক্ষেপ, তাঁর বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া অনেক বেশি রাজনৈতিক। তিনি বিজেপির কর্মী হিসাবে যদি কাজ করেন, ডিউটির মত ৷ এটা নির্বাচন পর্যন্ত চলবে।