বোলপুর, 17 অগস্ট: দেবল মজুমদার ও অপরাজিতা সেনগুপ্ত । আমেরিকার বহুজাতিক সংস্থায় চাকরি, বিলাসবহুল জীবন-যাপন ছেড়ে মাটির টানে প্রাকৃতিক চাষে নিজেদের নিয়োজিত করেছেন এই দম্পতি । শুধু নিজেরা চাষ করেন এমন নয়, বর্তমানে প্রাকৃতিক চাষ নিয়ে প্রশিক্ষণও দেন তাঁরা । গবেষণার বিষয় প্রাকৃতিক চাষে ফলন কতটা নির্ভেজাল হয়, পাশাপাশি ভারতের মতো কৃষিপ্রধান দেশে কেন মহিলা চাষির সংখ্যা কম ।
বর্ধমান জেলার বাসিন্দা দেবল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করেন । চাকরি পান আমেরিকার কেন্টাকির একটি বহুজাতিক সংস্থায় । অন্যদিকে, কলকাতার বাসিন্দা অপরাজিতা প্রেসিডেন্সি থেকে স্নাতক ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ হয়ে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে কেন্টাকি বিশ্ববিদ্যালয়ে যান পিএইচডি করতে ৷ ডিগ্রি পাওয়ার পর সেখানেই পড়ানো শুরু করেন ।
খাদ্যদ্রব্যে কেন স্বাদ কম, খাদ্যে ভেজালের পরিমাণ বাড়ার মতো বিষয় ভাবিয়ে তোলে এই দম্পতিকে । আমেরিকার একাধিক গ্রাম ঘুরে তা নিয়ে আরও জানতে শুরু করেন ৷ এরপরেই হঠাৎ সিদ্ধান্ত দেশে ফেরার । স্টেটসের বিলাসবহুল জীবন-যাপন ছেড়ে মাটির টানে ফিরে আসেন । করেন ফার্মাকালচার কোর্স । চাকরি জীবনের জমানো টাকা থেকে শান্তিনিকেতনের অদূরে রূপপুর গ্রামে পুকুর-সহ সাড়ে 5 বিঘা জমি কিনে শুরু করেন চাষ নিয়ে গবেষণা ৷
রাসায়নিক সার ব্যবহারে ফসলের স্বাদ, গুণাবলী নষ্ট হয় । উপরন্তু, কীটনাশক ব্যবহারে ক্ষতি হয় মানবদেহের ৷ এছাড়া, ভারতবর্ষে মতো কৃষিপ্রধান দেশে মহিলা চাষির সংখ্যা কম ৷ চাষের কাজে অংশ নিলেও মহিলাদের নামে জমি না-থাকায় তাদের চাষি বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না । এই নিয়েই গবেষণা এই দম্পতির । বর্তমানে অন্যদেরও প্রশিক্ষণ দেন তাঁরা । ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত-সহ বাংলাদেশ, আমেরিকা, ফ্রান্স, সুইডেন প্রভৃতি দেশ থেকে আগ্রহী পড়ুয়া তাঁদের শান্তিনিকেতনের বাড়িতে থেকে প্রাকৃতিক চাষ সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ ও হাতে-কলমে গবেষণায় অংশ নিয়ে গিয়েছেন । এমনকী ফার্মাকালচার নিয়ে পড়ানোর জন্য সাম্মানিক অধ্যাপক হিসাবে ভারতের বিভিন্ন কৃষি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও নেপাল, বাংলাদেশ, আমেরিকা থেকে ডাক পেয়েছেন এই দম্পতি ।