বোলপুর, 22 মে : কোরোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলছে দীর্ঘ লকডাউন ৷ কোনও জমায়েত নিষিদ্ধ ৷ তাই বন্ধ দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব মন্দির ৷ আর মন্দির বন্ধ থাকায় আসছেন না কোনও ভক্ত ৷ মিলছে না প্রণামী ৷ ফলে আর্থিক সংকটে পড়েছেন রাজ্যের কয়েক হাজার সেবাইত ও পুরোহিত ৷
রাজ্যের অনান্য জায়গার মতো বন্ধ বীরভূমের মন্দিরগুলিও ৷ বোলপুর শহর থেকে 8 কিলোমিটার দূরে কোপাই নদীর তীরে অবস্থিত কঙ্কালীতলা মন্দির । সতীর 51 পীঠের অন্যতম এই পীঠ। বছরে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম হয় এখানে । প্রতি বছর চৈত্র সংক্রান্তির দিন এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে বসে কঙ্কালী মেলা ৷ তবে চলতি বছরে কোরোনা সংক্রমণ রুখতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে আয়োজন করা হয়নি এই প্রাচীন মেলা । মন্দিরের সামনে বসা একশোর বেশি ভিক্ষুকেরও অনাহারে দিন কাটছে ৷
মন্দিরের পুরোহিত মদনমোহন তিওয়ারি বলেন, "অনেকদিন থেকে বন্ধ মন্দির। কোনওরকমে দিন কাটছে আমাদের। নরনারায়ণ সেবা সব বন্ধ। এই অবস্থায় সরকার যদি কিছু সাহায্য করে ভালো হয়। জোড়হাত করে আর্জি জানাচ্ছি আমরা।"
চরম আর্থিক সঙ্কটে দক্ষিণবঙ্গের পুরোহিতরা পূর্ব বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দির ৷ লকডাউনের ফলে বন্ধ এই প্রাচীন মন্দির ৷ ফলে দিনে যেখানে শত শত ভক্তের সমাগম হত সেখানে দেখা মিলছে না একজন ভক্তেরও ৷ ভোগ বিতরণ আগেই বন্ধ হয়েছিল ৷ পরে মন্দিরে প্রবেশের উপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় ৷ তবে শুধু সর্বমঙ্গলা মন্দিরই নয়, বন্ধ রাধাকুঞ্জবিহারী মন্দির, বীরহাটা কালিবাড়ি, কমলাকান্ত কালীবাড়ি, কঙ্কালেশ্বরী কালীবাড়ি, কালনার বুড়োরাজ শিবমন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির সহ আরও অনেক মন্দির ৷
বর্ধমান সর্বমঙ্গলা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত অরুণকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘50 বছর ধরে এই মন্দিরের সঙ্গে আমি যুক্ত। কোনওদিন এই পরিস্থিতিতে পড়িনি। এই পেশার মাধ্যমেই আমাদের সংসার চলে। লকডাউনের জেরে মন্দিরে কেউ পুজো দিতে আসতে পারছেন না। যাঁরা মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন তাঁর প্রণামীও দিয়ে যেতেন । এছাড়া মায়ের ভোগের জন্য অনেকে তাঁদের সাধ্যমতো দান করে থাকেন। এখন সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়েছি। দেখা দিয়েছে আর্থিক সংকট।’’
নদিয়ার নবদ্বীপের চিত্রটাও প্রায় একইরকম ৷ নদিয়ার নবদ্বীপের প্রায় এক হাজারের বেশি মন্দির বন্ধ রাখা হয়েছে । এই মন্দিরগুলিতে সারা বছর ভক্তদের ভিড় লক্ষ্য করা যায় । শুধুমাত্র গোটা দেশ নয়, বিদেশ থেকেও ভক্তরা আসেন মহাপ্রভুর জন্মস্থান সহ একাধিক মন্দির দর্শনে। মূলত ভক্তদের অনুদানের উপরই মন্দিরের ভোগ থেকে শুরু করে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের সংসার নির্ভর করে। নবদ্বীপের ছোটো-বড় মিলিয়ে মোট প্রায় 1100টি মন্দির রয়েছে । গড়ে প্রায় নবদ্বীপে 6 হাজারের বেশি সেবাইত ও কর্মী কাজ করেন ৷ মন্দির দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে তীব্র আর্থিক সংকটে পড়েছেন সেবাইতরা।
নবদ্বীপের একাধিক সেবাইতের দাবি, তিন বেলা মহাপ্রভুকে ভোগ দিতে হয়। এখন কোনওরকমে ভোগ দেওয়া হচ্ছে মন্দিরে। তাঁদের দাবি, মন্দিরগুলো মূলত ভক্তদের অনুদানের উপর নির্ভর করে। লকডাউনের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ মন্দির ৷ সেই কারণে ভক্তরা না আসায় মিলছে না কোনও অনুদানও ।