শান্তিনিকেতন, 3 জুলাই : আর পৌষমেলা করবে না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । এমনকী দোলের দিন হবে না বসন্ত উৎসবও । কর্মসমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । তবে প্রথা অনুযায়ী পৌষ উৎসব পালিত হবে । ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা আর হবে না, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই বিষাদের সুর শান্তিনিকেতন জুড়ে ।
2019 সালে পৌষমেলা নিয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বিবাদ শুরু হয় । বিবাদের জেরে 175 বছরের বেশি পুরোনো ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা হবে কি না তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছিল । তবে জট কাটিয়ে কোনওরকমে হয়েছিল পৌষমেলা । মেলা তুলে দেওয়া নিয়ে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিবাদ বাধে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের । তা গড়ায় আদালত পর্যন্ত । অন্যদিকে, পৌষমেলার কারণে দূষণ হচ্ছে, এই মর্মে পরিবেশ আদালতে একটি মামলা চলছে দীর্ঘদিন ধরে । এবিষয়ে আজ কর্মসমিতির বৈঠক ডাকা হয় ৷ ছিলেন রাষ্ট্রপতি মনোনীত বিশ্বভারতীর কর্মসমিতির সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী মনোনীত সদস্য দুলালচন্দ্র ঘোষ, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী সহ অন্যরা ।
বৈঠক শেষে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার বলেন, "প্রথা অনুযায়ী পৌষ উৎসব পালিত হবে কিন্তু পৌষমেলা করবে না বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । এছাড়া দোলের দিন বসন্ত উৎসব হবে না । কর্মসমিতির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।"
1843 সালে 21 ডিসেম্বর (7 পৌষ) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হন । এরপর এই ধর্মের প্রসার ও প্রচার বৃদ্ধি পায় । এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ও প্রচারের স্বার্থে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর 1845 সালে কলকাতার গোরিটির বাগানে উপাসনা, ব্রাহ্ম মন্ত্র পাঠের আয়োজন করেন । এটিকেই পৌষমেলার সূচনা বলে ধরা হয় । পরবর্তীকালে 1862 সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে আশ্রম প্রতিষ্ঠার কথা ভাবতে শুরু করেন । 1891 সালে ব্রহ্মমন্দির বা উপাসনা গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয় । এটিকে শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের সূচনা হিসেবে ধরা হয় । 1894 সালে এই পৌষ উৎসবের পাশাপাশি মন্দির সংলগ্ন মাঠে শুরু হয় পৌষ মেলা । দিন দিন মেলার পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে পূর্ব পল্লির মাঠে এই মেলা হয়ে আসছিল ।