বোলপুর, 4 নভেম্বর: করোনা কেটে গেলেও দ্বন্দ্বের মুখে পড়ে এবছরও ফের অনিশ্চয়তার মুখে পৌষমেলা ৷ শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের অন্তর্দ্বন্দ্বে এবারও অনিশ্চয়তার মুখে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা(Poushmela 2022 Uncertain Due to Conflict between Visva Bharati Authorities and Santiniketan Trust)। পৌষমেলা বা পৌষ উৎসব সংক্রান্ত বিষয়ে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ট্রাস্ট ডিডকে কার্যত অমান্য করে ঐতিহ্যবাহী মেলাটিকে বোলপুর পৌরসভার হাতে তুলে দিচ্ছে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট (Visva Bharati Authorities and Santiniketan Trust)৷ এই মর্মে ট্রাস্টের তরফে পৌরসভাকে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে । যদিও মেলা হবে কি না, সেই বিষয়ে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এখনও কিছু জানায়নি ৷ বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের মতামতের অপেক্ষায় বোলপুর পৌরসভা (Bolpur Municipality)৷
পৌরসভাকে পাঠানো শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের ছবি 1843 সালের 21 ডিসেম্বর (7 পৌষ) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের কাছে ব্রহ্মধর্মে দীক্ষিত হন । এরপর এই ব্রহ্মধর্মের প্রসার ও প্রচার বৃদ্ধি পায় । দীক্ষিত হওয়ার দিনটিকে স্মরণ রাখতে 1845 সালে কলকাতার গোরিটির বাগানে উপাসনা ও ব্রহ্ম মন্ত্রপাঠের আয়োজন করা হয় । ওই উৎসবকেই পৌষমেলার সূচনা বলে ধরা হয় । পরবর্তীকালে 1862 সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে আশ্রম প্রতিষ্ঠার চিন্তাভাবনা করেন । সেই মতো 1891 সালে উপাসনা গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয় । এটিকেই শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের সূচনা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে । 1894 সালে পৌষ উৎসবের পাশাপাশি মন্দির সংলগ্ন মাঠে শুরু হয় পৌষমেলা ।
আরও পড়ুন :2 বছর পর ফের পৌষমেলার উদ্যোগ বিশ্বভারতীর, সহযোগিতা চেয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবকে চিঠি উপাচার্যের
ধীরে ধীরে মেলার পরিসর বাড়তে থাকায় 1961 সালে মন্দির সংলগ্ন মাঠ থেকে পৌষমেলা স্থানান্তরিত করা হয় পূর্বপল্লির মাঠে । সেই থেকেই পূর্বপল্লির মাঠে হয়ে আসছে শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা । 2019 সালে শেষবার পূর্বপল্লির মাঠে পৌষমেলা হয় ৷ এরপর 2020-তে কোভিড পরিস্থিতির জন্য বন্ধ ছিল এই মেলা ৷ 2021-এও একই কারণে মেলা বন্ধ রাখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ৷ তবে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ বোলপুর পৌরসভার সহযোগিতায় ডাকবাংলো মাঠে বিকল্প পৌষমেলার আয়োজন করে ৷
পূর্বপল্লির মাঠে জলাশয় বুজেছে কচুরিপানায় তবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের দ্বন্দ্বে এবারও অনিশ্চয়তার মুখে পৌষমেলা । পূর্বপল্লির মাঠ সংলগ্ন জলাশয়গুলি কচুরিপানায় ভরে গিয়েছে, মেলার জন্য পর্যপ্ত জল পাওয়া সম্ভব নয় ৷ এই কারণ দেখিয়ে বোলপুর পৌরসভাকে চিঠি দেয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ৷ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ট্রাস্ট ডিডে স্পষ্ট উল্লেখ করা রয়েছে, পৌষ উৎসব ও পৌষমেলার আয়োজন করবে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট, সহযোগিতা করবে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ । এই ডিডকে উপেক্ষা করে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট চাইছে ঐতিহ্যবাহী মেলাটি বোলপুর পৌরসভার হাতে তুলে দিতে ৷
বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের দ্বন্দ্বে এবারও অনিশ্চয়তার মুখে পৌষমেলা আরও পড়ুন :ঠাকুর পরিবারের সদস্যের হাতে বিকল্প পৌষমেলার সূচনা, উপস্থিত বিশ্বভারতীর দুই প্রাক্তন উপাচার্য
প্রসঙ্গত, যে কারণ দেখিয়ে শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট মেলা করতে চাইছে না তা হল, বোলপুর ডাকবাংলো মাঠের চারদিকে একটিও জলাশয় নেই ৷ এককথায় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও বোলপুর পৌরসভার ত্রিমুখী দ্বন্দ্বে এবারও বন্ধের মুখে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা (Poushmela)।
এই বিষয়ে শান্তিনিকেতন ট্রাস্টের সম্পাদক অনিল কোনার বলেন, "জলের অভাবে আমরা মেলা করতে অপারগ । তাই গত বছরের মত বোলপুর পৌরসভা যদি মেলা করে করুক ।" যদিও বোলপুর পৌরসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ বলেন, "শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট আমাদের একটি চিঠি দিয়েছে ৷ কিন্তু, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এখন মেলার বিষয়ে কিছুই জানায়নি ৷ তারা জানানোর পর আমরা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নেব ।"
আরও পড়ুন :বোলপুর ডাকবাংলো মাঠে বিকল্প পৌষমেলা, আয়োজনে বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ