ব্যানার হাতে দাঁড়ানো মানুষরা নিজেরাই বললেন তারা দেউচা পাচামির বাসিন্দা নন বোলপুর, 31 জানুয়ারি: দেউচা-পাচামির জন্য জমি দেওয়ার স্বপক্ষে হাতে ব্যানার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে দেখা গেল আদিবাসী মানুষজনকে ৷ কিন্তু, তাঁদের প্রশ্ন করতেই সত্যিটা এল প্রকাশ্যে ৷ জানা গেল তাঁরা কেউই দেউচা-পাচামির বাসিন্দা নন, এমনকি সেখানে তাঁদের জমিও নেই ৷ কারা নিয়ে এসেছে আপনাদের ? প্রশ্ন করতেই সব চুপ । জানা গিয়েছে, শাসকদল ও প্রশাসন জেলার অন্যান্য জায়গা থেকে তাঁদের নিয়ে এসেছে দেউচা-পাচামির স্বপক্ষে ব্যানার ধরার জন্য ৷
বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলামুখ কয়লা খনি হতে চলেছে বীরভূমের দেউচা-পাচামি (Present Situation at Deucha Pachami)। কিন্তু, এখানে খনি করার জন্য প্রায় 21 হাজার মানুষের বসতি অন্যত্র সরাতে হবে ৷ এখানকার বেশিরভাগ গ্রামই আদিবাসী অধ্যুষিত । এছাড়া, ধ্বংস হবে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল ও জলাভূমি । তাই অধিকাংশই চান না জমি দিতে । কয়লা শিল্পের জন্য জমি দেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিভিন্ন প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন । তা সত্ত্বেও এখানকার আদিবাসী মানুষদের স্পষ্ট দাবি, তারা জল-জমি-জঙ্গলের অধিকার ছাড়বে না । এই মর্মে খনি প্রকল্পের ঘোষণার পরে পরেই দেউচা-পাচামির জমি বাঁচাও আন্দোলন শুরু করেছেন বাসিন্দারা । জমি না-দেওয়ার জন্য জেলাশাসক থেকে শুরু করে মুখ্যমন্ত্রীকেও চিঠি দিয়েছেন তাঁরা ।
আরও পড়ুন :দেউচা-পাচামির জন্য জমি নেওয়ার প্রতিবাদে জেলাশাসকের দফতর ঘেরাও আদিবাসীদের
বীরভূম সফরে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । তাঁকে স্বাগত জানাতে দেখা গেল আদিবাসী মানুষজনকে । তাদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার । তাতে দেউচা-পাচামিতে কয়লাখনির জন্য জমি দেওয়ার স্বপক্ষে লেখা ৷ যেমন : 'যারা জমি দিচ্ছে না, তারা আমাদের কেউ না', প্রভৃতি লেখা ব্যানার । তাঁদের প্রশ্ন করা হল কোথা থেকে এসেছেন ? এর উত্তরে কেউ বললেন সিউড়ি, তো কেউ বলছেন পুরন্দরপুর ৷ কেউ আবার এসেছেন মালিগ্রাম থেকে । এরপরেই দেউচা-পাচামিতে তাঁদের জমি রয়েছে কি না জানতে চাওয়ায় উত্তর এল, "না জমি নেই ৷ তবুও এসেছি ৷"
জমি যদি এখানে নাই থাকে তাহলে দেউচা-পাচামির কয়লাখনির জন্য জমি দেবেন কী করে ? কারা আপনাদের নিয়ে এসেছে ? হাতে ব্যানারে কী লেখা রয়েছে, কারা দিল এই ব্যানার ? এতসব প্রশ্নের উত্তরে কেউ জানালেন, হাতে দিল তাই ব্যানার ধরে আছি ৷ কিন্তু, কে বা কারা নিয়ে এসেছে তাও স্পষ্ট করে বলছেন না ৷ এমনকি তাঁরা কয়েকজন জানেনও না যে ব্যানারে কী লেখা রয়েছে ৷ আরও একটি মজার বিষয় হল আগত মানুষজনকে প্রশ্ন করার সময় দেখা গেল পাশ থেকে এক নেতা শিখিয়ে দিচ্ছেন, 'বলো দেউচা থেকে এসেছি ।'
এককথায় বলা যায় দেউচা-পাচামিতে কয়লাখনি বিরোধী আন্দোলন যাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সামনে না আসে তার জন্য জেলা প্রশাসন ও শাসকদল তৃণমূল দেউচা-পাচামি বাদ দিয়ে জেলার অন্যান্য প্রান্ত থেকে এই সকল আদিবাসী মানুষজনকে নিয়ে এসেছে খনির স্বপক্ষে প্রচারের জন্য ।
আরও পড়ুন :'জল জঙ্গল জমির অধিকার ছাড়ব না !' দেউচা পাচামিতে আন্দোলনে ধার আদিবাসীদের