পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

খেয়ে বাঁচব তো ? আশঙ্কায় পাথর খাদানের শ্রমিকরা

বীরভূমের বারোমাসিয়া সহ একাধিক এলাকায় বন্ধ পাথর খাদান । ফলে কাজ নেই অনেকের । কখনও একবেলা আবার কখনও না খেয়েই দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা ।

Lockdown
বন্ধ ক্রাশার

By

Published : Apr 14, 2020, 8:42 PM IST

রামপুরহাট, 14 এপ্রিল : একজনকে জিজ্ঞেস করতে বললেন, "সরকারি চাল পাচ্ছি । তাতে আপাতত কোনওরকমে দিন কাটাচ্ছি । তবে হাতে একটি টাকাও নেই । জানি না আগামী দিনে কী হবে ।" আর একজন বললেন, "আমরা গামছা দিয়ে মুখ ঢাকছি । সরকারের তরফে মাস্ক বা স্যানিটাইজ়ার পাইনি । আমাদের কাছে এত টাকাও নেই যে মাস্ক কিনব ।"

রামপুরহাট থেকে দুমকা যাওয়ার রাস্তা । এই রাস্তা ধরে গেলেই কানে আসত পাথর ভাঙার আওয়াজ । সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শোরও বেশি পাথরের খাদান ও ক্রাশার রয়েছে সেখানে । প্রায় হাজার তিনেক লোক রোজই আসত এখানে । কিন্তু এখন সবকিছু কেমন পালটে গেছে । রাস্তাটা সেই একই আছে । গাড়িও অল্পবিস্তর যাওয়া আসা করছে । আছে সেই খাদানগুলিও । কিন্তু নেই সেই চেনা আওয়াজ । দুমকাগামী রাস্তাটার দু'পাশে খাদানগুলি যেন আজ বড্ড নিঃসঙ্গ ।

কোনওদিন অনাহারে, কোনওদিন অর্ধ্বাহারে দিন কাটছে ওদের

লকডাউনের পর থেকে কার্যত এই ছবি দেখা গেছে বীরভূমের বারোমাসিয়া এলাকায় । বারোমাসিয়া ও তার আশপাশের এলাকাজুড়ে রয়েছে প্রায় 15টি আদিবাসী গ্রাম । আর এই গ্রামগুলির বেশিরভাগ বাসিন্দারই পেট চলে এই খাদানগুলিতে কাজ করে । আদিবাসী মহল্লাগুলির পুরুষ, মহিলা সকলেই কাজ করে এই খাদানগুলিতে । মহিলারা মূলত পাথরগুলিকে একজায়গায় জমা করার কাজ করে । দিনপিছু পায় 250 থেকে 300 টাকা । আর বোল্ডার ভাঙার কাজ করে মূলত পুরুষরা । এরা দিনপিছু পায় 400 থেকে 500 টাকা । কিন্তু লকডাউনের জেরে এখন বন্ধ রয়েছে খাদান ।

ফাঁকা বারোমাসিয়ার ক্রাশার

যাঁরা এখানে কাজ করেন, তাঁদের বেশিরভাগই দিনমজুর । কিন্তু এখন কাজ নেই । তাই টাকাও নেই । ঘরে যেটুকু সঞ্চয় রয়েছে তাও ফুরোতে বসেছে । ঘরে খাবারও বাড়ন্ত । কোনওদিন একবেলা আবার কখনও না খেয়েই দিন কাটছে । তাঁদের বক্তব্য, কোরোনায় না মরলেও না খেতে পেয়েই হয়তো প্রাণটা যাবে ।

কিছুদিন আগেও এখানে চলত পাথর ভাঙার কাজ

রামপুরহাট পাথর ব্যবসায়ী সমিতির কার্যকরী সম্পাদক আশাই শেখ বলেন "এভাবে খাদান বন্ধ থাকলে এলাকায় মহামারী শুরু হয়ে যাবে। প্রতিদিন কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা হয় বীরভূমে । সব বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। আমরা রামপুরহাট পাথর ব্যবসায়ী সমিতির তরফে আদিবাসী গ্রামগুলিতে চাল, ডাল, আলু পাঠানোর ব্যবস্থা করছি । তবে কতদিন পারব জানি না ।"

অবহেলায় পড়ে রয়েছে ক্রাশারগুলি

শুধু বারোমাসিয়া নয়, রামপুরহাটের বড় পাহাড়ি, সালবাদরা সহ বিস্তীর্ণ এলাকার ছবিটা একইরকম । রয়েছে নলহাটির বাহাদুরপুর, মুরারইয়ের রাজগ্রাম, সন্তোষপুর সহ এমন আরও অনেক এলাকা । শুধু শ্রমিকদের নয়, মালিকদের কপালেও পড়েছে চিন্তার ভাঁজ । এক একটি ক্রাশারে মজুত রয়েছে লক্ষাধিক টাকার পাথর । লকডাউন ওঠার পর মজুত পাথরের কতটা দাম পাওয়া যাবে, তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন পাথর ব্যবসায়ীরা ।

দেখে বোঝার উপায় নেই কিছুদিন আগেও এখানে চলত বিশাল কর্মযজ্ঞ

এই ক্রাশারগুলিকে ঘিরে সেখানে গজিয়ে উঠেছে কিছু খাবারের দোকান, ওয়েল্ডিং কারখানা, টায়ার মেরামতির দোকান । খাবারের দোকানগুলি যদিও লকডাউনের আওতা থেকে বাইরে, কিন্তু দেখা নেই খদ্দেরের । থাকবেই বা কীভাবে? দোকানগুলিতে যাঁরা খেতে আসেন, তাঁরা সবাই তো এই খাদানেরই শ্রমিক । এখন খাদান বন্ধ । তাই দেখা নেই খদ্দেরেরও ।

জমে আছে লক্ষাধিক টাকার পাথর

ABOUT THE AUTHOR

...view details