পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / state

HS Student Success Story: পরীক্ষা-শেষে বাবার মুখাগ্নি, উচ্চমাধ্যমিকে 61 শতাংশ পেলেন বোলপুরের মৌসুমী - HS Student scores 60 percent

উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষার দিন ভোরে বাবার মৃত্যু হয় ৷ নেমে আসে বিপর্যয় ৷ তার মধ্যে বাবার স্বপ্নপূরণ করতে শবদেহ রেখে পরীক্ষা দিতে যান বোলপুরের মৌসুমী ৷ পরীক্ষা শেষে বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন ৷ পরে বাকি পরীক্ষাগুলিও দেন তিনি ৷

ETV Bharat
বোলপুরের মৌসুমী দোলুই

By

Published : May 25, 2023, 11:33 AM IST

বোলপুর, 25 মে: আচমকাই না ফেরার দেশে চলে যান বাবা ৷ সেদিনই উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা ৷ তাই বাবার শবদেহ রেখে আগে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন ছাত্রী ৷ ফিরে এসে মুখাগ্নি করেন ৷ সেই ছাত্রী উচ্চমাধ্যমিকে 61 শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হলেন ৷ তিনি বোলপুরের মৌসুমী দলুই ৷ পিতৃহারা সংসারে এবার পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা তাঁর কাছে চ্যালেঞ্জ ৷ তাই কোনও সদয় ব্যক্তি তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালে মৌসুমীর পক্ষে উচ্চস্তরের লেখাপড়া করা সম্ভব হবে ৷

16 মার্চ উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষার দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর বাবার ৷ মৌসুমী জানান, এই দুর্ঘটনাটা না-ঘটলে ফল আরও ভালো হত ৷ বাবার চায়ের দোকান এখন সামলান মা ৷ সেখান থেকে যা রোজগার হয়, তা দিয়েই সংসার চলছে ৷ এই পরিস্থিতিতে এমন ফলাফলে মৌসুমীকে নিয়ে গর্বিত তাঁর স্কুলের প্রধান শিক্ষক সহ অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা ৷

বোলপুর পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের মকরমপুরের বাসিন্দা ছিলেন অষ্টম দলুই ৷ বোলপুরের নেতাজি বাজারে একটি চায়ের দোকান চালিয়ে স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে তাঁর সংসার ছিল ৷ বড় মেয়ে মৌসুমী দলুই বোলপুর পারুলডাঙ্গা শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যাপীঠের ছাত্রী ৷ 16 মার্চ ভোর 4টেয় পরিবারে নেমে আসে চরম বিপদ ৷

এদিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় অষ্টম দলুইয়ের ৷ এদিকে সেদিনই মৌসুমীর উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা ৷ বাবার শবদেহ বাড়িতে রেখেই বাবা হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছিলেন মৌসুমী ৷ পরীক্ষা শেষে সোজা শ্মশানে গিয়ে বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন মৌসুমী ৷ এরপর আরও তিনটি পরীক্ষা দিয়েছিলেন তিনি ৷ বাড়ির বড় মেয়ে হওয়ায় সেই দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি বাবার স্বপ্নপূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন তিনি ৷ সব কষ্ট দূরে সরিয়ে প্রয়াত বাবার কথা মাথায় রেখে একের পর এক পরীক্ষা দিয়েছেন মৌসুমী ৷

24 মে উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশিত হয় ৷ 309 নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন বোলপুরের বীরাঙ্গনা মৌসুমী ৷ তাঁর প্রাপ্ত নম্বরের হার 61 শতাংশ ৷ একদিকে দারিদ্র্যতা, অন্যদিকে সদ্য পিতৃহারা মেয়ের এই ফলাফলে সবার কাছে প্রশংসনীয় হয়ে উঠেছেন ব্যতিক্রমী ছাত্রী ।

তাঁর এই সাফল্য প্রসঙ্গে মৌসুমী দলুই বলেন, "309 নম্বর পেয়েছি ৷ বাবার মৃত্যুর এই দুর্ঘটনা না ঘটলে ফল আরও একটু ভালো হত ৷ 400 থেকে 450-র কাছাকাছি নম্বর পেতাম ৷ এটাই আশা ছিল ৷ মা এখন বাবার চায়ের দোকানটা চালাচ্ছেন ৷ এটা থেকেই দিন চলে ৷ পরবর্তী পড়াশোনা চালিয়ে যেতে কেউ যদি সহযোগিতা করে খুব ভালো হয় ।"

মৌসুমীর এই ফলাফলে খুশি পারুলডাঙ্গা শিক্ষানিকেতন আশ্রম বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমার দাস বলেন, "ওর সাফল্য গর্ব করার মতোই ৷ মেয়ে বাবার মৃতদেহ রেখে পরীক্ষা দিয়ে এসে শেষকৃত্য সম্পন্ন করেছে ৷ তারপরে আরও পরীক্ষা দিয়েছে ৷ তারপরও সেই ছাত্রী ফাস্ট ডিভিশনে পাশ করেছেন ৷ এটা বিরাট ব্যাপার ৷ আমরা খুবই খুশি ৷ তবে ও পড়াশোনায় ভালো ৷ এই ঘটনা না-ঘটলে আরও ভালো ফল করত।"

আরও পড়ুন: কটাক্ষের জবাবে সাফল্যের সোপান গড়ে উচ্চমাধ্যমিকে সপ্তম রূপান্তরকামী স্মরণ্যা

ABOUT THE AUTHOR

...view details